Published : 19 Sep 2022, 11:51 PM
যে গহনাগুলো অলংকৃত করতো রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে, তার শবযাত্রায় সেগুলো পরে অংশ নিতে দেখা গেল নাতবউ প্রিন্সেস অব ওয়েলস কেট মিডলটনকে।
সোমবার রাজকীয় আনুষ্ঠানিকতায় দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য হয়, যিনি সাত দশক যুক্তরাজ্যের রানি হয়ে ছিলেন।
শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে কেটের গলায় পরা মুক্তার হার এবং কানে পরা মুক্তার দুল এক সময় রানি নিজেই পরতেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের দৈনিক ডেইলি মেইল।
শবযাত্রার পুরো সময়টাতেই শোকার্ত থাকলেও সপ্রতিভ ছিলেন নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসের বড় ছেলের বউ কেট।
শোকের কালো পোশাকে যুবরাজ উইলিয়ামের পাশে ছিলেন কেট। দুই ছেলে-মেয়েও ছিল তার সঙ্গে।
কুইন কনসোর্ট ক্যামিলার সঙ্গে একই গাড়িতে চড়ে সন্তানদের নিয়ে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে পৌঁছান কেট। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ডাচেস অব কর্নওয়াল ক্যামিলা এর সঙ্গে একটি গাড়িতে চড়ে তারা শবযাত্রায় যোগ দেন।
রানির মৃত্যুর পর সদ্যই প্রিন্সেস অব ওয়েলস উপাধি পেয়েছেন কেট। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এই দম্পতিকে বেশ কয়েকবার জনসমক্ষে দেখা গেছে।
সাড়ম্বর শবযাত্রায় শোকগ্রস্ত মুখ
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শবযাত্রায় শামিল রাজ পরিবারের সদস্যদের চেহারা ছিল শোকে বিবর্ণ।
রয়টার্স লিখেছে, সাড়ম্বর এই শবযাত্রায় রাজকীয় আনুষ্ঠানিকতার জমক শোককে অনেকটাই ছাপিয়ে গেছে। তারপরও রানির ভাই-বোন ও সন্তানদের মুখচ্ছবি আর শরীরী ভাষায় শোকের প্রকাশ ছিল স্পষ্ট।
ব্রিটেনে শোক-ভালোবাসায় রানি এলিজাবেথকে শেষ বিদায়
এলিজাবেথের ছেলে রাজা তৃতীয় চার্লস এবং তার ছোট তিন ভাই-বোন অ্যান, অ্যান্ড্রু ও এডওয়ার্ড রানির কফিনবাহী গান ক্যারেজের ঠিক পেছনেই ছিলেন। গান ক্যারেজটি লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে কাছেই ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে বহন করে নিয়ে যায় রয়্যাল নেভির ১৪২ জন নাবিক।
এলিজাবেথের সন্তানদের পেছনেই ছিলেন রাজা চার্লসের দুই ছেলে উইলিয়াম ও হ্যারি এবং তাদের স্ত্রী ও পরিবাবের অন্য সদস্যরা। সবার পরনেই ছিল রাজকীয় ঐতিহ্যের শোকের পোশাক।
রাজা চার্লস ও যুবরাজ উইলিয়াম একই গাড়িতে ওয়েস্টমিনস্টার হলে পৌঁছান। প্রয়াত রানিকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে আসা হাজার হাজার মানুষ রাস্তার দুপাশে অবস্থান করছিল। রাজা চার্লস ও যুবরাজ উইলিয়ামকে দেখে হর্ষধ্বনি তোলে তারা।
তবে যে মুহূর্তে রানির শববাহী শকটটি নাবিকেরা হল থেকে বের করে অ্যাবির দিকে নিতে শুরু করেন তখন সবাই চুপ হয়ে যায়। রাজ পরিবারের সদস্যরা ব্যাগপাইপের ছন্দে মার্চ করে শবযাত্রায় শামিল হন।
চার্লস, অ্যান, এডওয়ার্ড ও উইলিয়াম আনুষ্ঠানিক সামরিক পোশাকে এলিজাবেথের কফিনকে স্যালুট জানান। তবে চার্লসের ভাই অ্যান্ড্রু ও উইলিয়ামের ভাই হ্যারি সামরিক সজ্জায় ছিলেন না, তারা শোকের কালো পোশাকে ছিলেন এবং স্যালুটে অংশ নেননি, কারণ দুজনেই এখন আর আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ পদবী বহন করছেন না।
মায়ের মৃত্যুর পরের ১১ দিনে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা ও রাজ অভিষেকের ধকলের পর এদিন রাজা চার্লসকে কিছুটা বিপর্যস্ত ও ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। টেলিভিশনের ক্যামেরার ক্লোজআপ শটে দেখা যায় রাজ পরিবারের সদস্যদের শোকে মলিন চেহারা।
কুইন কনসোর্ট ক্যামিলা, যুবরাজ উইলিয়ামের স্ত্রী কেট ও তাদের সন্তান জর্জ ও শার্লট এবং হ্যারির স্ত্রী মেগানও শোকে মুহ্যমান ছিলেন।
যখন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়, তখন রানির ছোট ছেলে এডওয়ার্ডকে কাঁদতে দেখা গেছে। অ্যাবিতে কফিন পৌঁছানোর পর চার্লসকে অপলক দৃষ্টিতে মায়ের কফিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়।
এরপর রাজ পরিবারের সদস্যরা সম্মিলিত যাত্রায় লন্ডনের গ্র্যান্ড সেন্টার এভিনিউ ধরে হাইড পার্ক কর্নারে পৌঁছান। সেখানে রানির কফিনকে শববাহী গাড়িতে তোলা হয় এবং উইন্ডসর প্রাসাদে নেওয়া হয়। সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
চার্লস, তার ভাই-বোন ও সন্তানেরা শববাহী গান ক্যারেজের পেছনে পদযাত্রা করেন। তবে তাদের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা গাড়িতে চড়ে এই শবযাত্রাকে অনুসরণ করেন।
দাদির শবযাত্রায় উইলিয়াম ও হ্যারিকে পাশাপাশি হাঁটতে দেখে অনেকেরই হয়ত ২৫ বছর আগে তাদের মা প্রিন্সেস ডায়নার শবযাত্রার কথা মনে পড়তে পারে। ওই সময়ও এভাবেই দুই ভাই পাশাপাশি হেঁটে গিয়েছিলেন।
২০২০ সালে হ্যারি ও তার স্ত্রী মেগানের রাজ পদবী ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় থেকে দুই ভাইয়ের মধ্যে কিছুটা দূরত্বের আভাস মিলছিল। তবে রানির মৃত্যুতে শোক যেন তাদের আবার এক করে দিল।