বিএনপির ৫ উপজেলা চেয়ারম্যানের সাংসদ হওয়ার আশা শেষ

উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে বিএনপির মনোনয়নে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা তিনজনের প্রার্থিতা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আটকে গেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2018, 09:27 AM
Updated : 17 Dec 2018, 01:25 PM

এছাড়া আরও দুইজনের মনোনয়নপত্র স্থগিত করে হাই কোর্ট সোমবার রুল জারি করেছে।

এর ফলে ঢাকা-২০ আসনে বিএনপির প্রার্থী ধামরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন, বগুড়া-৩ আসনের প্রার্থী আদমদিঘী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মোহিত তালুকদার এবং বগুড়া-৭ আসনের প্রার্থী শাহজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরকার বাদল আর ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না।

ঢাকা-১ আসনের প্রার্থী নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাক এবং বগুড়া-৭ আসনের প্রার্থী গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিল্টন মোর্শেদের ভোটের পথও আটকে গেছে।  

তমিজ উদ্দিনের মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশন বৈধ ঘোষণা করলেও হাই কোর্ট তা স্থগিত করেছিল। কিন্তু তার আবেদনে হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত করে দিয়েছিল চেম্বার আদালত। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সাত বিচারকের আপিল বেঞ্চ সোমবার চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ তুলে নিয়েছে। ফলে হাই কোর্টের আদেশই বহাল থাকছে এবং তমিজ উদ্দিন নির্বাচন করতে পারছেন না।

বগুড়ার মোহিত তালুকদার এবং সরকার বাদলের মনোনয়ন পত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত হাই কোর্ট স্থগিত করায় তাদের ভোটের আশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু হাই কোর্টের ওই আদেশ চেম্বার আদালতে স্থগিত হয়ে যায়। আপিল বিভাগ সোমবার ওই স্থগিতাদেশ চলমান রেখেছে।

আপিল আদালতে তিন প্রার্থীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও প্রবীর নিয়োগী। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সানজিদ সিদ্দিকী।

সানজিদ পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আপিল বিভাগের আদেশের ফলে বিএনপি মনোনীত এ তিন প্রার্থী আর নির্বাচন করতে পারছেন না।”

ওই তিনজনের মধ্যে তমিজ উদ্দিন ও মোহিত তালুকদার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন; কিন্তু তা গৃহীত না হওয়ায় প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। আর সরকার বাদল পদত্যাগ না করেই প্রার্থী হয়েছিলেন বলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।

অন্যদিকে ঢাকা-১ আসনের বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাকের মনোনয়ন পত্র নির্বাচন কমিশনে বৈধতা পেলেও হাই কোর্ট সোমবার তা স্থগিত করে দিয়েছে।

ওই আসনে কুলা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা বিকল্প ধারার জালাল উদ্দিনের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার শামীম আহমেদ মেহেদী ও ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম।

আদালতের আদেশের পর আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান পদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার আগেই আশফাক মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।

“নির্বাচন কমিশন তার মনোনয়ন পত্র বৈধ ঘোষণা করেছিল। নির্বাচন কমিশনের ওই সিদ্ধান্ত হাই কোর্ট স্থগিত করে দিয়েছে।”

ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম বলেন, কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত হওয়ায় আশফাক আপাতত আর নির্বাচন করতে পারছেন না।

বগুড়া-৭ আসনে এবার বিএনপির মূল প্রার্থী ছিলেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কিন্তু দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। এ কারণে মিল্টন মোর্শেদকে করা হয়েছিল বিকল্প প্রার্থী। পাশাপাশি সরকার বাদলও মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন।

খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তা বাতিল করে দেওয়ার পর তিনি উচ্চ আদালতে গিয়েও প্রার্থিতা ফিরে পাননি। এর মধ্যে হাই কোর্টে সরকার বাদলের মনোনয়নপত্র স্থগিত করলে ওই আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে থাকেন মিল্টন মোর্শেদ। কিন্তু ‘পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ার’ কারণে তার প্রার্থিতাও স্থগিত করে দেয় হাই কোর্ট।

বগুড়া-৭ আসনের একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার বিকেলে এ আদেশ দেয়।

আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী সেলিনা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিল্টন মোর্শেদ তার মনোনয়নপত্র গৃহীত হওয়ার আগেই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এ কারণে তা বাতিল করা হয়।

নির্বাচন কমিশনে আপিল করে মিল্টন প্রার্থিতা ফিরে পেলে ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ডাব প্রতীকের প্রার্থী ফেরদৌস আরা বেগম।

“শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রুল জারি করেছে। ফলে আপাতত মিল্টন আর নির্বাচন করতে পারছেন না।

খালেদা জিয়ার পাশাপাশি বাদল ও মিল্টনের প্রার্থিতা আটকে যাওয়ায় বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির ধানের শীষের আর কোনো প্রার্থী থাকল না।