রিজেন্টকাণ্ড: ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কে, স্বাস্থ্যের ডিজির জবাব চায় মন্ত্রণালয়

মন্ত্রণালয়ের ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের’ নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করেছিল- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 July 2020, 02:51 PM
Updated : 15 July 2020, 05:22 PM

রোববার স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব শারমিন আক্তার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ বলতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাকে বুঝিয়েছে, সে বিষয়ে তিন কার্যদিবসের মধ্যে মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদকে ‘সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা’ দিতে হবে।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এর আগে মাস্ক কেলেঙ্কারিতে আলোচিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোভিড-১৯ পরীক্ষা নিয়ে জেকেজি হেলথ কেয়ার এবং রিজেন্ট হাসপাতালের জালিয়াতির ঘটনায় নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েছে।

করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, নিয়ম বহির্ভূতভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের প্রমাণ পাওয়ার পর র‌্যাব গত ৬ থেকে ৮ জুলাই অভিযান চালিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখা বন্ধ করে দেয়।

তখনই জানা যায়, লাইসেন্সের মেয়াদ নেই জেনেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত মার্চে রিজেন্ট হাসপাতালকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ‘ডেডিকেটেড’ ঘোষণা করে সমঝোতা স্মারকে সই করেছিল।  

র‌্যাবের ওই অভিযানের পর রিজেন্টের মালিক মোহাম্মদ সাহেদের নানা অনিয়মও দুর্নীতির খবরও সংবাদমাধ্যমে আসতে শুরু করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কক্ষে আলাপচারিতার এই ছবি গত ২ এপ্রিল ফেইসবুকে পোস্ট করেছেন রিজেন্ট চেয়ারম্যান সাহেদ।

এ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে শনিবার অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী মো. সাহেদ করিমের বিভিন্ন প্রতারণার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগে অবহিত ছিল না। গত ২১ মার্চ ওই সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ টক শো ছাড়া সাহেদকে কখনও ‘দেখেনওনি’।

“মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিভাগ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়। ক্লিনিক দুটি পরিদর্শনের সময় চিকিৎসার উপযুক্ত পরিবেশ দেখলেও লাইসেন্স নবায়ন ছিল না। বেসরকারি পর্যায়ে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় অন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও উৎসাহ দেওয়ার লক্ষ্যে লাইসেন্স নবায়নের শর্ত দিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের সাথে চুক্তি হয়।”

অধিদপ্তরের ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়ে রোববার স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, যে কোনো হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির আগে তা সরেজমিন পরিদর্শন, হাসপাতাল পরিচালনার অনুমতি, পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, জনবল ও ল্যাব ফ্যাসিলিটিজ ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে উপযুক্ততা বিবেচিত হলেই কোভিড- পরীক্ষা/চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চুক্তি সম্পন্ন করার সুযোগ রয়েছে।

“রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির পূর্বে কী কী বিষয় বিবেচনা করা হয়েছিল, চুক্তি করার পর উদ্ধৃত শর্তসমুহ প্রতিপালনে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে কী বোঝানো হয়েছে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রদান করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে তা সহকারী পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবিরের কাছে শনিবার জানতে চেয়েছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

জবাবে তিনি বলেছিলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে এখানে বিশেষ কাউকে বোঝানো হয়নি। পুরো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ই আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।”