লেখক, শিক্ষক, অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের এর আগে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, সেই একই কায়দায় চাপাতির শক্তিশালী কোপে হত্যা করা হয়েছে সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্য্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয়।
Published : 26 Apr 2016, 11:17 AM
লাশের সুরতহাল করার পর কলাবাগান থানার এস আই মো. আনসার আলী তার প্রতিবেদনে বলেছেন, দুজনের ক্ষেত্রেই আঘাতের লক্ষ্য ছিল মাথা।
“ঘাড়, চিবুক, মাথার সামনে পেছনে ও উপরের অংশে বিভৎসভাবে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। দুজনেরই মৃত্যু হয়েছে ঘটনাস্থলে,” বলেন এস আই আনসার।
সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলহাজের মাথার পেছনে ও চিবুকের বাঁ দিকে ছয় ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ধারালো কোপের চিহ্ন রয়েছে। আঘাত এতোটাই শক্তিশালী ছিল যে খুলি কেটে মগজ বের হয়ে এসেছে।
মাথার পেছনে ডান দিকে কানের উপরের অংশেও পাশবিকভাবে কোপানো হয়েছে ইউএসএআইডির কর্মসূচি কর্মকর্তা জুলহাজকে।
তার বাঁ হাতের মধ্যভাগে ধারালো অস্ত্রের কাটা দাগ পাওয়া গেছে, যা থেকে মনে হয়, স্বাভাবিকভাবেই কোপ ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
৩৫ বছর বয়সী এই তরুণ সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সাময়িকী ‘রূপবান’ সম্পাদনায় যুক্ত ছিলেন। ইউএসআইডিতে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ছিলেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রটোকল অ্যাসিসটেন্ট।
সোমবার বিকালে কলাবাগানের লেক সার্কাস রোডের ছয়তলা আছিয়া নিবাসের দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে জুলহাজ খুন হন, যেখানে মাকে নিয়ে তিনি থাকতেন।
ওই বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীরা জানিয়েছেন,খুনিরা বাসায় ঢুকেছিল পার্সেল দেওয়ার কথা বলে। আর হত্যাকাণ্ডের পর টি শার্ট ও জিন্স প্যান্ট পরিহিত পাঁচ থেকে সাতজনকে ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে বলতে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যেতে দেখেছেন বলে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।
ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়ার ধারণা, জুলহাজকে হত্যার জন্যই খুনিরা ওই বাসায় গিয়েছিল বলে ঘটনাপ্রবাহে তাদের মনে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে জুলহাজের সঙ্গে থাকায় খুন হতে হয়েছে লোকনাট্য দলের কর্মী মাহবুব রাব্বী তনয়কে।
এস আই মো. আনসার সুরতহাল প্রতিবেদনে বলছেন, তনয়ের মাথার পেছনের অংশ থেকে ঘাড় হয়ে প্রায় এক ফুট পরিমাণ জায়গা প্রায় চার ইঞ্চি গভীর হয়ে কেটে গেছে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে।
এছাড়া মাথার উপরের অংশেও পাঁচ ইঞ্চি দ্যৈর্ঘ্যের ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে; কোপের কারণে কেটে গেছে খুলি।
এর আগে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার, লেখক অভিজিৎ রায়, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়,প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনসহ বিভিন্ন হত্যার ঘটনায় লাশের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা একই ধরনের আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা বলেছিলেন।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিকল্পিত ও আকস্মিক হামলায় দক্ষ হাতে চাপাতির কোপে মৃত্যু নিশ্চিত করে দ্রুত পালিয়ে গেছে খুনিরা।
এসব ঘটনার প্রায় প্রতিটিতেই তদন্তকারীরা ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছেন।
এ সম্পর্কিত আরও খবর