হাইতিকে সহায়তায় বহুজাতিক নিরাপত্তা মিশনের অংশ হিসেবে দেশগুলো বাহিনী পাঠাবে বলে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিভেন ডুজারিক জানিয়েছেন।
Published : 06 Mar 2024, 09:11 PM
সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাইতির পুলিশ বাহিনীকে সহায়তায় বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশ তাদের বাহিনী পাঠানোর আগ্রহের কথা জাতিসংঘকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে বলে খবর দিয়েছে রয়টার্স।
অন্য দেশগুলো হল- বাহামা, বার্বাডোস, বেনিন ও শাদ। জাতিসংঘ অনুমোদিত বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনের অংশ হিসেবে তারা বাহিনী পাঠাবে বলে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিভেন ডুজারিক বৃহস্পতিবার জানান।
মুখপাত্র বলেন, বহুজাতিক নিরাপত্তা মিশনের সহায়তায় ইতোমধ্যে ১ কোটি ৮ লাখ ডলারের একটি তহবিল করা হয়েছে। তহবিলে আরো ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক কোনো ভাষ্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।
রয়টার্স জানিয়েছে, ক্যারিবিয়ান দেশটির রাজধানী পর্তোপ্রাঁসের বেশিরভাগ এলাকা চলে গেছে অস্ত্রধারী দলগুলোর দখলে। তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বছর খানেক আগে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়েছিল ক্যারিবিয়ান দেশটির সরকার। এরপর গত অক্টোবরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ হাইতিতে বিদেশি নিরাপত্তা মিশনের অনুমোদন দেয়।
১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, ওই মিশনে অংশ নিতে আগ্রহী দেশগুলোকে জাতিসংঘের মাহসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে অবহিত করতে হবে। নিরাপত্তা পরিষদ ওই মিশনের অনুমোদন দিলেও সেটি জাতিসংঘ পরিচালিত কোনো অপারেশন বলে বিবেচিত হবে না।
রয়টার্স জানায়, এক বছর আগে হাইতি অনুরোধ জানালেও সহায়তা পেতে বিলম্ব হয় মূলত নিরাপত্তা মিশনের নেতৃত্বে কাউকে না পাওয়ার কারণে। গত বছর কেনিয়া ১ হাজার পুলিশ সদস্যকে পাঠানোর কথা জানালেও দেশটির স্থানীয় আদালত সেটিকে অসাংবিধানিক বলে আটকে দেয়।
কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো বলেছেন, হাইতি সরকারকে সহায়তার পদক্ষেপ তিনি এগিয়ে নেবেন। তবে কেনিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানায়নি।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিভেন ডুজারিক বলেন, বেনিন প্রায় দেড় হাজার সদস্য পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। বাকি চারটি দেশ কতজনকে পাঠাবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
জাতিসংঘ বলছে, হাইতির জনসংখ্যার অর্ধেক ৫৫ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। এর জন্য এ বছর ৬৭.৪ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছে। গতবছর হাইতির জনগণকে সহায়তা যে পরিমাণ অর্থ চেয়েছিল সংস্থাটি, সেই তুলনায় এক তৃতীয়াংশ পাওয়া গিয়েছিল বলে জানান হাইতির জন্য জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী উলরিকা রিচার্ডসন।
দুই আমেরিকা মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি ব্যাপক সহিংসতায় বিপর্যস্ত হয়ে আছে। কয়েক বছর ধরে সহিংসতা বাড়তে বাড়তে এখন গুরুতর পরিস্থিতি ধারণ করেছে। দেশটির সশস্ত্র জোটের নেতা জিমি শেরিজিয়ে (যিনি বারবিকিউ নামেও পরিচিত) প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরিকে ক্ষমতাচ্যুত করার শপথ নিয়েছেন।
রাজধানীর ৮০ শতাংশ এলাকা অপরাধী দলগুলোর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। বাকি অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারি বাহিনীগুলোর সঙ্গে অপরাধীদের ব্যাপক গোলাগুলি চলছে। বহু বাসিন্দা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী হেনরি বৃহস্পতিবার কেনিয়া সফরে গিয়ে দেশটির নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক নিরাপত্তা বাহিনী হাইতিতে মোতায়েন নিয়ে আলোচনা শুরুর পর পর্তোপ্রাঁসে ব্যাপক সহিংসতা শুরু হয়। অপরাধী জোটের নেতা শেরিজিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে একযোগে আক্রমণ চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
২০২১ সালে দেশের বাইরে থেকে আসা একদল ভাড়াটে সেনা হাইতির তৎকালীন প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করে। তারপর দেশটির ক্ষমতায় আসেন হেনরি। কিন্তু ওই সময় থেকেই হাইতিজুড়ে ব্যাপক সহিংতা ও বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশটিতে সহিংসতায় ৮৪০০ জন নিহত, আহত ও অপহৃত হয়েছে। আর সহিংসতার কারণে প্রায় তিন লাখ হাইতিবাসী নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।