দেখলেই তো একটু হলেও ভয় চলে আসে নিজের অজান্তেই। হয়তো দক্ষিণ কোরিয়াতে এখন না বসবাস করলে এই ভয়টা আমার মধ্যে অনেক আগেই আসতো। আমরা পরিচিত যত জন আছি এখানে, তারা কেউই ভয় পাচ্ছি না। আসলে ভয় পাওয়ার মতো কোনও অবস্থা এখানে বিরাজ করছে না যে আমরা ভয় পাব।
আতঙ্কের প্রথম শুরু আমার কাছে ২০১০ সালে। আমি তখন বাংলাদেশেই ছিলাম। আর আতঙ্কের নাম ‘উত্তর কোরিয়া’। হঠাৎ করেই খবরের কাগজে দেখলাম যে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি যুদ্ধজাহাজ টর্পেডোর আঘাতে সাগরে ডুবে গেছে। এতে নাকি ৪৬ জন নাবিকের করুণ মৃত্যু হয়।
সকল সন্দেহের তীর তখন উত্তর কোরিয়ার দিকে। এই ইস্যু নিয়ে তখন দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যায় যায় অবস্থা। উত্তর কোরিয়া অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম, দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থানরত মানুষদের কী অবস্থা হবে- এই ভেবে। চিন্তা বেশি হবার কারণ হলো, তখন আমার হাজবেন্ড তার পিএইচডি করার জন্য দক্ষিণ কোরিয়াতেই ছিল।
কোরিয়ানদের মধ্যে প্রথমে ক্ষোভ থাকলেও, এখন কেউই নাকি এইসব নিয়ে মাথা ঘামানো তো দূরের কথা, এ ব্যপারে কেউ কথাও বলে না। শুনে আমরা অবাক! তখন আমাদের ওই কথাগুলো বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হয়েছিল। তারপর আমি আসার পরও এমন অবস্থা হয়েছিলো, কিন্তু সত্যি বলতে আমার কাছেও এইগুলা কোন কিছুই মনে হয়নি।
আসলে যাদের আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত মানুষজন দক্ষিণ কোরিয়াতে থাকে, স্বাভাবিকভাবেই তারা একটু হলেও চিন্তিত হবে। ঠিক এই চিন্তা থেকেই অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, কেমন আছি আমরা? সব ঠিক আছে নাকি?
সত্যি বলতে, আমরা যারা আছি এইখানে, তারা কিছুই টেরই পাই না। সব কিছু অন্যসব দিনের মতো সাধারণ। খবরের কাগজের সুবাদেই আমরা এইসব গম্ভীর খবর জানতে পারছি। অথচ খবরের কাগজের কথার সাথে আর আমাদের দিন কাটানোর মধ্যে কোন মিলই নেই। পুরো উলটো। খুবই স্বাভাবিক দিন যাচ্ছে সবার। এখনে তো পহেলা বৈশাখ আমেজটাও বাঙালিদের কাটেনি।
আমাদের পরিচিত কয়েকজন ছোট ভাই আছে, যারা এইখানেই পড়ালেখা শেষ করে কোরিয়ান খুব ভালো ভালো কোম্পানিতে চাকরি করছে। ওদের কাছেও জানতে চেয়েছিলাম, কী অবস্থা ওদের অফিসে? কারণ ওদের সব কলিগই তো কোরিয়ান। আমরা কিছু না জানলেও ওরা অবশ্যই জানবে। সত্যি বলতে, ওরাও একই কথা বলল। সবকিছু স্বাভাবিক। চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই। অবাক হচ্ছেন, তাই না? কিন্তু সত্যিই তাই।
আর আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলব, খবরের কাগজে যেভাবে খবর দেখছি, বাস্তবে তার পুরোটাই উল্টো। কোন কিছুই আটকে নেই। অন্যসব দিনের মতো সব কিছু স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। এখন পর্যন্ত কেউই আতঙ্কে নেই। আমরা তো আরও প্ল্যান করছি, সামনের সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কোথায় ঘুরতে যাবো। আমি হয়তো বোঝাতে পেরেছি, এখন পর্যন্ত কতোটা স্বাভাবিক অবস্থা এইখানে।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি
ইমেইল: Shajia.shila@yahoo.com
লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |