পুলিশের ছিনিয়ে নেওয়া ব্যাগে ‘গুরুত্বপূর্ণ আলামত’

রাজধানীর কলাবাগানে বাড়িতে ঢুকে জুলহাজ মান্নানসহ দুজনকে খুন করে পালিয়ে যাওয়ার সময় হামলাকারী এক যুবকের হাত থেকে এক এএসআইয়ের ছিনিয়ে নেওয়া ব্যাগে গুরুত্বপূর্ণ আলামত পাওয়া গেছে বলে দাবি করছে পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2016, 06:22 PM
Updated : 25 April 2016, 06:22 PM

সোমবার বিকালে লেকসার্কাসের ওই বাড়িতে ঢুকে টি শার্ট ও প্যান্ট পরা যে যুবকরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল, তাদের হাতে ল্যাপটপের ব্যাগ থাকার কথা জানিয়েছিলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

জোর করে ঘরে ঢুকে জুলহাজ ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়কে কুপিয়ে হত্যার আগে বাড়ির এক দারোয়ানকে আঘাত করে হামলাকারীরা।

যাওয়ার সময় তাদের আটকাতে গিয়ে এএসআই মমতাজ জখম হন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ডিএমপির জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান।

তিনি বলেন, “এএসআই মমতাজ হামলাকারীদের একজনের কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনিয়ে রাখেন।”

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, “পুলিশ খুনিদের একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ আলামত পাওয়া গেছে।”

ওই ব্যাগে মোবাইল ফোনসহ কিছু জিনিস পাওয়া গেছে বলে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে বিস্তারিত কিছু কোনো কর্মকর্তাই বলতে চাননি।

আহত এএসআই  মোমতাজকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত দারোয়ান পারভেজ মোল্লা চিকিৎসাধীন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

দুর্বৃত্তদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকলেও সমকামী অধিকারের পক্ষে সরব জুলহাজ এবং নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয়কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বলে দারোয়ান পারভেজ জানান।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিকাল ৫টার দিকে তিন যুবক পার্সেল দেওয়ার কথা বলে জুলহাজ মান্নানের ফ্ল্যাটে যেতে চান। তাদের ঢুকতে দিয়ে তিনিও পেছন পেছন দোতলায় ওঠেন।

“দরজা নক করলে জুলহাজ স্যার দরজা খোলেন। তাদের দেখে আবারও দরজা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন তারা বাসায় জোর করে ঢুকতে চায়।”

“আমি তাদের বলি, স্যার যেহেতু ঢুকতে দিতে চান না, আপনারা চলে যান। এ কথা বলার পরই আমাকে আঘাত করে।”

পারভেজ লুটিয়ে পড়লে ওই যুবকরা জোর করে ঘরে ঢুকে জুলহাজ ও তার সঙ্গে থাকা অন্যজনকে (তনয়) কোপাতে থাকে বলে জানান দারোয়ান পারভেজ।

খুনিদের পালিয়ে যেতে দেখেছেন, এমন এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৫/৭ জন যুবক ওই বাসা থেকে বের হয়েছিল। তারা ‘আল্লাহু আকবর’ বলতে বলতে তেঁতুলতলা মাঠ দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।”

পালানোর সময় হামলাকারী যুবকদের গুলি ছুড়তে দেখেছিলেন এই নারী। তাদের কাঁধে ল্যাপটপের ব্যাগ ছিল বলেও জানান তিনি।  

বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে লেখক, অধ্যাপক, প্রকাশক, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেও একইভাবে চাপাতি ব্যবহারের নজির দেখা গেছে। কয়েকটি ঘটনায় ল্যাপটপের ব্যাগের ভেতরে চাপাতি বহনের নজিরও পেয়েছে পুলিশ। 

এই ধরনের প্রতিটি হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিদের সন্দেহ করা হলেও তিন বছর আগের ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা ছাড়া আর কোনো মামলায় তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ।  

জুলহাজ মান্নান

জুলহাজকে খুনের লক্ষ্য নিয়েই হামলা হয়েছিল বলে নিশ্চিত পুলিশ। পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান বলেন, “ঘটনাটি টার্গেটেড কিলিং।”

র‌্যাবের ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের পরিচালক আবুল কালাম আজাদও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাটি পরিকল্পিত।”

জুলহাজ যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির কর্মসূচি কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি এক সময় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রটোকল অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবেও কাজ করেছিলেন।

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট সহকর্মী জুলহাজ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে কলাবাগান থানায় যোগাযোগ করলে জানানো হয়।

থানার অপারেটর শ্যামল চন্দ্র হালদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্যারেরা কেউ থানায় ফেরেননি। সবাই ঘটনাস্থলে। তাই এখনও কোনো মামলা হয়নি।”