নাভালনিকে চার বছর আগে বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়; সেই ঘটনা নিয়ে বানানো ডকুমেন্টারি ‘নাভালনি’ অস্কার পায়।
Published : 18 Feb 2024, 12:34 PM
বছর দুই আগে মুক্তি পাওয়া এক ডকুমেন্টারিতে আলেক্সি নাভালনির কিছু কথপোকথন এখন মর্মাহত করছে রাশিয়ার বিরোধী দলের কর্মীদের।
ওই সিনেমায় নাভালনিকে তার সম্ভাব্য হত্যার বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন পরিচালক; কিন্তু সেটি ‘সত্যিই ঘটবে’, তা হয়ত কেউ ধারণাও করেননি তখন।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক নাভালনিকে ২০২০ সালের অগাস্টে বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। সেই ঘটনা নিয়েই পরে ডকুমেন্টারি বানান কানাডিয়ান পরিচালক ড্যানিয়েল রোহার।
পরিচালক হয়ত অনুমান করেছিলেন, নাভালনিকে আবারো হত্যার চেষ্টা চালানো হতে পারে। সেই অনুমান থেকেই ডকুমেন্টারির শুরুতেই তিনি নাভালনির কাছে প্রশ্ন রাখেন, “তোমাকে যদি মেরে ফেলা হয়, রাশিয়ার জনগণের জন্য তোমার কী বার্তা রেখে যাবে?”
জবাবে হেসে নাভালনি উত্তর দিয়েছিলেন, “আরে ধুর, ড্যানিয়েল, মনে হচ্ছে আমাকে হত্যা করা হবে ধরে নিয়েই তুমি সিনেমা বানাচ্ছ।”
২০২২ সালের ১১ এপ্রিল ‘নাভালনি’ ডকুমেন্টারি মুক্তি পায়। পরের বছরের মার্চে অস্কারের ৯৫তম আসরে ‘বেস্ট ডকুমেন্টারি ফিচার’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পায় চলচ্চিত্রটি। আর এক বছর পর গত শুক্রবার রাশিয়ার এক কারাগারে পুতিনবিরোধী এই নেতার মৃত্যুর খবর দেয় দেশটির সরকার।
৪৭ বছর বয়সী নাভালনিকে রাখা হয়েছিল মস্কো থেকে ১ হাজার ৯০০ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে খার্প এর পেনাল কলোনির কারাগারে। মাইনাস ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রার সুমেরু বৃত্তের ‘আইকে-৩’ নামের সেই কুখ্যাত কারাগার সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন। ষাটের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনৈতিক বিরোধী ও বন্দিদের সেখানে রাখা হত।
কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, নাভালনি হাঁটার সময় ‘হঠাৎ অসুস্থ হয়ে’ পড়েছিলেন। হাসাপাতালে নিলেও তাকে ফেরানো যায়নি।
কিন্তু নাভালনির সমর্থকরা বলছেন, তাদের নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। রুশ কর্তৃপক্ষ ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ তার লাশ আটকে রেখেছে, যাতে আলামতগুলো তারা লুকাতে পারে।
নাভালনি রাশিয়ায় স্পষ্টতই বিপদের মুখে ছিলেন। তার মৃত্যুর খবরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন নাভানলি ডকুমেন্টারির পরিচালক, বন্ধু ড্যানিয়েল রোহার।
বিবিসিকে তিনি বলেন, “তার মৃত্যুর খবর শোনার পর আমি হতবাক হয়ে গেছি।”
ডকুমেন্টারির কাজ করতে গিয়ে কীভাবে নাভালনির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, সেই বর্ণনাও দেন পরিচালক রোহার।
তার ভাষ্য, “হাস্যরসের মধ্য দিয়েই আমাদের মধ্যে পরস্পরর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হয়েছিল। নাভালনি খুব মজার মানুষ। সে হাসতে পছন্দ করত। ১০ সেকেন্ডের সাক্ষাতকারেও সে আমাকে নিয়ে মজা করেছে।”
২০২০ সালের অগাস্টে রাশিয়ার একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে সাইবেরিয়ার তমস্ক থেকে রাজধানী মস্কো যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন নাভালনি। তার সমর্থকদের ধারণা, তমস্ক বিমানবন্দরে নাভালনি চা পানের আগে তার পানীয়তে বিষ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
অসুস্থ নাভালনিকে নিয়ে তার ফ্লাইট সাইবেরিয়ার ওমস্কে জরুরি অবতরণ করে। ওই শহরেরই একটি হাসপাতালে তাকে প্রথম চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। শেষমেষ কোমায় থাকা নাভালনিকে চিকিৎসার জন্য জার্মানির বার্লিনে নেওয়ার অনুমতি দেয় রুশ সরকার।
জার্মান সরকার তখন জানায়, নাভালনিকে সোভিয়েত-ধাঁচের বিষাক্ত রাসায়নিক নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগ করা হয়েছে। রাসায়নিক নার্ভ এজেন্ট নভিচকের শিকার হয়েছেন আলেক্সি নাভালনি।
তবে ক্রেমলিন ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে।
ওই ঘটনা নিয়ে ড্যানিয়েল রোহারের বাসানো ডকুমেন্টারির একটি দৃশ্যে রুশ গোয়েন্দা বাহিনী এফএসবির এক সদস্যকে ফোনে নাভালনিকে বলতে শোনা যায়, তমস্কের একটি হোটেলে নাভালনির অন্তর্বাসে রাসায়নিক মেশানো হয়েছিল।
কনস্ট্যান্টিন কুদ্রিয়াভতসেভ নামের সেই এজেন্ট বলেন, “নাভালনির বিমানটি জরুরি অবতরণ না করলে তিনি মারা পড়তেন।”
এরপরে সেই এজেন্টের ভাগ্যে ঠিক কী ঘটেছিল তা আর জানা যায়নি।
চলচ্চিত্রটির প্রযোজক শেন বরিস বলেন, “ওই ঘটনায় আমরা সবাই হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সেই ফোনকল যে এমন কিছু ফলাফল নিয়ে আসবে, তা কেউ ধারণা করেছিল বলে আমি মনে করি না।”
নাভালনির বিষক্রিয়ার পর তার সুস্থ হয়ে ওঠা এবং পরিবারের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো উঠে এসেছে ডকুমেন্টারিতে। রাশিয়ায় নাভালনির ফেরার দৃশ্যও দেখানো হয়েছে, যেখানে নেমেই গ্রেপ্তার হন তিনি।