আইএমএফের ঋণ পেতে চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি পাকিস্তান

তবে দুই পক্ষই কিছু সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নিতে একমত হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে একটি বেইল আউট চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়, খেলাপি হওয়া এড়াতে পারে পাকিস্তান।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2023, 05:16 AM
Updated : 10 Feb 2023, 05:16 AM

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকে কোনো চুক্তিতে পৌছাতে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান।

তবে দুই পক্ষই কিছু সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নিতে একমত হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে একটি বেইল আউট চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়, খেলাপি হওয়া এড়াতে পারে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, এই ঋণ চুক্তি নিয়ে নবম দফার আলোচনার জন্য গত ৩১ জানুয়ারি ১০ দিনের সফরে পাকিস্তানে এসেছিল আইএমএফের প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবার ছিল তাদের সফরের শেষ দিন।

পাকিস্তানের অর্থ সচিব হামেদ ইয়াকুব শেখ বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন,“ঋণের পূর্বশর্ত পূরণে কী কী করণীয় সে বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে। তবে স্টাফ লেভেল এগ্রিমেন্টের বিষয়ে পরে ঘোষণা দেওয়া হবে।”

শুক্রবার সকালে আইএমএফ এর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ঋণের পূর্বশর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে আগামী দিনগুলোতে পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের সাথে আরো আলোচনা হবে। তবে এবারের কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকের বিষয়বস্তু আইএমএফ এর পর্ষদ সভায় উঠবে না।

এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, পাকিস্তান সরকার আশা করেছিল, ঋণ পেতে ক্রমান্বয়ে সকল শর্ত পূরণে পাকিস্তানের সদ্দিচ্ছার কথা তারা আইএমএফ কর্মকর্তাদের বোঝাতে পারবে। কিন্তু সংস্থাটির প্রতিনিধি দলের দশ দিনের সফর শেষে বৃহস্পতিবার সেই আশা ভেস্তে যায়; স্টাফ লেভেল চুক্তি ছাড়াই শেষ হয় আলোচনা।

পাকিস্তানে আইএমএফের মিশন প্রধান নাথান পোর্টারের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার বারবার বৈঠক করেছেন। কিন্তু বেলআউটের শর্ত পূরণে আইএমএফকে পর্যাপ্ত ও বিশ্বাসযোগ্য আশ্বাস দিতে পারেননি তারা।

আইএমএফের কাছ থেকে ২০১৯ সালে সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য আবেদন করে তখনকার ইমরান খান সরকার। আইএমএফ তখন প্রাথমিক সম্মতিও দেয়। কিন্তু মহামারীর মধ্যে ওই ঋণের বিষয়টি আটকে যায়। এর মধ্যে পাকিস্তানে সরকার যায় বদলে।

মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবার ঋণ আলোচনা শুরু হলেও পাকিস্তান সরকার প্রাক শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় চূড়ান্ত চুক্তির বিষয়টি আটকে আছে।

সময়মত চুক্তি হলে ওই সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রথম কিস্তিতে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা ছিল আইএমএফ এর। এখন তা আর পাচ্ছে না পাকিস্তান।

Also Read: এক বছরে পাকিস্তানকে শোধ করতে হবে ২২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ

পাকিস্তান কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবশেষ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তাদের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নেমে এসেছে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে, যা দিয়ে তিন সপ্তাহের আমদানি ব্যয়ও মেটানো সম্ভব না।

এক্সপ্রেস ট্রিবিউন লিখেছে, আস্থার সংকটের কারণে এবার আইএমএফ পাকিস্তানকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করেনি। ঋণ ছাড়ে অনেক পূর্বশর্ত জুড়ে দিয়েছে। অচলাবস্থা ভাঙার জন্য প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এবং আইএমএফ মিশন প্রধান নাথান পোর্টারের মধ্যে একটি অনির্ধারিত ভার্চুয়াল বৈঠকও হয়েছে।

আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা শেষে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের আগেই মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জাতিকে সুসংবাদ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার। কিন্তু অগ্রগতির সিদ্ধান্তহীন আলোচনার কারণে সেই ব্রিফিং তাকে বাতিল করতে হয়। সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে শুক্রবার এই ব্রিফিং হতে পারে।

এদিকে আইএমএফের ঋণ ছাড়ের জন্য কী কী পূর্বশর্তে পাকিস্তান সম্মত হয়েছে সে ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানাননি অর্থসচিব। শুক্রবারের ব্রিফিংয়ে এ বিষয়গুলো জানানো হতে পারে।

রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে চলা পাকিস্তান চরম অর্থ সংকটে ধুঁকছে। দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ২০১৪ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে।

এ অবস্থার মধ্যে আইএমএফের ঋণ জরুরি পাকিস্তানের জন্য। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধে এক বছর অন্তত ২২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন দেশটির।

এক্সপ্রেস ট্রিবিউন লিখেছে, পাকিস্তানে আইএমএফের দল যখন সরকারকে ব্যয় কমানোর কথা বলে যাচ্ছিল, সেসময় প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ব্যস্ত ছিলেন তার মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে; মন্ত্রিসভায় সদস্য বাড়িয়ে ৮৫ জনে উন্নীতে করেছেন তিনি।

পাকিস্তান অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে বলেন, “আলোচনা শেষে পাকিস্তান যে চূড়ান্ত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে রাজি হয়েছে, তা স্টাফ লেভেল চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য আইএমএফ সদর দপ্তরের মেন্ডেটের তুলনায় সামান্য। এ ব্যাপারে এখন ওয়াশিংটনে ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সম্মতি লাগবে আইএমএফের মিশন টিমের, যে কারণে স্টাফ লেভেল চুক্তিতে পৌঁছাতে কিছুটা বিলম্ব।“

পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল বিদেশি অর্থায়নের অভাব, যা দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় এবং বাণিজ্যিক ঋণদাতাদের সাহায্য ছাড়া সম্ভব না। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, আইএমএফ সদস্যরা পাকিস্তানকে ঋণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গেও সাক্ষাত করেছেন।

চীন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত পাকিস্তানকে যে ঋণ দেওয়ার কথা বলেছে, সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বিষয়ে আশ্বাস খুঁজছিল আইএমএফ।

পাকিস্তানকে ২ হাজার কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি দেখছে সৌদি আরব। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ দাবি করেছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত আরো ১ হাজার কোটি ডলার দেবে।

সেইসঙ্গে বিদ্যমান ঋণ পুনর্গঠনের অনুরোধের পাশাপাশি আরো দেড় হাজার কোটি ডলার অতিরিক্ত ঋণ দিতে চীনকে অনুরোধ জানিয়েছে পাকিস্তান। যদিও চীন একের পর এক বাণিজ্যিক ঋণ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।