গোলাপ যেখানে জবা ফুলের মতো!

ভালোলাগা, ভালবাসার সাথে ফুলের খুব গভীর একটা সম্পর্ক আছে। আমার মনে হয়, আমরা সবাই কমবেশি ফুল উপহার পেয়েছি ও  দিয়েছি।

সাজিয়া শিলা, দক্ষিণ কোরিয়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2017, 05:53 AM
Updated : 2 July 2017, 05:53 AM

কোরিয়াতে যখন এসেছিলাম, তখন ছিল খুব ঠাণ্ডা। ফলে তখন এসেই ফুলের দেখা পাইনি। কিন্তু এয়ারপোর্ট, শপিং মলগুলোতে দেখেছি ফুলের সাজসজ্জা। তার কিছুদিন পরই দেখা মিললো চেরি ফুলের। যার কথা আমি আগে একটা আর্টিকেলে লিখেছিলাম।

চেরি ফুলের সময় চলে যাওয়ার কিছুদিন পরই শুরু হয় ফুলের উৎসবগুলো। সব ফুলগুলো ফুটতে শুরু করে মে মাস থেকেই। আর চলতে থাকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তারপর শুরু হয় শরৎকাল। ওই সময় তো কোরিয়া দেখতে আরও বেশি সুন্দর হয়।

শীত আগমনের আগে শরৎকালের প্রাকৃতিক দৃশ্য সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য থাকে। চারদিকের গাছের পাতা কমলা, হলুদ, লাল রঙের হয়ে যায়। কী যে সুন্দর লাগে, তা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো ভাষা আমার কাছে নেই!

আমার কাছে প্রথম দেখার সবকিছুই খুব বিশেষ। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থাকার সুবিধা হলো, সবকিছু খুব গুছানো, পরিপাটি। ফুল যখন ফুটতে শুরু করলো, তখন থেকেই খুব ছবি তুলেছি ফুলের সাথে। সব ফুলগুলোই তো আমার কাছে নতুন ছিল!

গোলাপি, লাল, বেগুনি, হলুদ, সাদা, কমলা ... যেন সব রঙগুলোর মেলা বসিয়ে রেখেছে। আমি তো দেখে আর ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারিনি। তাই যেখানেই ফুল দেখতাম, সেখানেই ছবি তোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে যেতাম।

পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জুড়েই রয়েছে ছোট ছোট বাগান, যা সাজানো হয়েছে খুব গোছানোভাবে। যেহেতু গোছানো, তাই দেখতে তো অবশ্যই সুন্দর। আযালিয়া, রডোডেনদ্রমস, হিবিস্কাস, বক্সউড, মাগ্নোলিয়া, ক্যমেলিয়া, টিউলিপ, কোরিয়ান মিন্ট, কসমস, ডেনডালিওন্স -এতো এতো ফুল, এতো নাম যে বলে শেষ করা যাবে না।

ফুলের বাগান দেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, কোনোভাবেই গাছ থেকে ফুল ছেঁড়া যাবে না। কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আমরা বাঙালিরা ফুল দেখে এতো খুশি হই যে, ফুল ছিঁড়ে হাতে না নিলে আমাদের ভালই লাগে না।

ফুল ছিঁড়ে কী মজা পাই আমরা? কিছুই না। বরং ফুলটা গাছে যতদিন বেঁচে থাকবে, দেখতে ভাল লাগবে। ছিঁড়ে ফেললে তার কোনটাই হবে না। হ্যাঁ, আপনি ফুলটা হাতে পেয়ে অনেক খুশি হবেন ঠিকই, কিন্তু এই খুশিটা কিন্তু খুব অল্প সময়ের জন্যই। ফুল যদি এতোই পছন্দ, তাহলে ফুলের দোকান থেকেই ফুল কিনে নিতে পারেন।

গরমকাল শুরু হওয়ার পর থেকে যেখানেই যাচ্ছিলাম, সেখানেই ফুল দেখছিলাম। অবশ্যই খুব পরিকল্পনা করে সাজানো-গুছানো। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে যেহেতু ঘরে বসে থাকি না, তাই যেখানেই কোন ফেস্টিভাল হয়, চলে যাই বেড়াতে।

যথারীতি ফুলের মৌসুমে অবশ্যই ফুল উৎসব বা ফ্লাওয়ার ফেস্টিভাল হয়। গরমের শুরুটাই হয় ‘রোজ ফেস্টিভাল’ দিয়ে। অসংখ্য গোলাপের সমাহার। থিম নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করে কোরিয়ানরা। গোলাপের ফেস্টিভালে গিয়েছিলাম ফুল দেখতে। অসংখ্য ফুলের মেলা, ফুল দিয়েই বানানো হয়েছে কোরিয়ান বৌ, ট্রেন, পশু অনেককিছু।

এইসব ফেস্টিভালগুলোতে শুধু ফুলই থাকে না, সাথে থাকে স্টেজ শো, পারফরমেন্স, রাতের বেলা আতসবাজির শো। রোজ ফেস্টিভালের আর একটা বিষয় আমার খুব ভাল লেগেছে, সেটা হচ্ছে- ফেস্টিভালের একটা বিশাল হল রুমের ভেতরে বিভিন্ন রকমের ফুলের দোকান রয়েছে। এগুলো আসলে ডিজাইনার ফ্লাওয়ার শপ।

দোকানগুলো প্রধানত ফোকাস করে তাদের বিশেষ ফুলের উপর। সেগুলো দিয়েই ফুলের ডিজাইনাররা অভিনব উপায়ে প্রদর্শন করে তাদের ফুলের ডিজাইন। কারো সাথে কারো মিল তো খুঁজে পাওয়া যাবেই না এবং দেখতেও সুন্দর তো অবশ্যই।

এগুলো ছাড়াও ক্যানোলা ফুলের উৎসব, ল্যাভেন্ডার ফুলের উৎসব-এসব তো আছেই। কিন্তু প্রতিটা ফুলের উৎসবই একেকটা থেকে একেকটা আলাদা। সবার ভালো লাগার মতো করেই পরিকল্পনা করা। আপনি কখনোই যে বিরক্ত হবেন না, এটা নিশ্চিত।

এখন বলি প্রচ্ছদের শিরোনামের কথা। কোরিয়াতে আসার পর অনেক বার ট্রেন ভ্রমণ হয়েছে। বুলেট ট্রেন এখানে খুব জনপ্রিয়। সাথে সাধারণ ট্রেনও খুব জনপ্রিয়। একটা ট্রেনের নাম হচ্ছে ‘মগুংহুয়া’। তখন আসলে জানতাম না, এর বাংলা মানে কী? পরে যখন জানতে পারলাম যে কোরিয়ানদের জাতীয় ফুলের নাম মগুংহুয়া, তখন বুঝলাম যে ওই ট্রেনের নামের মানে।

ইংরেজিতে বলা হয় ‘হিবিস্কাস রোজ’ আর কোরিয়ানরা বলে ‘রোজ অফ শ্যরন’। বাংলায় বললে গোলাপ। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই গোলাপ দেখতে একদম আমাদের দেশের গোলাপের মতো না। দেখতে অনেকটাই আমাদের দেশের জবা ফুলের মত।

পাঁচটা পাপড়ি নিয়ে হয় এই রোজ অফ শ্যরন। অথচ ওদের ক্যমেলিয়া ফুলটা দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের গোলাপের মতো। খুবই মজা পেয়েছিলাম দেখে। একেক দেশের একেক রকম নাম।

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

ইমেইল: shajia.shila@yahoo.com

ছবি কৃতজ্ঞতা: সাজিয়া শিলা ও শোয়েব

লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!