কোরিয়ায় উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিয়ে রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমানের সাক্ষাৎকার

দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সেবা নিয়ে আমরা প্রবাসীরা সবাই অনেক বেশি সন্তুষ্ট। দূতাবাসের ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো তথ্য দিতে পারেন রাষ্ট্রদূত।

সাজিয়া শিলা, দক্ষিণ কোরিয়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2017, 03:07 AM
Updated : 31 May 2017, 06:53 AM

সেই লক্ষ্যেই দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমানের সাক্ষাৎকার নিতে যোগাযোগ করলাম।

রাষ্ট্রদূতদের খুবই কর্মব্যস্ত দিন কাটে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সাথে সাথেই তিনি রাজি হয়ে গেলেন সাক্ষাৎকার দিতে।

কোরিয়ায় ব্যবসা, পড়াশোনা এবং কাজ করতে ইচ্ছুকদের এই সাক্ষাৎকারটি বিশেষ উপকারে আসবে আশা করছি-

কোরিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ

তুরস্কে প্রায় সাড়ে চার বছর বা পৌনে পাঁচ বছর রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করার পর দুই বছর আগে আমি কোরিয়াতে আসি। সবসময় বাণিজ্য অর্থাৎ আমদানি-রপ্তানি দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নির্ধারণ করা হয়। এটা সবক্ষেত্রে ঠিক নয়। উদাহরণ হিসেবে কোরিয়াকেই টানা যেতে পারে।

কোরিয়া থেকে বাংলাদেশ বছরে চারশ’ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করে আর কোরিয়া আমাদের কাছ থেকে করে বছরে এক বিলিয়ন ডলার। দেশটির সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় দিক হলো- মানবসম্পদ উন্নয়ন।

এখানে বাংলাদেশের সাত-আটশ’ বা এক হাজারের মতো শিক্ষার্থী আছেন। এরা  মেধাবী। কোরিয়ার স্মাতকোত্তর পড়াশোনা সম্পূর্ণ গবেষণাধর্মী, বাণিজ্যবান্ধব।

কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি বা ‘কইকা’ বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের বছরে হাজার হাজার লোককে প্রশিক্ষণ দেয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল খাত, এমনকি স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তাদের তারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

এমনকি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুল এখানে এসেছিলেন,‘ডিজঅ্যাবিলিটি স্পেকট্রাম’-এর ওপরে দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। এতে আমাদের মানব সম্পদ উন্নয়ন হচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা

চৌদ্দ হাজার থেকে পনেরো হাজার বাংলাদেশি আছেন এখানে। এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) কর্মী আছেন অনেক, যারা ছোটো ছোটো কারখানায় কাজ করেন। ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিতে কাজ করেন তারা। কেউ কেউ আছেন স্থায়ী বাসিন্দা, তারা ব্যবসা করেন। কেউ কেউ ভালো চাকরি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে। তবে সব চেয়ে বেশি আছেন ইপিএস কর্মী।  আমার জানা মতে এরা সবাই খুব ভালো আছেন।

অবৈধ বাংলাদেশি ও কোরিয়ান দূতাবাসের উদ্যোগ

কোরিয়াতেও অবৈধ বাংলাদেশি আছেন। আমরা সবসময় এগুলো নিয়ে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করি। ইপিএস কর্মীরা রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে আসেন না, সরাসরি সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে আসেন। বেশিরভাগই শিক্ষিত ছেলে, তারা বৈধভাবে আসেন। তারা গড়ে মাসে এক লাখ টাকা বেতন পাচ্ছেন, যেখানে সৌদি আরব কাতার বা মালয়েশিয়া প্রবাসীরা বেতন পানবিশ-ত্রিশ হাজারের মতো।

কেউ চার বছর দশ মাসের লিগ্যাল লিমিট নিয়ে চার বছর কোরিয়ায় থাকলে ত্রিশ থেকে চল্লিশ লাখ টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন। ইপিএস কর্মীদের কোন সমস্যা হয় না, যেহেতু তারা বৈধভাবে সরকারি নিয়োগে এখানে আসেন। তারপরও কিছু কিছু শ্রমিক লোভে পড়ে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও মেয়াদ না বাড়িয়ে লুকিয়ে কাজ করেন।

তাদের আমরা বলি, ঘন ঘন মালিক পরিবর্তন না করে যে কোন এক মালিকের সাথে কাজ করে আস্থা অর্জন করার জন্য। এতে বৈধ উপায়ে দীর্ঘদিন কাজ করা যায়, টাকা জমানো যায়, জমানো টাকা দিয়ে দেশে ফিরে ভালো কিছু করা যায়।

একটু কষ্ট করে কোরিয়ান ভাষাটা শিখে নিলে অনেকগুলো সম্ভাবনার দরজা খুলে যায়। ভাষা শিখে নিলে কোরিয়াতে ভিসা পরিবর্তন করার অনেক সুযোগ রয়েছে। ই-নাইন ভিসা থেকে ই-সেভেন বা এফ-টু এফ-সিক্স ও এফ-ফোরে উন্নতি করা যায়। এসব বিষয় নিয়ে আমরা অনেকগুলো সেমিনার করেছি, ইপিএস বাংলা কম্যুনিটির ও বিসিকের সাথে।

তখন দেখেছি সবাই জিনিসগুলো আগে থেকে জানতো না। প্রবাসীরা এখন বৈধভাবে থাকতে চান। সচেতনতার এই হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

ইপিএস কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা

এখানে যেকোনো কাজের জন্য শ্রমিক নিয়োগ সম্পূর্ণ কোম্পানির ওপর নির্ভর করে। প্রথমে শ্রমিকরা সরকারি তত্ত্বাবধানে আসেন, সরকার একটা কোটা নির্ধারণ করে দিয়েছে শুধু। এখানে সরকারি একটা পরীক্ষা হয়। পরীক্ষায় যারা পাশ করেন তাদের নাম তালিকায় থাকে। তাদেরই কাজ করার জন্য মনোনীত করা হয়।

তারপর আর বাংলাদেশ সরকার বা কোরিয়ান সরকারের কোনও হাত নেই। সেই তালিকা থেকে শ্রমিক পছন্দ ও নিয়োগ দেয় কোম্পানি নিজে। কোম্পানির মালিক নিজে সেই তালিকা থেকে বাছাই করে শ্রমিক নিয়োগ দেন। এটা মালিকের আস্থার ওপর নির্ভর করে সে কাকে নিচ্ছে।

এখানে একজন মালিকের সঙ্গে কোন বাংলাদেশি ভালো কাজ করলে তার একটা সুনাম তৈরি হয়, মালিক তার ভিসা রি-নিউ করে দেন। তখন তার মাধ্যমে আরও কিছু বাংলাদেশি সেখানে কাজ করার সুযোগ পান। কারণ মালিক বাংলাদেশিদের ভালোভাবে নিচ্ছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কেউ কিছুদিন এক মালিকের সঙ্গে কাজ করে, তিন মাস পর বাড়তি টাকার লোভে অন্য মালিকের সঙ্গে কাজ করতে চলে যান। তখন অন্য বাংলাদেশিরা কাজের সুযোগ হারান। কারণ তখন মালিকের আস্থার মধ্যে চিড় ধরে যায়।

রি-এন্ট্রি কিন্তু তাই আগে থেকেই অ্যারেঞ্জ করা হয়। টানা থাকা যাবে না, বিরতি দিতে হবে। কোরিয়ায় আইন রয়েছে এখানে একটানা পাঁচ বছর বৈধ অভিবাসী হিসেবে কাজ করলে কোরিয়ান নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু সে সুযোগটা তারা দেন না, দুই মাসের জন্য একটা বিরতি দেন, তিন মাসের পর আবার ফিরে আসা যায়।

কোরিয়ায় স্থায়ী নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায়

নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে কোরিয়ানরা যথেষ্ট রক্ষণশীল। ওরা এই ব্যাপারে ইউরোপিয়ানদের মতো উদার নয়। তবে বর্তমানে কোরিয়ার অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে, তাদের ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তন হয়েছে। এখন তারা তাদের প্রয়োজনে প্রবাসী শ্রমিকদের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন। বয়স্ক লোক বাড়ছে, কিন্তু কর্মক্ষম তরুণ লোক নেই। তাই জাপানিদের মতো তারা বুঝতে পারছে, তাদের বাইরে থেকে শ্রমিক আনতে হবে।

সেজন্য তারা অনেক নিয়ম-কানুন ও শর্তগুলো আস্তে আস্তে শিথিল করে ফেলছে। কিন্তু হঠাৎ করে হয়তো ‘ফ্লাড-গেট’ এর মতো সব খুলে যাবে না। এখানে নাগরিকত্ব পেলে হলে ভাষা জানতে হয়, সংস্কৃতি জানতে হয়।

যারা ওভার-স্টে করছে তাদের জন্য ‘ভলান্টিয়ারি রিটার্ন’ প্রোগ্রাম চালু করেছে তারা।  আগে নিয়ম ছিলো একবার যদি কারও নাম ব্ল্যাক লিস্টে ঢুকে যায়, যদি অবৈধ হয়ে একবার কেউ ফেরত যায় তাহলে আর কখনও আসতে পারবে না। কিন্তু ভলান্টিয়ারি রিটার্ন প্রোগ্রামের আওতায় এই শর্ত নেই। এটা ডিসেম্বরে শেষ হয়ে গিয়েছিলো, কিন্তু আমাদের অনুরোধে এখনও চালু রয়েছে।

কোরিয়ায় উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ

কোরিয়ায় সরকারি, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রফেসরস ফান্ডিং-এ তিনটি বাদে কোনও স্কলারশিপ নেই। এই তিনটাই কিন্তু খুব ভালোভাবে চলছে। এটা নিয়ে তেমন অভিযোগ নেই। আমাদের ছাত্ররা যারা এখানে পড়াশোনা করছেন, তারা কিন্তু অনেক ভালো আছেন। যদিও কোরিয়াতে অনেক কষ্ট করতে হয়, কাজ করতে হয়। পড়াশোনার খুব চাপ, তিন-চার বছরের মধ্যেই পিএইচডি শেষ করা যায়।

কোরিয়ার উন্নতির পেছনে বিজ্ঞানের অবদান বেশি, ওদের সংস্কৃতির মধ্যেই বিজ্ঞান ঢুকে গেছে। যার কারণে সরকারি, বেসরকারি বা অন্যান্য ফান্ডগুলো আসে বিজ্ঞান বিষয়ক উচ্চ পড়াশোনার জন্য। যার বিজ্ঞান ছাড়া অন্য বিভাগে স্কলারশিপ পাওয়া সহজ নয়।

পঞ্চাশ সালে যে দেশের মানুষ পাতা খেয়ে বাঁচতো,এখন তাদের ত্রিশ হাজার ডলার জনপ্রতি আয়। এর পেছনে কাজ করেছে তাদের বিজ্ঞানমুখিতা। তারা চায় তাদের দেশেবিদেশি ছাত্ররাও এসে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করুক, যেন সেই ছাত্রটা নিজ দেশে ফিরে গিয়ে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানে কাজ করে দেশের উন্নতি করে পারে। সেজন্য তারা সাহিত্য বা দর্শন এসব বিষয়ে স্কলারশিপ দিতে আগ্রহী নয়।

কোরিয়ায় স্কলারশিপ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ

কোরিয়াতে পড়াশোনার খরচ বেশি নয়, আবার কমও নয়। ইউরোপ বা আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে যে এখানে টিউশন-ফি বরং কমই, অর্ধেকের মতো,  কোনো কোনো ক্ষেত্রে খরচ এক-চতুর্থাংশ। বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যা খরচ হয়- সেই খরচে বা তার চেয়েও কমে খরচে কোরিয়ার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা যায়। সুতরাং কোরিয়ায় পড়াশোনার খরচ বেশি এটা বলা যাবে না।

বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে ইউরোপ-আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করতে যাচ্ছে। দেখা যাবে এর তিনগুণ বা চারগুণ কম খরচে কোরিয়ায় পড়াশোনা করা সম্ভব।

দায়িত্ব নেওয়ার পর আমদানি ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি

দক্ষিণ কোরিয়া বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে। টাকার অংকে এটা খুব বেশি না হলেও আশাব্যাঞ্জক। গত দুই-তিন বছরে অবশ্য বাংলাদেশে কোরিয়ার বিনিয়োগ বেড়েছে। কোরিয়ার বেশ কয়েকটি কোম্পানি এখন বাংলাদেশে কাজ করছে। যেমন- পদ্মা সেতুর পরামর্শক কোম্পানি হলো কোরিয়ান।

এছাড়া পেট্রোবাংলার সঙ্গে কোরিয়ান তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি ‘ডিউ কস্টকো’র চুক্তি হয়েছে, গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ব্লক দেওয়া বিষয়ক।

কোরিয়ায় পানি, বিদ্যুৎ ও শ্রম অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় এখানকার গার্মেন্টস কোম্পানিগুলোও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চাইছে। তারা আমাদের ইপিজেডগুলোতে জায়গা চাইছে, কিন্তু অনেক সময় আমরা তা দিতে পারি না। বাংলাদেশে এখন নতুন একশ’ ইকোনমিক জোন তৈরি হয়েছে, এই জোনগুলোতে আমরা তাদের জায়গা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি।

কোরিয়ার জনশক্তিতে বাংলাদেশের নারীদের সুযোগ

আমি এখানে আসার পর শত শত ইপিএস কর্মীদের সঙ্গে সভা-আলোচনা করেছি। কিন্তু আমি আশ্চর্য হয়েছি, এখানে একজনও বাংলাদেশি নারী কর্মী নেই! এমন নিরাপদ একটা কাজের পরিবেশ কোরিয়ায়, অথচ আমাদের দেশের নারীরা নেই। অথচ মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের নারী শ্রমিকরা নিগৃহীত হচ্ছেন, এমন খবর মাঝে মাঝেই পাই।

কোরিয়াতে দেশি ও বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে কোনও পার্থক্য করা হয় না, শ্রম আইনেও কোন লিঙ্গ বৈষম্য নেই। লিঙ্গভেদে বেতনের কোন পার্থক্য নেই এখানে। সম্পূর্ণ নিরাপদে একটা মেয়ে এখানে কাজ করতে পারে। তবে হাতেগোণা কিছু বাংলাদেশি মেয়ে এখানে কাজ করে। এটা আমি জানতে পেরেছি যখন তারা সমস্যায় পড়ে।

সমস্যাগুলো কোরিয়ানদের সঙ্গে নয়, বাংলাদেশি সহকর্মীর সঙ্গেই এই সমস্যাগুলো তৈরি হয়। আমরা চেষ্টা করি এগুলো মেটাতে।

আরেকটা ব্যাপার হলো, কোরিয়ান ওয়ার্কফোর্সে মেয়েদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম। সেক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর নারীকর্মী রিক্রুট না করার প্রবৃত্তি থাকতে পারে। কিন্তু আমি বেশ কিছু কোম্পানি দেখেছি যেখানে প্রচুর নারী কাজ করছেন। একজন মঙ্গোলিয়া থেকে আসা, একজন উজবেকিস্তান থেকে আসা। ওরা চার-পাঁচজন মিলে এক কারখানায় কাজ করে, যাতে করে পারস্পরিক একটা নিরাপত্তার বিষয় কাজ করে। 

প্রবাসীদের সেবায় দূতাবাসের নতুন উদ্যোগ

আমরা চেষ্টা করছি যতটা পারা যায় সেবা দিতে। আমি আসার পর প্রথমে প্রতি মাসে দুইটা রোববার প্রবাসী পরামর্শ-সেবার জন্য দূতাবাস খোলা রাখার ব্যবস্থা নিয়েছি। এখানে রোববার বিশাল একটা ব্যাপার। তখন ইপিএসের কর্মীরা আসেন। এমনকি যারা রোববারেও আসতে পারেন না, তাদের জন্য কনস্যুলেট টিম তৈরি করেছি, তারা কর্মীদের কাছে গিয়ে গিয়ে ভিসা ও অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতা করেন।

এখন চাপ কিছুটা কমেছে। মাসে একটি রোববার খোলা রাখলেই হয়। এখন আমাদের পাসপোর্ট ডেলিভারির টাইমও কমে গেছে। যার কারণে অন্যান্য কাগুজে ব্যাপারগুলোতে অগ্রগতি এনেছি।

দূতাবাসের দৃষ্টিতে কোরিয়া

আমরা চেষ্টা করি আমাদের সবটুকু দিয়েই। এখানে আমার সহকর্মীরা যথেষ্ট কো-অপারেটিভ। তবে আমার দরকার নতুন নতুন আইডিয়া, যেগুলো দিয়ে প্রবাসী সেবার কার্যক্রমগুলো আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।

আমরা কিন্তু শুধু প্রবাসী সেবাই করি না, দেশের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্ব করি। আমি এটাকে বলি ‘কালচারাল ডিপ্লোমেসি’।  আমরা প্রতি মাসে অন্তত একবার কোরিয়ানদের সঙ্গে বসি। নিজেদের দূতাবাস ছাড়াও অন্যান্য দেশের দূতাবাস এবং বিভিন্ন জাতীয়-অন্তর্জাতিক উৎসব ও দিবসে আমরা সাংস্কৃতিক দল নিয়ে অংশ নিই।

আমি অনেক দেশে গিয়েছি, অনেক দূতাবাসে কাজ করেছি। কিন্তু কোরিয়ানদের মতো এমন উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক দেশ আমি পাইনি। বহুজাতিক মনমানসিকতা রয়েছে এদেশের মানুষের। এর মাঝে আমাদের লক্ষ্য থাকে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার মতো কোরিয়ান বা অন্যান্য বিদেশি কোম্পানি বা কারখানা খুঁজে বেড়ানো। এটা হলো আসল উদ্দেশ্য যা আমার দেশের কাজে লাগে।

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

ইমেইল: Shajia.shila@yahoo.com

লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!