সারা শরীর ধূসর ধুলায় আচ্ছাদিত, এক চোখ ফোলা, পানিশূন্যতায় ভুগছিলেন, তার দরকার তখন চিকিৎসকদের সেবা।
Published : 09 Feb 2023, 03:48 PM
আবদুলআলিম মুয়াইনি কংক্রিট ও ইটের বড় একটি স্ল্যাবের নিচ থেকে উঁকি দিয়ে উদ্ধারকারীদের উদ্দেশ্যে দুর্বলভাবে ইশারা করছিলেন। সেখানে আটকা পড়েছেন তিনি।
ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্কের হতাই প্রদেশে থাকা তার বাড়ি মাথার ওপর ভেঙে পড়ার পর দুইদিন পেরিয়ে গেছে। কাছেই নিথর হয়ে পড়ে আছে তার স্ত্রী এসরা। উদ্ধারকারীরা তার কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের আলোকচিত্রী উমিত বেকতাস বুধবারও দ্বিতীয় দিনের মতো হতাইয়ে ছিলেন।
সোমবার ভোরে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্কের যে কয়েকটি অঞ্চল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, হতাই তার একটি।
প্রদেশটির সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটিতে যেতে যেতে উমিত অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদের সেই প্রশ্নটিই করেন, আগেও যা অগণিতবার করেছেন তিনি।
“আপনারা কি কাউকে জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছেন?”
এবার এর ইতিবাচক জবাব পাওয়া গেল। কেননা, স্বেচ্ছাসেবকরা আবদুলআলিমকে জীবিত পেয়েছেন।
পা কংক্রিটের নিচে চাপা পড়ে থাকলেও তার জ্ঞান আছে এবং তিনি উদ্ধারকারীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন।
আবদুলআলিমের সঙ্গে সরাসরি কথা হয়নি উমিতের, তবে কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা তার দুই বন্ধুকে পেয়েছিলেন রয়টার্সের এ আলোকচিত্রী।
বন্ধুরা জানান, আবদুলআলিমের বাড়ি সিরিয়ার হোমসে। গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে তুরস্কে চলে আসেন, এরপর বিয়ে করেন তুর্কি নারী এসরাকে। তাদের দুই মেয়ে, মেহসেন ও বেসিরা।
তখনও মেয়েদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আবদুলআলিমকে উদ্ধারে দীর্ঘ সময় লাগে, কয়েক ঘণ্টা পর উমিত সেখানে ফিরে ঘটনাচক্রে তাকে (আবদুলআলিম) ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনাও দেখেন।
সারা শরীর ধূসর ধুলায় আচ্ছাদিত, এক চোখ ফোলা, পানিশূন্যতায় ভুগছিলেন, তার দরকার তখন চিকিৎসকদের সেবা। তবে তিনি বেঁচে ফিরেছেন।
যেটা পারেনি, পরিবারের অন্য সদস্যরা।
মাটিতে তখন কম্বলে ঢাকা তিনটি মৃতদেহ- এসরা, মেহসেন আর বেসিরার।
আরও পড়ুন:
ভূমিকম্প: ভাইকে বাঁচানোর চেষ্টায় ৩৬ ঘণ্টা আগলে রেখেছিল সিরীয় বোনটি