মিশরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েল-ইসলামিক জিহাদ

যুদ্ধবিরতির খবরে সন্তোষ প্রকাশ করলেও কিছুদিনের মধ্যে ফের সংঘাত বেধে যাবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় আছে গাজার বাসিন্দারা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2023, 04:21 AM
Updated : 14 May 2023, 04:21 AM

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের সঙ্গে ইসরায়েলের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি শনিবার রাত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে।

২০২১ সালের ১০ দিনের যুদ্ধের পর গাজা সীমান্তের এপার-ওপারের মধ্যে হওয়া সবচেয়ে বাজে সংঘাতের অবসানের লক্ষ্যে মিশরের মধ্যস্থতায় এই চুক্তিটি হল।

যুদ্ধবিরতিতে দুই পক্ষের সংঘাত থেমে যাওয়ার পর বেশ কয়েকদিন জনশূন্য থাকা গাজার রাস্তাগুলোতে ফিলিস্তিনিদের সপ্রাণ উপস্থিতি দেখা গেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

সড়কে নেমে আসা ফিলিস্তিনিদের অনেকেই উল্লাসধ্বনি আর গাড়ির হর্ন বাজিয়ে যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন, অনেকে ছুটে গেছেন সংঘাতে নিহতদের বাড়িতে, শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।

“ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি পক্ষের মধ্যে হওয়া চুক্তির আলোকে দুই পক্ষ যে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে তা ঘোষণা করছে মিশর। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে তখন থেকেই বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলা বন্ধ, ঘরবাড়ি ধ্বংস ও সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে চালানো হামলা বন্ধসহ যুদ্ধবিরতির সবকিছু মেনে চলবে উভয় পক্ষ,” চুক্তিতে এমনটা লেখা আছে বলে দেখেছে রয়টার্স।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কাছ থেকে আসা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

“একপাশ ঠাণ্ডা থাকলে, অন্য পাশও ঠাণ্ডা থাকবে। কিন্তু যদি ইসরায়েলে হামলা হয় বা হুমকি দেওয়া হয়, তাহলে নিজেদের সুরক্ষায় যা করা দরকার, তা অব্যাহত রাখবে তেল আবিব,” বলা হয়েছে বিবৃতিতে।

চুক্তির খবর নিশ্চিত করেছে ইসলামিক জিহাদও।

“মিশরের ঘোষণা মেনে নেওয়ার কথা জানাচ্ছি আমরা। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত এই যুদ্ধবিরতি মেনে চলবো, যতক্ষণ পর্যন্ত দখলদাররা (ইসরায়েল) তা মানবে,” বলেছেন সশস্ত্র গোষ্ঠীটির মুখপাত্র দাউদ শিহাব।

এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি চূড়ান্ত করার সময়ও দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই অব্যাহত ছিল, রকেট হামলার সতর্ক সংকেত শোনা গেছে তেল আবিবের উপকণ্ঠ পর্যন্ত; ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানাচ্ছিল, রকেটের পাল্টায় তারাও ইসলামিক জিহাদ সংশ্লিষ্ট একাধিক লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে।

যুদ্ধবিরতির খবরে সন্তোষ প্রকাশ করলেও কিছুদিনের মধ্যে ফের সংঘাত বেধে যাবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় আছে গাজার বাসিন্দারা।

“আমরা চাই নীতির ওপর ভিত্তি করে যুদ্ধবিরতিটা হোক, অতীতের মতো নয়, যখন কিছু শান্ত সময়ের পর মানুষজন মারা পড়তে থাকে,” বলেছেন গাজার বাসিন্দা, ৪৩ বছর বয়সী মুনির মারুফ।

সর্বশেষ মঙ্গলবার ভোরের আগে বিমান হামলা চালিয়ে ইসরায়েল জানিয়েছিল, তাদের ভূখণ্ডে হামলার পরিকল্পনা করা ইসলামিক জিহাদের কমান্ডারদের লক্ষ্য করে তারা আঘাত হেনেছে।

এর পাল্টায় ইরান সংশ্লিষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হাজারের বেশি রকেট ছোড়ে, যা আতঙ্কগ্রস্ত ইসরায়েলিদেরকে বোমা থেকে বাঁচতে বানানো আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটতে বাধ্য করে।

সর্বশেষ ৫দিনের সংঘাতে ইসরয়েল ইসলামিক জিহাদের ৬ জ্যেষ্ঠ কমান্ডারকে হত্যা ও অনেকগুলো সামরিক স্থাপনা ধ্বংসের দাবি করেছে। এবারের সংঘাত নারী, শিশুসহ গাজার অন্তত ১০ বাসিন্দার প্রাণও কেড়েছে। ইসরায়েল লক্ষ্য করে ছোড়া ফিলিস্তিনিদের রকেটে এক ইসরায়েলি নারী ও এক ফিলিস্তিনি শ্রমিক মারা গেছে।

ইরানঘনিষ্ঠ ইসলামিক জিহাদ ইসরায়েলের সঙ্গে সহাবস্থানের ঘোর বিরোধী, তারা ইসরায়েলের ধ্বংস চায়। এদিকে ইসরায়েলের এখনকার ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী সরকারও ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে তেল আবিবের দখলে যাওয়া ভূখণ্ডের অংশ নিয়ে ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র বানাতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রত্যাখ্যান করেছে।