কয়েকটি অপরাধে ক্ষমা পাওয়ায় সু চির সাজার মেয়াদ ৬ বছর কমবে বলে দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তার মুখপাত্র জানিয়েছেন।
Published : 01 Aug 2023, 04:57 PM
মিয়ানমারের সাবেক নেত্রী অং সান সু চিকে যে ১৯টি অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে পাঁচটিতে তাকে ক্ষমা করা হয়েছে বলে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে।
ওই ১৯ মামলায় সুচির মোট ৩৩ বছর কারাদণ্ড হয়েছিল। এখন কয়েকটি অপরাধে ক্ষমা পাওয়ায় তার সাজার মেয়াদ ৬ বছর কমবে বলে দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তার মুখপাত্র জাও মিন তুন মঙ্গলবার ইলেভেন মিডিয়া গ্রুপকে জানিয়েছেন।
শান্তিতে নোবেল জয়ী সু চিকে গত সপ্তাহে কারাগার থেকে রাজধানীর নেপিদোর একটি সরকারি বাড়িতে নিয়ে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। ২০২১ সালে সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করার পর থেকেই বন্দি আছেন সু চি। এরমধ্যে নির্জন কারাকক্ষে একবছর কাটিয়েছেন তিনি।
সামরিক বাহিনীর রাষ্ট্রীয় প্রশাসন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকেও কয়েকটি অপরাধের দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। তাকেও ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এতে তার মোট সাজার মেয়াদ চার বছর কমবে বলে জান্তা মুখপাত্র জানিয়েছেন।
যেসব অভিযোগে সু চি (৭৮) দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সেগুলোর সবই অস্বীকার করেছেন তিনি।
জান্তার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জ্ঞাত পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সু চি ও উয়িন মিন্ট, উভয়কেই বন্দি থাকতে হবে।
“তাকে (সু চি) গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি দেওয়া হবে না,” বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় নিজের পরিচয় গোপন রেখে বলেছেন তিনি।
বিশ্বের বহু দেশ, বিশেষকরে পশ্চিমা সরকারগুলো, সু চির নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে। পাশাপাশি সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমারজুড়ে শুরু হওয়া গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলন দমনে জান্তা যে রক্তাক্ত দমনপীড়ন চালিয়ে হাজারো মানুষকে গ্রেপ্তার করে বন্দি করে রেখেছে তাদেরও মুক্তি চেয়েছে তারা।
রয়টার্স জানিয়েছে, কূটনৈতিক একটি সূত্র এ ক্ষমাকে ‘লোকদেখানো পদক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করেছেন।
“প্রকৃত কিছু না করে এটি (শুধু) বিশ্ব সম্প্রদায়কে দেওয়া একটি সঙ্কেত,” নিজের পরিচায় প্রকাশ না করে বলেছেন তিনি।
মিয়ানমারের স্বাধীনতার নায়ক জেনারেল অং সানের মেয়ে সু চি সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনের কাণ্ডারি হয়ে উঠেছিলেন। আরও অনেককে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) । কয়েক দশকের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হলে ১৯৮৯ সালে তাকে প্রথম গৃহবন্দি করা হয়।
ফিরে আসতে পারবেন না, এই ভয়ে দেশ না ছাড়া সু চি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলেও তা গ্রহণ করতে নিজে যাননি। তার পক্ষ থেকে তার ছেলে সেসময় পুরস্কার গ্রহণ করেন। সু চির স্বামী ক্যান্সারে ভুগে ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে মারা যান, এর মধ্যে মিয়ানমারের নেত্রী তাকে আর দেখতেও যেতে পারেননি।
২০১০ সালে সু চি মুক্তি পাওয়ার পর মিয়ানমার এবং গোটা বিশ্বেই তা সাড়া ফেলেছিল। ২৫ বছরে মিয়ানমারে প্রথম অবাধ নির্বাচনে এনএলডি ব্যাপক ব্যবধানে জয়লাভ করলে ২০১৫ সালে সু চি দেশটির ‘ডি ফ্যাক্টো’ নেতায় পরিণত হন।
কিন্তু পরে মিয়ানমারে গণহত্যার অভিযোগের বিরুদ্ধে সু চি জাতিসংঘ ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) নিজ দেশের সামরিক কর্তৃপক্ষকে সমর্থন করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। ২০২১ সালের অভ্যুত্থানে সু চি ক্ষমতাচ্যুত হলেও মিয়ানমারে এখনও তিনি বেশ জনপ্রিয়।
আরও খবর: