বাক স্বাধীনতার গলা টিপে ধরাই এই আইনের লক্ষ্য বলে অভিযোগ করেছে নানা মানবাধিকার গ্রুপ।
Published : 01 Feb 2024, 05:03 PM
শ্রীলাঙ্কায় বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়েছে বিতর্কিত ‘অনলাইন সেফটি অ্যাক্ট’। যে আইনের বলে দেশটির সরকার অনলাইনে প্রকাশ করা নানা কনটেন্টের উপর নজরদারি এবং প্রয়োজনে সেগুলো মুছে ফেলতে পারবে।
বাক স্বাধীনতার গলা টিপে ধরাই এই আইনের লক্ষ্য বলে অভিযোগ করেছে নানা মানবাধিকার গ্রুপ। অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কা কর্তৃপক্ষ বলছেন, এই আইন সাইবারক্রাইমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করবে।
আর সমালোচকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে বিরোধীদের দমনে এই আইনের প্রয়োগ করবে সরকার।
২০২২ সালে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কায় সরকারের বিরুদ্ধে যে গণআন্দোলন গড়ে উঠেছিল তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের। ওই গণআন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগে বাধ্য হয় তৎকালীন সরকার।
গত ২৪ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে ‘অনলাইন সেফটি অ্যাক্ট’ ১০৮-৬২ ভোটে পাস হয়। সেদিন পার্লামেন্টের বাইরে বহু মানুষ এই আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। বৃহস্পতিবার স্পিকার আইনটিতে অনুমোদন দেন।
বিস্তৃত এই আইনে ‘শ্রীলাঙ্কায় ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে মিথ্যা বিবৃতি, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার স্পষ্ট অভিপ্রায় নিয়ে করা পোস্ট’ এবং অনলাইনে ‘বট’ এর অপব্যবহার নিষিদ্ধ করা সহ আরো বেশকিছু বিষয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একটি বট একটি স্বয়ংক্রিয় সফ্টওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন যা একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলি সম্পাদন করে ৷
নতুন আইন বাস্তবায়নের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। যাদের নিয়োগ দিয়েছেন শ্রীলাঙ্কার প্রেসিডেন্ট। এই কমিশন অনলাইনে পোস্ট করা নানা কনটেন্ট মূল্যায়ন করবে এবং প্রয়োজনে সেগুলো মুছে ফেলার নির্দেশ দিতে পারবে। এমনকি তারা যেসব একাউন্ট থেকে ‘নিষিদ্ধ’ কনটেন্ট পোস্ট করা হয়েছে সেগুলোর মালিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারবে।
শ্রীলঙ্কার প্রচার নিরাপত্তামন্ত্রী তিরান অ্যালেস পার্লামেন্টে নতুন এই আইনটির খসড়া উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি বলেন, আনলাইনে প্রতারণার মাধ্যমে হওয়া অপরাধ দমন এবং দেশের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে এমন বিবৃতি প্রতিরোধে এই আইন জরুরি ছিল।
শ্রীলঙ্কায় গত বছর সাইবারক্রাইমের আট হাজারের বেশি অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নতুন আইন নিয়ে বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার গণতন্ত্রপন্থি একটি গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারের এই আইনকে ‘অটল অনুসরণ’ করা ‘বিরোধিতাকে নিরব করা এবং নাগরিক আন্দোলনকে দমন করার অভিপ্রায়ের স্পষ্ট ইঙ্গিত’। কারণ, শ্রীলঙ্কা এখনো দেশটির নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের পরিণতি ভুগছে।