৫ বছর ভোটে নিষিদ্ধ ইমরান খান

পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিকান্দার সুলতান রাজার নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি বেঞ্চ ইসলামাবাদে এই রায় ঘোষণা করে। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2022, 10:13 AM
Updated : 21 Oct 2022, 10:13 AM

রাষ্ট্রীয় উপহার তোষাখানায় জমা না দিয়ে বিক্রির অভিযোগে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পাঁচ বছরের জন্য পার্লামেন্ট সদস্য হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। 

পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিকান্দার সুলতান রাজার নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি বেঞ্চ শুক্রবার ইসলামাবাদে এই রায় ঘোষণা করে। 

ডন জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের এই রায়ের ফলে পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, দেশের মজলিস-ই-শুরার (পার্লামেন্ট) পাশাপাশি প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনেও ভোটে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকল না ইমরান খানের সামনে।    

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ওই রায় প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা ইসলামাবাদ হাই কোর্টে যাবে।

সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের বিক্ষোভে নামারও আহ্বান জানানো হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।

অগাস্টে পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজের (পিএমএলএন) একজন সদস্য ইমরানের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছিলেন। মামলার অভিযোগে তিনি বলেছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় তোষাখানা থেকে বিদেশি বিশিষ্টজনদের দেওয়া উপহার কিনলেও নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে সেগুলোর উল্লেখ করেননি।   

রায়ের লিখিত অনুলিপির অপেক্ষায় থাকা আইন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই রায়ের মাধ্যমে চলতি জাতীয় পরিষদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইমরানকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

এটি হলে জাতীয় পরিষদের সদস্য পদ হারাবেন তিনি এবং তার শূন্য আসছে উপনির্বাচন হবে।

রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পিটিআইয়ের নেতা ফাওয়াদ চৌধুরি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে ‘বিব্রতকর’ ও পাকিস্তানের জনগণের ‘মুখে চপেটাঘাত’ বলে মন্তব্য করেন। 

তিনি বলেন, “এই রায় শুধু ইমরান খানের ওপর হামলা নয়, এটি পাকিস্তানের সংবিধান ও জনগণের ওপরও একটি হামলা।”

এপ্রিলে পার্লামেন্টের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারানো ইমরান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি ও তার দলের বিরুদ্ধে আগে থেকে পুষে রাখা বিদ্বেষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিকান্দার সুলতান রাজা এ পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

তোষাখানা বিতর্ক  

তোষাখানা বিতর্ক শুরু হয় গত বছর, যখন জানা যায় ইমরান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবি রাষ্ট্রীয় তোষাখানা থেকে বিদেশি বিশিষ্টজনদের দেওয়া বিভিন্ন উপহার কিনে পরে সেগুলো কম দামে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন।

পিটিআই তখন ক্ষমতায় ছিল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খানের পাওয়া উপহারের বিস্তারিত জানাতে ক্ষমতাসীন দলটি প্রথমে অনীহা প্রকাশ করেছিল, এতে পাকিস্তানের বৈদেশিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে দাবি করেছিল তারা।   

১৯৭০ এর দশকে পাকিস্তানের সরকারি একটি বিভাগ হিসেবে তোষাখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বিভাগটি প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ও অন্যান্য বিশিষ্ট জনদের দেওয়া উপহার জমা রাখে।

তোষাখানার নিয়ম অনুযায়ী পাওয়া সব উপহার অবশ্যই এই বিভাগে জমা দিতে হবে। তবে যারা এসব উপহার পেয়েছেন তারা পরে এগুলো কিনে নিতে পারবেন। কিনে নেওয়ার পর এসব উপহার বিক্রির বিষয়টি অবৈধ না হলেও অনেকেই এটিকে অনৈতিক বা নীতিগতভাবে ভুল বলে মনে করেন। 

ইমরানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করা হয় তাতে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় থাকাকালে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জিনিসের ৫৮টি বাক্স উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন। 

অভিযোগ দায়েরকারী পিএমএলএনের মোহসিন নওয়াজ রানজা জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী প্রত্যেক অর্থবছরের শেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার স্ত্রী ও তাদের ওপর নির্ভরশীলদের সব সম্পদ কমিশনের কাছে জমা দেওয়া বিবরণীতি ঘোষণা করার কথা ছিল।

কিন্তু তা না করায় ইমরান খানকে ‘অসৎ’ ঘোষণা করে পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী আজীবন সংসদীয় রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে অযোগ্য ঘোষণার আর্জি জানানো হয়েছিল।

তোষাখানা থেকে কেনা উপহারের বিষয়টি ইমরান ‘ভেবেচিন্তে’ লুকিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে; কিন্তু পরে ইমরান কমিশনকে বিস্তারিত না জানিয়ে শুধু স্বীকার করেন, সেগুলো তারা বিক্রি করে দিয়েছেন।

পাঁচ বছর আগে ঐতিহাসিক এক রায়ে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং পিএলএমএন প্রধান নওয়াজ শরিফকে ‘অসৎ’ বলে ঘোষণা করে, এর ফলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি এবং তাকে আজীবন সংসদীয় রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয়।