পাহাড় ধসে রাঙামাটির সঙ্গে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের যোগাযোগের সাতটি সড়কের ১৪৫টি স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) জানিয়েছে।
Published : 17 Jun 2017, 01:49 AM
এর মধ্যে ৩৭টি স্থানে বড় ধরনের ক্ষতির তথ্য দিয়ে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কটি হালকা যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা চলছে। তবে ঈদের আগে এই সড়কটি ভারি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয় আছে।
সওজের তথ্যমতে ভূমিধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মূল সড়ক।
সড়ক পথে যোগাযোগ দ্রুত স্বাভাবিক করা না গেলে পাহাড়ি এই জেলাটিতে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
ধসের পর থেকে রাঙামাটির সঙ্গে চট্টগ্রামসহ অপর দুই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের যোগাযোগ ব্যবস্থা এক প্রকার বিচ্ছিন্ন।শুধু রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার থেকে নৌ-পথে নৌকায় কাপ্তাই হয়ে চট্টগ্রাম আসা-যাওয়া করা যাচ্ছে।
“সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটির পথে সদর উপজেলার সাপছড়ি শালবাগান এলাকায়। এখানে পাহাড় ভেঙে পড়ে ১০০ মিটার সড়ক কমপক্ষে দেড়শ ফুট রাস্তা নিচে নেমেছে।”
এ সড়কটি লাগোয়া পাহাড় কেটে নতুন সড়ক তৈরির পরিকল্পনার কথা জানান এমদাদ হোসেন।
“তবে পুরোপুরি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে অনেক সময় লাগবে। সওজ কর্মীরা বিভিন্ন পয়েন্টে সড়ক ব্যবস্থা ঠিক করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। সড়কের কাদামাটি পরিষ্কার এবং সড়ক মেরামতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সহযোগিতা করছেন।”
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে ঘাগড়া থেকে কলাবাগান পর্যন্ত সড়কে জমে থাকা মাটির স্তূপ সরিয়ে নিতে দেখা যায় সেনা সদস্যদের।
সড়কটি আপাতত ছোট যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে তুলতে সেনা সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান বাহিনীর স্পেশাল ওর্য়াক্স অর্গানাইজেশনের ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. শাহরিয়ার ইফতেখার।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘাগড়া থেকে রাঙামাটির পথে সাপছড়ি পর্যন্ত সড়কে জমে থাকা মাটির প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে চলাচলের উপযোগী করার কাজ চলছে। দুই-এক দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে সাপছড়ি পর্যন্ত যানবাহন যেতে পারার মতো উপযোগী করে তোলা যাবে।”
প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রকৌশলী এমদাদ।
“আমরা প্রধানত চট্টগ্রামের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি সবার আগে। সে কারণে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের পথে মূল সড়ক পথ মেরামত করা হয়নি।”
খাগড়াছড়ির পথে প্রথম ছয় কিলোমিটারের পর একটি জায়গায় রাস্তার একটি অংশ ৭০ ফুটের মতো দেবে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওই স্থানটি পুরোপুরি মেরামত করা অনেক কঠিন হবে। সে কারণে সেখানে একটি বেইলি ব্রিজ তৈরি করে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার চিন্তা হচ্ছে।
জনদুর্ভোগ ও নিত্যপণ্যের চড়া দাম
সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে পড়ায় চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছে। চট্টগ্রামমুখী লোকজন প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ হেঁটে এবং বাকি পথ অটোরিকশায় চড়ে ২৫ কিলোমিটার দূরের ঘাগড়া গিয়ে বাসে উঠছে।
অন্যদিকে সড়ক যোগাযোগ না থাকায় চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্য রাঙামাটি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বিপর্যয়ের মুখে থাকা এ জনপদের মানুষকে বেশি দামে এসব পণ্য কিনতে হচ্ছে।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশি দামে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।