তোষাখানা মামলা: ইমরানের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

চারটি ভিন্ন মামলায় ইসলামাবাদের ভিন্ন ভিন্ন আদালতে মঙ্গলবার উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল সাবেক এই পাক প্রধানমন্ত্রীর।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2023, 03:34 PM
Updated : 28 Feb 2023, 03:34 PM

তোষাখানা মামলার শুনানিতে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ইসলামাবাদের একটি সেশন আদালত।

এ নির্দেশের মাত্র কয়েকঘণ্টা আগে অবৈধ তহবিল ও সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক অন্য দুটো মামলায় জামিন পেয়েছিলেন ইমরান।

পাকিস্তানের ইংরেজি ভাষার দৈনিক ডন জানায়, মঙ্গলবার ইমরানের ইসলামাবাদের চারটি ভিন্ন ভিন্ন আদালতে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল।

তোষাখানা মামলায় মঙ্গলবার ইমরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের কথা ছিল। কিন্তু তার আইনজীবী আদালতের কাছে এদিন তার মক্কেলকে শুনানি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অবেদন করেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘আজ আমার মক্কেল ইমরান খানকে আরও কয়েকটি আদালতে উপস্থিত হতে হবে।”

তোষাখানা মামলায় এর আগে আরো দুইবার ইমরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার তারিখ পড়েছিল।

মঙ্গলবার ইমরান অনুপস্থিত থাকায় অতিরিক্ত সেশন বিচারপতি জাফর ইকবাল তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত মামলার শুনানি স্থগিত করেন।

তার পরপরই ইমরান ইসলামাবাদ হাই কোর্টে উপস্থিত হন। সেখানে তাকে একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আগামী ৯ মার্চ পর্যন্ত আগাম জামিন দেওয়া হয়। এছাড়া, এক সদস্যের হাই কোর্ট বেঞ্চ ইমরানকে জামানত হিসেবে এক লাখ রুপি জমা করার নির্দেশও দেন।

ইমরানের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার ওই মামলাটি করেন পিএমএল-এন এর মহসিন রানঝা।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ২১ অক্টোবর কনস্টিটিউশন অ্যাভিনিউতে ইসিপির বাইরে কেপি পুলিশের এজন সদস্য ইমরান খানের নির্দেশে তাকে গুলি করে ‘তার প্রাণনাশের চেষ্টা করে’।

তোষাখানা বিতর্ক:

তোষাখানা বিতর্ক শুরু হয় ২০২১ সালে, যখন জানা যায় ইমরান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবি রাষ্ট্রীয় তোষাখানা থেকে বিদেশি বিশিষ্টজনদের দেওয়া বিভিন্ন উপহার কিনে পরে সেগুলো বেশি দামে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন।

ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) তখন ক্ষমতায় ছিল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খানের পাওয়া উপহারের বিস্তারিত জানাতে ক্ষমতাসীন দলটি প্রথমে অনীহা প্রকাশ করেছিল; এতে পাকিস্তানের বৈদেশিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে দাবি করেছিল তারা। 

১৯৭০ এর দশকে পাকিস্তানের সরকারি একটি বিভাগ হিসেবে তোষাখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বিভাগটি প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ও অন্যান্য বিশিষ্ট জনদের দেওয়া উপহার জমা রাখে।

তোষাখানার নিয়ম অনুযায়ী, সরকার ব্যবস্থায় থাকা সব ব্যক্তিতে তাদের পাওয়া সব উপহার অবশ্যই এই বিভাগে জমা দিতে হবে। তবে যারা এসব উপহার পেয়েছেন তারা পরে এগুলো কিনে নিতে পারবেন। কিনে নেওয়ার পর এসব উপহার বিক্রির বিষয়টি অবৈধ না হলেও অনেকেই এটিকে অনৈতিক বা নীতিগতভাবে ভুল বলে মনে করেন।

ইমরানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করা হয় তাতে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় থাকাকালে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জিনিসের ৫৮টি বাক্স উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন।

অভিযোগ দায়েরকারী পিএমএল-এনের মহসিন রানঝা জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী প্রত্যেক অর্থবছরের শেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার স্ত্রী ও তাদের ওপর নির্ভরশীলদের সব সম্পদ কমিশনের কাছে জমা দেওয়া বিবরণীতি ঘোষণা করার কথা।

কিন্তু তা না করায় ইমরান খানকে ‘অসৎ’ ঘোষণা করে পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী আজীবন সংসদীয় রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে অযোগ্য ঘোষণার আর্জি জানানো হয়েছিল।

তোষাখানা থেকে কেনা উপহারের বিষয়টি ইমরান ‘ভেবেচিন্তে’ লুকিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে; কিন্তু পরে ইমরান কমিশনকে বিস্তারিত না জানিয়ে শুধু স্বীকার করেন, সেগুলো তারা বিক্রি করে দিয়েছেন।

পাঁচ বছর আগে ঐতিহাসিক এক রায়ে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং পিএলএম-এন প্রধান নওয়াজ শরিফকে ‘অসৎ’ বলে ঘোষণা করে, এর ফলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি এবং তাকে আজীবন সংসদীয় রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয়।

তোষাখানার উপহার নিয়ে ইমরান মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছেন অভিযোগে গত বছর পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন-ইসিপি সংবিধানের ৬৩ (১) (পি) ধারা অনুযায়ী  তাকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বচানে অযোগ্য ঘোষণা করে।

যা নিয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন পিটিআই নেতাকর্মীরা।

Also Read: ৫ বছর ভোটে নিষিদ্ধ ইমরান খান