কোরিয়ার চিঠি: আমাদের দূতাবাসের সেবা

পাসপোর্ট অফিস, যেকোনো দূতাবাস, অভিবাসন অফিস- এগুলোর নাম শুনলেই বাংলাদেশি মাত্রই একটু হলেও হয়রানির ভয় এসে যায়।

সাজিয়া শিলা, দক্ষিণ কোরিয়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2017, 03:27 AM
Updated : 9 May 2017, 10:41 AM

দেশে পাসপোর্ট করা সত্যি একটা কষ্টকর ব্যাপার। সাথে ঝামেলা তো আছেই। আর দেশের দূতাবাসগুলোতেও মাঝে মাঝে খুব ঝামেলা পোহাতে হয় আমাদের। এসব ঝামেলার কথা মোটামুটি আমরা সবাই কম-বেশি জানি।

কিন্তু আজকে আমি বাংলাদেশের অফিসগুলোর কথা না, বরং দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থিত ‘বাংলাদেশ দূতাবাস’-এর সেবার অভিজ্ঞতা নিয়ে আপনাদের জানাবো।

দেশের বাইরে আমরা যারা থাকি তাদের পাসপোর্ট করার সুযোগটা আমরা দূতাবাস থেকেই পাই।

গত বছর আমার মেয়ের পাসপোর্ট করানোর জন্য গিয়েছিলাম বাংলাদেশ দূতাবাসে। শুধু একটা ফোন করে সিরিয়াল নিয়েছিলাম আমরা। যথারীতি নির্দিষ্ট দিনে আমরা আমাদের সময় অনুযায়ী চলে গিয়েছিলাম নির্দিষ্ট কাগজগুলো নিয়ে।

হালকা একটা ভয় কাজ করছিল আমার। কারণ এইখানে আসার পর আমার পাসপোর্টের মেয়াদ থাকায়, মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তখন পর্যন্ত যেতে হয়নি। কিন্তু অনেকের কাছ থেকেই জেনেছিলাম যে বাংলাদেশ দূতাবাসের কার্যক্রম খুবই ভালো। সত্যিই তাই!

যেহেতু আমাদের সিরিয়াল দেওয়া ছিল, তাই আগে থেকেই আমরা আবেদনপত্রটাও পূরণ করে নিয়ে গিয়েছিলাম। বেশ লোকসমাগম ছিল ওইদিন। আমাদের সিরিয়াল আসতে প্রায় ৩০ মিনিটের মতো লেগেছিল।

সিরিয়াল আসার পর আমরা কাগজগুলো জমা দিলাম। ওনারা দেখে নিলেন যে, সব ঠিক আছে কিনা। দূতাবাসের কাছেই ব্যাংকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দেওয়ার পরে আমাদের মেয়ের ছবি তোলার জন্য অপেক্ষা করতে বলা হলো।

তারপর ১০-১৫ মিনিট পরেই মেয়ের ছবি তোলার জন্য গেলাম। ছবি তোলা হয়ে গেলে আমাদের একটা স্লিপ দিয়ে দিলো। বলল- পাসপোর্ট আসলে ফেইসবুকে যে তাদের অফিসিয়াল পেইজ আছে, ওইখানে জানিয়ে দেওয়া হবে। তখন এসে নিয়ে যেতে হবে স্লিপ দেখিয়ে অথবা ডাকযোগে দূতাবাস থেকে সংগ্রহ করা যাবে। এক মাসের মতো সময় লাগতে পারে। ব্যাস, এইটুকুই!

আসলেও আমাদের কোনও ঝামেলা পোহাতে হয়নি। এমনকি সবার ব্যবহার এতো ভালো ছিল যে আমরা আসলেই ওইদিন অনেক ভালো মনে বাসায় ফিরেছিলাম, খুব ভাল একটা সেবা পেয়ে।

আমাদের প্রবাসীদের জন্য কিন্তু দূতাবাস অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এইখানে আমাদের যদি কোন সমস্যা বা বিপদ হয়, তাহলে সবার আগে আমাদের দূতাবাসই এগিয়ে আসবে। এক্ষেত্রে দূতাবাসের উপর আমাদের আস্থাটাই আসল।

তাদের আন্তরিকতার মাধ্যমেই কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি তারা কতোখানি প্রবাসীদের খেয়াল রাখছে। এটা বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে, কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সেবা দেওয়া এবং বাংলাদেশকে বিদেশের মাটিতে তুলে ধরার যে প্রয়াস তা সত্যিই প্রশংসনীয়।

সিউলে যতদিন ছিলাম তখন বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে যেসব অনুষ্ঠান, উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে, তার বেশ কয়েকটিতেই আমরা গিয়েছি।

বিদেশের মাটিতে নিজের দেশের সংস্কৃতির ছোঁয়া পাওয়ার আনন্দ হয়তো আমরা প্রবাসীরাই শুধু বুঝতে পারি।

আমি আমার একটা প্রবন্ধে একবার লিখেছিলাম- ‘আন্তর্জাতিক গ্লোবাল ভিলেজ ফেস্টিভালে’র কথা। এ উৎসবে বাংলাদেশ দূতাবাসও অংশ নিয়েছিলো। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের দেশকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, নিজেদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা সত্যিই অনেক বেশি গর্বের আমার কাছে।

ওই উৎসবে সব দেশের স্টলের সাথে বাংলাদেশের স্টলও ছিল। সেখানে আমাদের দেশের ঐতিহ্যগত অনেক জিনিসও ছিল। আমাদের সাথে দেখা হয়েছিল রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমানের সাথে। অনেকক্ষণ কথাও হয়েছে তার সাথে আমাদের। অসম্ভব ভালো লেগেছে তার অমায়িক এবং আন্তরিক ব্যবহার।

তবে এইসব অনুষ্ঠান ছাড়াও দূতাবাস থেকে আরও অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস যেকোনও জাতীয় দিবস, রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী, বাংলা নববর্ষ উদযাপন, যেকোনো আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিয়ে বাংলাদেশকে পুরো কোরিয়াতে তুলে ধরছে।

পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানটা একদম দেশের মতো করেই আয়োজন করা হয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে। সকালবেলা দেশিয় পোশাকে মঙ্গল শোভাযাত্রা দিয়ে শুরু হয় বাংলা নববর্ষ উদযাপন। তারপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খাওয়া-দাওয়া। বাংলা নববর্ষের শুভ যাত্রাটা বেশ ঘটা করেই বরণ করা হয়।

এখানকার দূতাবাসের সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয়টি হচ্ছে- তারা কোরিয়া প্রবাসীদের কনস্যুলার সেবা দেন সবসময়ই। এমনকি প্রতি মাসের একটা সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কনস্যুলার সেবা দেওয়া হয় এখানে। এতে সত্যিই অনেক বেশি উপকার হয় কর্মজীবীদের জন্য, যারা নাকি সপ্তাহের মধ্যে ছুটি নিতে পারে না। পুরো কোরিয়া ঘুরে ঘুরে প্রবাসীদের সেবাও বাংলাদেশ দূতাবাস নিয়মিত দিয়ে থাকে।

ধরুন, বেশ কয়েকজন প্রবাসী একটা সিটিতে আছেন। কিন্তু কোনো কারণে তারা সিউলে, দূতাবাসের কার্যালয়ে আসতে পারছেন না। কিন্তু তাদের আবার দূতাবাসে কাজও রয়েছে। সেক্ষেত্রে যদি ওই সিটি থেকে দূতাবাসে ইমেইলের মাধ্যমে আবেদন করা হলে দূতাবাস টিম কনস্যুলার সেবা দিতে ওখানে চলে যাবে।  অন্য কোনও দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস এমন সেবা দেয় কিনা, আমার সত্যিই জানা নেই!

সবশেষে এইটুকু বলতে চাই, আমাকে অনেকেই ইমেইলের মাধ্যমে জিজ্ঞেস করেছে, কোরিয়াতে পড়ালেখার ব্যপারে। আমি যতটুকু জানি সবাইকে জানানোর চেষ্টা করি। তবে কোরিয়াতে উচ্চশিক্ষার জন্য আসতে যারা আগ্রহী, তাদের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসের ফেইসবুক পেইজটা খুবই সাহায্য করবে।

যখনই কোন সরকারি স্কলারশিপ, অথবা যেকোনও সাধারণ স্কলারশিপের ঘোষণা হয়- তার বেশিরভাগ লিঙ্কগুলোই আপনি দূতাবাসের ফেইসবুক পেইজে পাবেন। আগ্রহীদের উপকারে আসবে চিন্তা করে সিউলের  বাংলাদেশ দূতাবাসের ফেইসবুক পেইজের লিঙ্কটা দিলাম-

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

ইমেইল: Shajia.shila@yahoo.com

ছবি কৃতজ্ঞতা: দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস

লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!