কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী।
Published : 07 Nov 2023, 10:01 AM
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ত্রাণ প্রবেশ ও জিম্মিদের প্রস্থানের সুযোগ দিতে গাজার লড়াইয়ে ‘কৌশলগত সামান্য বিরতি’ দেওয়ার কথা বিবেচনা করবে তার দেশ। কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন চ্যানেল এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি মনে করেন যুদ্ধের পর ‘অনির্দিষ্টকালের’ জন্য ফিলিস্তিনি ছিটমহলটির নিরাপত্তার দায়িত্ব ইসরায়েলের প্রয়োজন হবে।
লড়াইয়ে মানবিক বিরতির সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে নেতানিয়াহু বলেন, একটি সাধারণ যুদ্ধবিরতি তার দেশের যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র গাজার লড়াইয়ে মানবিক বিরতির ধারণা সমর্থন করেছে।
এবিসি নিউজকে নেতানিয়াহু বলেন, “যতদূর সম্ভব সেখানে এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টার জন্য কৌশলগত সামান্য বিরতি আমরা আগেও দিয়েছি। আমার অনুমান, যাতে পণ্য, মানবিক পণ্য ভেতরে আসতে পারে অথবা আমাদের জিম্মিরা, বিশেষ জিম্মিরা প্রস্থান করতে পারে তার জন্য আমরা পরিস্থিতি পরীক্ষা করবো। কিন্তু আমার মনে হয় না সেখানে সাধারণ যুদ্ধবিরতি হতে যাচ্ছে।”
ইসরায়েলে এবং গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস উভয়েই যুদ্ধবিরতি জন্য তৈরি হওয়া প্রবল আন্তর্জাতিক চাপ প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরায়েলের দাবি, আগে হামাসের হাতে বন্দি সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। আর হামাস বলছে, গাজায় হামলা চালানো বন্ধ না হলে তাদের মুক্তি দেওয়া হবে না আর লড়াইও থামানো হবে না।
৭ অক্টোবর ইসারায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসের হামলায় ১৪০০ জন নিহত হয়েছে আর আক্রমণকারীরা ২৪০ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে জিম্মি করে রেখেছে। ওই দিন থেকেই গাজা ভূখণ্ড অবরুদ্ধ করে ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে ব্যাপক বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরে তারা গাজায় স্থল আক্রমণও শুরু করে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ১০০২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, এদের মধ্যে ৪১০৪ জন শিশু।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জানাচ্ছে, এত মানুষ আহত হচ্ছেন যে হাসপাতালগুলো পাল্লা দিয়ে তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারছে না। তার মধ্যে গাজায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাবার ও পরিষ্কার পানির মারাত্মক অভাব দেখা দিয়েছে। ভূখণ্ডটিতে যে ত্রাণ সরবার করা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।
এ পরিস্থিতিতে গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি নিয়ে সতর্কবার্তা দিচ্ছেন।
সোমবার জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, “আমাদের অবিলম্বে একটি মানবিক যুদ্ধবিরতি দরকার। ৩০ দিন হয়ে গেল। অনেক হয়েছে। এবার এটি অবশ্যই বন্ধ করা দরকার।”
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার তুর্ক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস এবং জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথ এই বিবৃতিতে সাক্ষর করেছেন।
আরও পড়ুন:
শিশুদের কবরস্থান হয়ে উঠছে গাজা: জাতিসংঘ
গাজায় প্রাণহানি ১০ হাজার ছাড়িয়েছে, জানাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়