ইসলামাবাদ পুলিশ এবং পাঞ্জাব পুলিশের যৌথ একটি দল ইমরানকে গ্রেপ্তার করতে তার জামান পার্কের বাড়িতে হাজির হয়।
Published : 05 Mar 2023, 05:44 PM
তোষাখানা মামলায় আদালত থেকে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ লাহোরে তার বাড়ির সামনে রোববার সকাল থেকে অবস্থান নিলেও সমর্থকদের কারণে ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে না।
পাকিস্তানের ইংরেজি ভাষার দৈনিক ডন এর খবরে বলা হয়, রোববার সকালে ইসলামাবাদ পুলিশ এবং পাঞ্জাব পুলিশের যৌথ একটি দল ইমরানকে গ্রেপ্তার করতে তার জামান পার্কের বাড়িতে হাজির হলে তিনি ‘বাড়িতে নেই’ বলে তাদের জানানো হয়।
পুলিশ আসার আগেই ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর নেতা ফাওয়াদ চৌধুরি দলীয় কর্মীসমর্থকদের ইমরানের বাড়ির সামনে হাজির হওয়ার আহ্বান জানান।
সমর্থকরা পুলিশকে ইমরান খানের বাড়িতে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে। এদিকে, পুলিশ সতর্ক করে বলেছে, যারা পুলিশকে তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পুলিশের এই হুঁশিয়ারিতে ইমরান সমর্থকরা ভয় পাননি। তারা নেতাকে রক্ষায় জান বাজি রেখে লড়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। বলেছেন, ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হলে দেশজুড়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলো হবে।
অন্যদিকে, ইসলামাবাদ পুলিশ প্রধান সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা আজ খালি হাতে ফিরবেন না। তবে তিনি এমন কথা বললেও ইমরানকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
তার অবস্থান নিয়ে নানা কথাবার্তার মধ্যেই নিজের বাসভবন থেকে নেতাকর্মী সমর্থকদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে কয়েকঘণ্টার রহস্যের অবসান ঘটিয়েছেন ইমরান খান।
তিনি বলেছেন, “কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে কখনও মাথা নত করব না। আপনাদেরকেও কখনও তা করতে দেব না।”
তোষাখানা মামলার শুনানিতে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ইসলামাবাদের একটি সেশন আদালত ইমরানের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
ওই দিন ইমরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের কথা ছিল। কিন্তু একইদিনে আরো তিনটি মামলায় হাজির হতে হওয়ায় ইমরান আদালতে উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে তার আইনজীবী আদালতকে জানিয়েছিলেন।
এর আগে আরো দুইবার এ মামলায় অভিযোগ গঠনের দিন থাকলেও ইমরান উপস্থিত হতে ব্যর্থ হন। তৃতীয়বারও ইমরান অনুপস্থিত থাকায় অতিরিক্ত সেশন বিচারপতি জাফর ইকবাল তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত মামলার শুনানি স্থগিত করেন।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ রোববার বলেছেন, সরকারের ইচ্ছায় নয় বরং আদালতের নির্দেশে পুলিশ ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করতে গেছে।
তোষাখানা বিতর্ক:
তোষাখানা বিতর্ক শুরু হয় ২০২১ সালে, যখন জানা যায় ইমরান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবি রাষ্ট্রীয় তোষাখানা থেকে বিদেশি বিশিষ্টজনদের দেওয়া বিভিন্ন উপহার কিনে পরে সেগুলো বেশি দামে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন।
ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) তখন ক্ষমতায় ছিল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খানের পাওয়া উপহারের বিস্তারিত জানাতে ক্ষমতাসীন দলটি প্রথমে অনীহা প্রকাশ করেছিল; এতে পাকিস্তানের বৈদেশিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে দাবি করেছিল তারা।
১৯৭০ এর দশকে পাকিস্তানের সরকারি একটি বিভাগ হিসেবে তোষাখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বিভাগটি প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ও অন্যান্য বিশিষ্ট জনদের দেওয়া উপহার জমা রাখে।
তোষাখানার নিয়ম অনুযায়ী, সরকার ব্যবস্থায় থাকা সব ব্যক্তিতে তাদের পাওয়া সব উপহার অবশ্যই এই বিভাগে জমা দিতে হবে। তবে যারা এসব উপহার পেয়েছেন তারা পরে এগুলো কিনে নিতে পারবেন। কিনে নেওয়ার পর এসব উপহার বিক্রির বিষয়টি অবৈধ না হলেও অনেকেই এটিকে অনৈতিক বা নীতিগতভাবে ভুল বলে মনে করেন।
ইমরানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করা হয় তাতে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় থাকাকালে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জিনিসের ৫৮টি বাক্স উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন।
অভিযোগ দায়েরকারী পিএমএল-এনের মহসিন রানঝা জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী প্রত্যেক অর্থবছরের শেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার স্ত্রী ও তাদের ওপর নির্ভরশীলদের সব সম্পদ কমিশনের কাছে জমা দেওয়া বিবরণীতি ঘোষণা করার কথা।
কিন্তু তা না করায় ইমরান খানকে ‘অসৎ’ ঘোষণা করে পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী আজীবন সংসদীয় রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে অযোগ্য ঘোষণার আর্জি জানানো হয়েছিল।
তোষাখানা থেকে কেনা উপহারের বিষয়টি ইমরান ‘ভেবেচিন্তে’ লুকিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে; কিন্তু পরে ইমরান কমিশনকে বিস্তারিত না জানিয়ে শুধু স্বীকার করেন, সেগুলো তারা বিক্রি করে দিয়েছেন।
পাঁচ বছর আগে ঐতিহাসিক এক রায়ে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং পিএলএম-এন প্রধান নওয়াজ শরিফকে ‘অসৎ’ বলে ঘোষণা করে, এর ফলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি এবং তাকে আজীবন সংসদীয় রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয়।
তোষাখানার উপহার নিয়ে ইমরান মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছেন অভিযোগে গত বছর পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন-ইসিপি সংবিধানের ৬৩ (১) (পি) ধারা অনুযায়ী তাকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বচানে অযোগ্য ঘোষণা করে।
যা নিয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন পিটিআই নেতাকর্মীরা।
তোষাখানা মামলা: ইমরানের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা