ইংরেজিতে বলতে গেলে ‘কোয়েবো’ অথবা ‘কিয়েবো’। আর যদি কোরিয়ানে বলি তাহলে হবে ‘খুবো’। আমার প্রিয় জায়গাগুলোর মধ্যে একটা। উহু, আমি খুব বইয়ের পোকা না। কিন্তু আমি বই পড়তে, বই কিনতে খুব খুব পছন্দ করি। প্রচুর গল্প শুনি আমি আর আমার মেয়ে। আর যখন কোয়েবোতে আসি তখন আসলে বই কেনার লোভটা সামলানো আমার জন্য অনেক কঠিন। আমি না কিনলেও মেয়ের জন্য একটা হলেও বই কিনে নেই আমরা।
আর ভেতরে গিয়ে ঠিকই বুঝতে পারলাম, বইয়ের পোকারা পুরো বিশ্বজুড়েই আছে। ভেতরের পরিবেশ দেখলে যে কারো পড়তে ইচ্ছা করবে। বিশাল একটা শপিং-মলের ভেতরে ২/৩টা স্টোর নিয়ে সাজানো পুরো দোকানটা। অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো গোছানো। খুব ছিমছাম পরিবেশ। যেমনটা একটা পাঠাগারের ভেতর দেখে থাকি আমরা। শান্ত একটা পরিবেশ। আপনি যদি পড়তে নাও ভালবাসেন তবু আপনার মনে হবে এই শপটা একটু ঘুরে দেখি।
কোয়েবোটা আমার কাছে মনে হয় একটা পাঠাগারের মতো। পাঠাগার থেকে আপনি বই কিনতে পারছেন না, কিন্তু এখান থেকে আপনি বই কিনতে পারছেন। এছাড়া সব রকমের সুবিধাতো পাচ্ছেনই।
শপের প্রবেশ পথেই রয়েছে সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের কালেকশন। সাথে অ্যাওয়ার্ড পাওয়া বইগুলো। আর উপরে বোর্ডগুলোতে প্রত্যেকটা বিষয়ের নাম দেওয়া আছে আপনি সেকশন দেখলেই বুঝতে পারবেন যে কোথায় কোন বই রয়েছে। আর আপনি যদি আপনার পছন্দমতো বই খুঁজে নাও পান সেক্ষেত্রে আপনি কম্পিউটারের সাহায্য নিতে পারেন।
এখানে আসলে আমার মনে হয় সারাদিন কাটিয়ে দিতে পারবো। সবাই আসলে সময় নিয়েই আসে। বই যদি কিনতে নাও চান তাতে অসুবিধা নেই। ওই যে বললাম এখানে বসেই আপনি বই পড়তে পারবেন। এই বিষয়টা অসাধারণ লাগে আমার কাছে। এছাড়া ইভেন্ট হলের ব্যবস্থাটাও আমার খুব ভাল লাগে। যে কোন নতুন বই প্রকাশিত হলে প্রথমে এখানে দিয়ে থাকে এবং মাঝে মাঝে বইয়ের লেখকও আসে। এতে করে লেখক ও পাঠকের সম্পর্ক বেশ ভাল হয় এবং লেখকও পাঠকদের তার বই বা উপন্যাস সম্পর্কে ভাল করে বিশ্লেষণ করতে পারে। কোরিয়ান, আন্তর্জাতিক সব ধরণের বই ছাড়া এখানে সিডি, ডিভিডি কেনার জন্য আলাদা সেকশন আছে।
বই পড়তে যাবেন? অনেক সময়ের ব্যাপার। ক্ষুধা তো লাগবেই। হ্যাঁ, আপনি এখানে খেতে পারবেন। ওদের নিজস্ব কফিশপ থেকে কিনে এইখানে বসে বই পড়তে পড়তে আপনি খেতে পারবেন। বুকশপের ভেতরেই রয়েছে কফিশপ। সেক্ষেত্রে খাওয়ার জন্য অন্য কোথাও যেতে হচ্ছে না। আর কফিশপের মধ্যে রয়েছে বিশাল বড় এক টেবিল, আর ছোট ছোট টেবিল-চেয়ার। টেবিলের দুইপাশ দিয়েই সবাই বসে পড়ালেখা করে। আসলে পরিবেশটা এমনভাবে করা যে আপনার পড়তে ইচ্ছা করবে।
জ্ঞানার্জনের বা শিক্ষার আসলে কোন বয়স লাগে না। আপনি ইচ্ছা করলে এখন থেকেই বই পড়া শুরু করে দিতে পারেন। যতদিন এখানে থাকবো আমিতো যখনই সময়-সুযোগ করতে পারবো চলে আসবো কোয়েবোতে বই পড়তে, হয়তোবা বই কিনতে।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি
ইমেইল: shajia.shila@yahoo.com
ছবি কৃতজ্ঞতা: সাজিয়া শিলা
লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |