দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান অবস্থা নিয়ে প্রবাসীর ভাবনা

খবরের কাগজগুলো দেখলেই মনে হয়, কী জানি কী অবস্থা বিরাজ করছে দক্ষিণ কোরিয়াতে। তাই না?

সাজিয়া শিলা, দক্ষিণ কোরিয়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 April 2017, 08:31 AM
Updated : 20 April 2017, 08:32 AM

দেখলেই তো একটু হলেও ভয় চলে আসে নিজের অজান্তেই। হয়তো দক্ষিণ কোরিয়াতে এখন না বসবাস করলে এই ভয়টা আমার মধ্যে অনেক আগেই আসতো। আমরা পরিচিত যত জন আছি এখানে, তারা কেউই ভয় পাচ্ছি না। আসলে ভয় পাওয়ার মতো কোনও অবস্থা এখানে বিরাজ করছে না যে আমরা ভয় পাব।

সবাই একটু হলেও বুঝতে পারছেন, কোন ব্যপার এ কথা বলছি। তারপরও সবার যেন বুঝতে সুবিধা হয়, তাই আর একটু গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করছি।

আতঙ্কের প্রথম শুরু  আমার কাছে ২০১০ সালে। আমি তখন বাংলাদেশেই ছিলাম। আর আতঙ্কের নাম ‘উত্তর কোরিয়া’। হঠাৎ করেই খবরের কাগজে দেখলাম যে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি যুদ্ধজাহাজ টর্পেডোর আঘাতে সাগরে ডুবে গেছে। এতে নাকি ৪৬ জন নাবিকের করুণ মৃত্যু হয়।

সকল সন্দেহের তীর তখন উত্তর কোরিয়ার দিকে। এই ইস্যু নিয়ে তখন দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যায় যায় অবস্থা। উত্তর কোরিয়া অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম, দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থানরত মানুষদের কী অবস্থা হবে- এই ভেবে। চিন্তা বেশি হবার কারণ হলো, তখন আমার হাজবেন্ড তার পিএইচডি করার জন্য দক্ষিণ কোরিয়াতেই ছিল।

খবর দেখেই আমাদের সবার অবস্থা খারাপ- কী হচ্ছে? পরে ওকে ফোন করে জানলাম, অবস্থা মোটামুটি স্বাভাবিক। আমরা অন্যদেশ থেকে যেভাবে চিন্তা করছি, ওই রকম নাকি কিছু না। তার কিছুদিন পর জানলাম, সব কিছুই নাকি সাধারণ দিনের মতো চলছে।

কোরিয়ানদের মধ্যে প্রথমে ক্ষোভ থাকলেও, এখন কেউই নাকি এইসব নিয়ে মাথা ঘামানো তো দূরের কথা, এ ব্যপারে কেউ কথাও বলে না। শুনে আমরা অবাক! তখন আমাদের ওই কথাগুলো বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হয়েছিল। তারপর আমি আসার পরও এমন অবস্থা হয়েছিলো, কিন্তু সত্যি বলতে আমার কাছেও এইগুলা কোন কিছুই মনে হয়নি।

আসলে যাদের আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত মানুষজন দক্ষিণ কোরিয়াতে থাকে, স্বাভাবিকভাবেই তারা একটু হলেও চিন্তিত হবে। ঠিক এই চিন্তা থেকেই অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, কেমন আছি আমরা? সব ঠিক আছে নাকি?

এই তো গত সপ্তাহের কথা, আমাদের এক বড় ভাই আমাদের খবর নিতে জিজ্ঞেস করছিল, আমাদের কী অবস্থা? কেমন আছি? কোরিয়ায় নাকি যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থা? উনি নাকি খবরের কাগজে দেখছেন আর দেখে ওনার মনে হয়েছে খুব গম্ভীর অবস্থা।

সত্যি বলতে, আমরা যারা আছি এইখানে, তারা কিছুই টেরই পাই না। সব কিছু অন্যসব দিনের মতো সাধারণ। খবরের কাগজের সুবাদেই আমরা এইসব গম্ভীর খবর জানতে পারছি। অথচ খবরের কাগজের কথার সাথে আর আমাদের দিন কাটানোর মধ্যে কোন মিলই নেই। পুরো উলটো। খুবই স্বাভাবিক দিন যাচ্ছে সবার। এখনে তো পহেলা বৈশাখ আমেজটাও বাঙালিদের কাটেনি।

তারপরও এতো বড় একটা ইস্যু! সবার সাথে কথা বলছি, তাদের মন্তব্যও জানতে চাচ্ছি যে কেউ চিন্তিত কিনা? কিন্তু কেউই এই ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত না। এমনকি কোরিয়ানরাও চিন্তিত না।

আমাদের পরিচিত কয়েকজন ছোট ভাই আছে, যারা এইখানেই পড়ালেখা শেষ করে কোরিয়ান খুব ভালো ভালো কোম্পানিতে চাকরি করছে। ওদের কাছেও জানতে চেয়েছিলাম, কী অবস্থা ওদের অফিসে? কারণ ওদের সব কলিগই তো কোরিয়ান। আমরা কিছু না জানলেও ওরা অবশ্যই জানবে। সত্যি বলতে, ওরাও একই কথা বলল। সবকিছু স্বাভাবিক। চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই। অবাক হচ্ছেন, তাই না? কিন্তু সত্যিই তাই।

আর আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলব, খবরের কাগজে যেভাবে খবর দেখছি, বাস্তবে তার পুরোটাই উল্টো। কোন কিছুই আটকে নেই। অন্যসব দিনের মতো সব কিছু স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। এখন পর্যন্ত কেউই আতঙ্কে নেই। আমরা তো আরও প্ল্যান করছি, সামনের সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কোথায় ঘুরতে যাবো। আমি হয়তো বোঝাতে পেরেছি, এখন পর্যন্ত কতোটা স্বাভাবিক অবস্থা এইখানে।

বিশ্বব্যাপী কি খবর হচ্ছে, প্রেস-মিডিয়া কী বলছে, তা আমি জানি না। কারণ জানার প্রয়োজন বোধ করছি না এখনো। কেননা, আমি এইখানে কোন জটিল, আতঙ্কের, ভয় পাওয়ার কিছুই দেখছি না। সবার কাছেই সবকিছু স্বাভাবিক। তারপরও আশা করি, সব কিছু খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাক। যাতে করে আমাদের পরিবার-পরিজন, কাছের মানুষগুলো, আমরা যারা প্রবাসে আছি তাদের নিয়ে আর চিন্তিত  হতে না হয়।

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

ইমেইল:  Shajia.shila@yahoo.com

লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!