মান্নাকে হাছানের তুলাধুনা

“রাজনীতিতে তারা পরিত্যক্ত ব্যক্তি বিশেষ। এদের কথার কোনো মূল্য নাই। কিন্তু আওয়াজ বড়”, বলেন তিনি।

শনিবার চট্টগ্রামে বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবসের আলোচনায় বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ‘পরিত্যক্ত ব্যক্তি বিশেষ’ বলে সম্বোধন করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, “রাজনীতিতে আওয়াজ বড় হলেও তাদের কথার কোনো মূল্য নেই।”

শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামে বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবসের আলোচনায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

হাছান বলেন, “ব্যাঙ প্রাণী হিসেবে অনেক ছোট হলেও আওয়াজ অনেক বড়। রাজনীতিতেও কিছু পরিত্যক্ত মানুষ আছে, যারা ঘুরে ঘুরে সব দল করে। আর রাজনীতিতে পরিত্যক্ত মানুষগুলোরও ব্যাঙের মত আওয়াজ বড়।

“মাহমুদুর রহমান মান্না ভাইয়ের একটা বক্তব্য গতকাল পত্রিকায় পড়লাম, পরশুদিন রাতে টেলিভিশনে শুনলাম। সরকারের নাকি একদম ভিত নাই। সরকারের ভিত নাই বিধায় পরপর চারবার আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায়। তারা তো টেনে ফেলে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু টান দিতে গিয়ে তারাই ধপাস করে পড়ে গেছে।”

এই আয়োজনে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক হয়। বিডিআরসিএস ব্যবস্থাপনা পরিষদের সংবর্ধনারও আয়োজন করা হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “মাহমুদুর রহমান মান্না ভাইসহ আরো কিছু দল ও ব্যক্তি বিশেষ আছে, যাদের নিজের দলের কোনো ভিত্তি নাই, ঘুরে ঘুরে দল করে। মান্না ভাই মাশাআল্লাহ এই পর্যন্ত মাত্র সাতটি দল বদল করেছেন। কতদিন জাসদ ভেঙে বাসদ, আবার বাসদ ভেঙে এখন গণতন্ত্র মঞ্চ। সেটি ভেঙে কখন আবার পালিয়ে যান, সেটি বলা যায় না।

“রাজনীতিতে তারা পরিত্যক্ত ব্যক্তি বিশেষ। এদের কথার কোনো মূল্য নাই। তাদের দল ছোট, যখন সমাবেশ করে তাদের মানুষ থাকে ২০ থেকে ৩০ জন, সাংবাদিক থাকে ৫০ জন, এই নিয়ে তাদের সমাবেশ হয়। কিন্তু গলা অনেক বড়, এদের একজন ঢাকা সিটি করপোরেশনে ভোটে দাঁড়িয়েছিল, প্রাপ্ত ভোট দুই হাজার পূর্ণ করতে পারে নাই। কিন্তু আওয়াজ অনেক বড়। আবার টেলিভিশনে দেখা যায় ভলিউমও তাদের একটু বড় থাকে।”

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তা দেখে সমগ্র পৃথিবী প্রশংসা করছে বলেও দাবি করেন হাছান। বলেন, “জাতিসংঘের মহাসচিব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, ভারতের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী, জার্মান চ্যান্সেলর, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্টসহ সমগ্র পৃথিবী প্রশংসা করে। কিন্তু বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা এটির প্রশংসা করতে পারে না। আমাদের রাজনীতিতে প্রত্যাখ্যান আর সংঘাতের সংস্কৃতি না থাকলে দেশ আরো বহুদূর এগিয়ে যেতে পারত।

“নির্বাচনের পর ৮০টা দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চিঠি লিখে বলেছেন, আমাদের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান। এতে ব্যক্তি বিশেষ রাজনীতির ব্যাঙদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এজন্য তারা ব্যাঙের মত বেশি বেশি লাফাচ্ছে।”

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ভূমিকার প্রশংসাও করেন মন্ত্রী। বলেন, “ভবিষ্যতের পথচলায় আমাদের দেশকে স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বাস্থ্যসেবা এবং মানবসেবার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে।”

স্বাস্থ্যসেবায় অনিয়ম হলে রুখে দাঁড়ান

স্বাস্থ্যসেবাকে আরও উন্নত করার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সবার আগে এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, “দেখা যায় যে, সরকারি হাসপাতালে সরকার কিনে দিয়েছে মেশিন, কিন্তু সেই মেশিনের বাক্স খোলা হয় না। আবার মেশিন খোলা হয় ঠিকই, কদিন পরে নষ্ট হয়ে যায়, মেরামতের আর উদ্যোগ নেওয়া হয় না, যাতে করে মানুষ প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হয়।

“এগুলো যারা করেন, তারা আসলে জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়ান, জনগণের বিপক্ষে কাজ করেন। এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যসেবাকে আরও উন্নত করার ক্ষেত্রে এবং সহজ-সুলভে স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়।”

জনগণ সোচ্চার হলে এই কাজগুলো করা আর সম্ভব হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সরকার কোনো যন্ত্র নয়, সরকারও কিন্তু মানুষ দিয়েই চলে। সুতরাং জনগণ যখন এগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলবে সরকারের পক্ষেও এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহজতর হবে।”

নগরীর আন্দরকিল্লায় রেড ক্রিসেন্ট মাঠে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা রেড ক্রিসেন্টের সাধারণ সম্পাদক মাস্টার আসলাম খান।

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও রেড ক্রিসেন্ট জেলা ইউনিটের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান এম ইউ কবির চৌধুরী।