লোকসভায় শোচনীয় হারে হতবিহ্বল কংগ্রেসকে প্রধান বিরোধী দলের আসন থেকেও হটানোর পরিকল্পনা হাজির করেছেন হবু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
Published : 18 May 2014, 12:50 AM
এই প্রথম কংগ্রেসের আসন ৫০ এর নিচে নেমে আসায় লোকসভায় প্রধান বিরোধী দলের আসনে তাদের বসা ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
এর মধ্যেই বিজেপির নরেন্দ্র মোদিকে উদ্ধৃত করে ভারতের সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, কংগ্রেস বাদে অন্য দলগুলো জোট গড়ে পার্লামেন্টে বিরোধী দলের স্বীকৃতি নিতে পারে।
আর তাহলে এই প্রথম ভারতবাসী দেখবে, সরকার ও প্রধান বিরোধী দল কোনোটিতেই নেই প্রায় দেড়শ বছর পুরনো কংগ্রেস।
এদিকে বিজেপির সভাপতি রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও নতুন সরকারে এনডিএ জোটের শরিকদেরও রাখবেন তারা।
আর মোদির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বিজেপি সাধারণ সম্পাদক অমিত শাহ বলেছেন, তাদের বিদেশ নীতিতে খুব একটা পরিবর্তন আসবে না।
শুক্রবার ইতিহাস গড়া জয়ের পর শনিবার ব্যস্ত সময় কাটান নরেন্দ্র মোদি, গুজরাট দাঙ্গার সমলোচনা নিয়েই যিনি বসতে চলছেন ভারতের মসনদে।
টানা দুই বারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের পদত্যাগের দিন সকালে গুজরাট থেকে রাজধানী দিল্লিতে যান মোদি। সেখানে দলের পার্লামেন্টারি কমিটির বৈঠকে যোগ দেন তিনি।
কট্টর এই হিন্দু নেতা দিল্লি থেকে তীর্থস্থান উত্তর প্রদেশের বারানসিতে যান। গুজরাটের পাশাপাশি এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতেছেন তিনি।
বারানসিতে নেমেই প্রথমে কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরে যান মোদি। সেখান থেকে দশাশ্বমেধ ঘাটে গিয়ে গঙ্গা আরতি করেন তিনি।
গঙ্গাতীরের ওই জনসভায় মোদি বলেন, অটল বিহারি বাজপাইর সময়টুকু ছাড়া কার্যত ইতিহাসের পুরোটা সময়ই কংগ্রেসের শাসন দেখেছে ভারতবাসী। এই নির্বাচন এক নতুন যুগের সূচনা ঘটিয়েছে।
“জনগণ ভোটের মাধ্যমে এনডিএ জোটের বাইরের দলগুলোকেও চপোটাঘাত করেছে। এখন তারা যা করতে পারে, তা হল একটা জোট গড়ে লোকসভায় বিরোধী দলের স্বীকৃতি নেয়া।”
লোকসভায়র চূড়ান্ত ফলাফলে বিজেপি ২৮২ আসন নিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েছে। তাদের জোট শরিক শিবসেনা পেয়েছে ১৮ আসন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ৪৪।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রধান বিরোধী দলের স্বীকৃতি নিতে হলে ৫৪৫ আসনের লোকসভায় এক-দশমাংশ অর্থাৎ ৫৪ আসন থাকতে হবে।
ভোটের ফলাফলে দেখা যায়, তামিলনাড়ুর জয়ললিতার দল এডিএমকে ৩৭ আসন নিয়ে তৃতীয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস ৩৪ আসন নিয়ে চতুর্থ এবং উড়িষ্যার নবীন পট্টনায়েকের বিজু জনতা দল ২০ আসন নিয়ে পঞ্চম স্থানে আছে।
এছাড়া বামফ্রন্ট ১১টি, তেলেগুদেশম পার্টি ১৬টি, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি ১১টি আসন পেয়েছে।
ভারতে সরকার গঠনের জন্য যত আসন প্রয়োজন, তার চেয়ে ১০টি আসন বেশি রয়েছে বিজেপির। ফলে কাউকে না ডাকলেও তাদের চলে।
তবে দলের সভাপতি রাজনাথ সিং সাংবাদিকদের বলেছেন, “দেশ পরিচালনায় যারা আমাদের সহযোগিতা করতে চাইবে, তাদের সবাইকে গ্রহণ করব। এনডিএর যেসব দল আমাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তারা সরকারে ন্যায্য অংশীদাররিত্ব পাবে।”
“একটি সরকার গঠনের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার। তবে একটি দেশ চালানোর জন্য প্রয়োজন সব দলের সমর্থন,” নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন তিনি।
মন্ত্রিসভার গঠন সম্পর্কে রাজনাথ বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার হলেও সবাই একসঙ্গে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
এল কে আদবানি, সুষমা স্বরাজ, মুরলি মনোহর যোশীসহ দলের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের ভূমিকা কী হবে, তাও আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে বলে জানান তিনি।
দিল্লির রাজপথেও ব্যাপক সংবর্ধনা দেয়া হয় হবু প্রধানমন্ত্রীকে। ওই সংবর্ধনা নিয়েই তিনি রাজনাথ সিং ও অমিত শাহকে নিয়ে হেলিকপ্টারে উড়ে যান বারানসিতে।
অমিত শাহ এনডিটিভিকে বলেন, “জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় রেখে বিদেশ নীতি গ্রহণ করা হয় বলে এতে বড় ধরনের পরিবর্তন আপনারা প্রত্যাশা করবেন না।”
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা জানি এই অঞ্চলে কারা আমাদের মিত্র, আর কারা ঝামেলা পাকায়।
“আমি এই মুহূর্তে বলতে পারি, আমাদের সরকার দেশের মর্যাদা এবং নিরাপত্তার প্রশ্নে আপস করবে না।”