স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক সচিব আসাদুল ইসলামের ‘নির্দেশে’ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া ব্যাখ্যায় দাবি করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ।
Published : 15 Jul 2020, 11:58 PM
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বুধবার সচিবকে পাঠানো এক চিঠিতে এই জবাব দেন।
চিঠিতে কী বলা হয়েছে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহাপরিচালক চিঠিতে বলার চেষ্টা করেছেন, আগের সচিবের নির্দেশিত হয়েই তারা এসব (রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি) করেছেন। কিন্তু কোনো ডকুমেন্টস তো নাই। ওই সচিব স্যার তো এটা অস্বীকার করে গেছেন। এটা নিয়ে আরও তদন্ত করলে বের হবে।”
এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বা বর্তমানে পরিকল্পনা বিভাগের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম- কেউ ফোন ধরেননি।
চার মাস আগে বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পরপরেই রিজেন্ট হাসপাতালকে ‘কোভিড ডেডিকেটেড’ হাসপাতালে হিসেবে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি দেয় সরকার।
এ বিষয়ে গত ২১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে রিজেন্ট হাসপাতালের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তৎকালীন সচিব আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, নিয়ম বহির্ভূতভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের প্রমাণ পাওয়ার পর র্যাব গত ৬ থেকে ৮ জুলাই অভিযান চালিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখা বন্ধ করে দেয়।
তখনই জানা যায়, লাইসেন্সের মেয়াদ নেই জেনেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত মার্চে রিজেন্ট হাসপাতালকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ‘ডেডিকেটেড’ ঘোষণা করে সমঝোতা স্মারকে সই করেছিল।
র্যাবের ওই অভিযানের পর রিজেন্টের মালিক মোহাম্মদ সাহেদের নানা অনিয়মও দুর্নীতির খবরও সংবাদমাধ্যমে আসতে শুরু করে।
১১ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের’ নির্দেশে মোহাম্মদ সাহেদের ওই হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করেছিল অধিদপ্তর।
সেদিন অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী মো. সাহেদ করিমের বিভিন্ন প্রতারণার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগে অবহিত ছিল না। গত ২১ মার্চ ওই সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ টক শো ছাড়া সাহেদকে কখনও ‘দেখেনওনি’।
“মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিভাগ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়। ক্লিনিক দুটি পরিদর্শনের সময় চিকিৎসার উপযুক্ত পরিবেশ দেখলেও লাইসেন্স নবায়ন ছিল না। বেসরকারি পর্যায়ে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় অন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও উৎসাহ দেওয়ার লক্ষ্যে লাইসেন্স নবায়নের শর্ত দিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের সাথে চুক্তি হয়।”
অধিদপ্তরের ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়ে গত রোববার আরেকটি চিঠি পাঠান স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব শারমিন আক্তার।
সেখানে বলা হয়, “রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির পূর্বে কী কী বিষয় বিবেচনা করা হয়েছিল, চুক্তি করার পর উদ্ধৃত শর্তসমুহ প্রতিপালনে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে কী বোঝানো হয়েছে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রদান করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে তা সহকারী পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবিরের কাছে গত সপ্তাহে জানতে চেয়েছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
সে সময় তিনি বলেছিলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে এখানে বিশেষ কাউকে বোঝানো হয়নি। পুরো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ই আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।”
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ তার ব্যাখ্যায় সরাসরি আগের সচিব আসাদুল ইসলামের কথা বলেছেন, যাকে মাস্ককাণ্ডের সমালোচনার মধ্যে জুনের শুরুতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে পরিকল্পনা বিভাগে বদলি করা হয়।
বদলি করার পাঁচ দিনের মাথায় আসাদুল ইসলামকে পদোন্নতি দিয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব করে সরকার।
পুরনো খবর