গত ১২ মাসে ভারতে খুচরা বাজারে চালের দাম সাড়ে ১১ শতাংশ বেড়ে গেছে বলে সরকার থেকে জানানো হয়। তার মধ্যে গত একমাসে দাম বেড়েছে ৩ শতাংশ।
Published : 20 Jul 2023, 10:55 PM
সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের উৎপান কম হয়েছে। তাতে স্থানীয় বাজারে বেড়ে গেছে চালের দাম। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাসমতি নয় এমন সব ধরনের সাদা চাল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ভারত।
বৃহস্পতিবার ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। বলা হয়, “ভারতের বাজারে বাসমতি নয় এমন সাদা চালের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে এবং অভ্যন্তরীন বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে ভারত সরকার নিজেদের রপ্তানি নীতিতে সংশোধন এনেছে।”
গত ১২ মাসে ভারতে খুচরা বাজারে চালের দাম সাড়ে ১১ শতাংশ বেড়ে গেছে বলেও সরকার থেকে জানানো হয়। তার মধ্যে গত একমাসে দাম বেড়েছে ৩ শতাংশ।
ভারতে এ বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে দেরিতে। গত মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশটিতে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফসলের, বিশেষ করে ধানের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মধ্য জুনের পর থেকে আবার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় তাও ফসলের জন্য ক্ষতিকারক হয়েছে।
বিশ্বে ৪০ শতাংশের বেশি চালের যোগান দেয় ভারত। ফলে দেশটি কোনো কারণে রপ্তানি হ্রাস করলেই বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়।
এছাড়া, দেশটিতে আগামী বছর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ সময়ে স্থানীয় বাজারে খাবারের মূল্য বৃদ্ধির মত সংবেদনশীল বিষয় এড়িয়ে যেতে চায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন সরকার।
চাল রপ্তানি অনেকটা হ্রাসের ঘোষণার পাশাপাশি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে গম রপ্তানির উপর ভারত যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সেটার মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণাও এসেছে। এ বছর দেশটি চিনি রপ্তানিও হ্রাস করেছে।
রাইস এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বি.ভি. কৃষ্ণা রাও রয়টার্সকে বলেন, “রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে ইউক্রেইন থেকে গম রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গমের বাজারে যতখানি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে, ভারতের চাল রপ্তানি বন্ধ করার ফলে চালের বাজারে তার থেকে অনেক বড় বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।”
বিশ্বে তিন কোটির বেশি মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। পানির উপর অনেকটা নির্ভরশীল এই ফসলটির ৯০ শতাংশ উৎপন্ন হয় এশিয়ার দেশগুলোতে।
এশিয়ায় এ বছর এল নিনো সক্রিয় থাকায় বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়েছে। বিশ্ববাজারে এরইমধ্যে চালের দাম গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থায় রয়েছে।
কৃষ্ণা রাও বলেন, “হঠাৎ করে রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ক্রেতাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক হবে। কারণ, তারা অন্য কোনো দেশ থেকেও চাল আমদানি করতে পারবে না।”
চাল উৎপাদনকারী বৃহৎ অন্য দুই দেশ থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামও ভারতের চাল রপ্তানি হ্রাসের ফলে যে শূন্যতার তৈরি হবে তা পূরণ করতে পারবে না।
ভারতের এই সিদ্ধান্তের ফলে আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও মনে করেন কৃষ্ণা রাও। অনেক দেশ দিল্লির কাছে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছে।