গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে রাশিয়ায় গ্রেপ্তার যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক ইভান গার্শকোভিচ গত ছয় বছর ধরে রাশিয়ায় কাজ করছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2023, 02:56 PM
Updated : 30 March 2023, 02:56 PM

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক ইভান গার্শকোভিচকে গ্রেপ্তার করেছে রাশিয়া।

গার্শকোভিচ (৩১) গত ছয় বছর ধরে রাশিয়ায় কাজ করছেন। তিনি রাশিয়া বিষয়ক একজন অভিজ্ঞ প্রতিবেদক।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মস্কো ব্যুরোর সাংবাদিক তিনি। এর আগে গার্শকোভিচ এএফপি এবং মস্কো টাইমসেও কাজ করেছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসেও তিনি কাজ করেছিলেন।

গার্শকোভিচকে রাশিয়ার চতুর্থ বৃহৎ নগরী ইয়েকাতেরিনবুর্গ থেকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় বিবিসি।

গ্রেপ্তারের পর তার নিরাপত্তা নিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের পক্ষ থেকে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগও দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে তার আশু মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।

যদিও ক্রেমলিনের দাবি, ওই প্রতিবেদককে ‘হাতেনাতে ধরা হয়েছে’।

রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি) এর পক্ষ থেকে বলা হয়, এই প্রতিবেদক ‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে রাশিয়া থেকে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য সংগ্রহ করছিলেন’।

‘‘আমরা তাকে গ্রেপ্তার করে তার ওই অবৈধ কার্যকলাপ আটকে দিয়েছি।”

এফএসবি-র হাতে আটক হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর গার্শকোভিচকে মস্কোর লেফোরতোভো জেলা আদালতে উপস্থাপন করা হয় এবং তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

গার্শকোভিচের আইনজীবী দাবি করেন, এদিন তাকে আদালতকক্ষে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

গার্শকোভিচকে উপস্থাপনের আগে আদালতকক্ষে বোমা থাকার হুমকির কথা বলে সেখান থেকে সব কর্মী ও দর্শণার্থীদের বের করে দেওয়া হয়েছিল বলে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা রিয়া খবর প্রকাশ করে।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েই গার্শকোভিচ মস্কো থেকে প্রায় ১৮শ কিলোমিটার পূর্বে নগরী ইয়েকাতেরিনবুর্গে কাজ করছিলেন বলে এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে এফএসবি।

বিবিসি জানায়, এ সপ্তাহে গার্শকোভিচ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে তার সর্বশেষ প্রতিবেদন পাঠান। ওই প্রতিবেদনে তিনি রাশিয়ার ক্রম-ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতি এবং কীভাবে ক্রেমলিনকে তাদের সমাজিক ব্যয় ঠিক রেখে ‘দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকা সামরিক ব্যয়’ এর মধ্যে সমন্বয় করতে হচ্ছে সেসব নিয়ে বিশ্লেষণ করেন।

কিন্তু এফএসপির দাবি, তিনি ‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য সংগ্রহ করছিলেন’।

গার্শকোভিচের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে এফএসবি থেকেও তদন্ত শুরু হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘‘এটি এফএসবি-র দায়িত্ব, তারা এরই মধ্যে  (গার্শকোভিচকে আটকের বিষয়ে) একটি বিবৃতি দিয়েছে।

‘‘আমি তার সঙ্গে শুধু একটি জিনিসই যোগ করতে পারি। এখন পর্যন্ত আমরা যেটুকু জেনেছি, তাকে হাতেনাতে পাকড়াও করা হয়েছে।”

রাশিয়ায় গুপ্তচরবৃত্তি গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ এবং দোষীসাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুতা বহু পুরনো। ১৩ মাস আগে শুরু হওয়া ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে যে শত্রুতায় তিক্ততা আরো বেড়েছে।

তবে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই রাশিয়ায় সাংবাদিকতা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ছিল। সেখানে একজন সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করা খুবই কঠিন।

কারণ, রাশিয়ায় ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিকদের ‘বিদেশি এজেন্ট’ বলে বিবেচনা করা হয়। যে কারণে বিবিসি’র রাশিয়া প্রতিনিধি সারাহ রেইন্সফোর্ডকে দেশ থেকে বিতাড়িত হতে হয়।

ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়া ‘ভুয়া খবর’ প্রচার এবং ‘রুশ সেনাবাহিনীর সম্মানহানি করে কোনো খবর প্রচার’ ফৌজদারি অপরাধ বলে আইন জারি করে। যে আইনের অধীনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউক্রেইনে রুশ আগ্রাসনের নিন্দা জানানোর কারণে দেশটির বেশ কয়েকজন নাগরিককে গ্রেপ্তার করে সাজা দেওয়া হয়েছে।

রাশিয়ায় স্বাধীন সব সংবাদমাধ্যম হয় নিরব হয়ে আছে, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। যার মধ্যে টিভি রেইন, ইকো অব মস্কো রেডিও এবং নোভায়া গাজেতা পত্রিকাও রয়েছে।

পশ্চিমা অনেক সংবাদ মাধ্যম রাশিয়া ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। রাশিয়ার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ তাৎইয়ানা স্তানোভায়া বলেন, তিনি গার্শকোভিচের গ্রেপ্তারে হতবাক হয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘‘এফএসবি যেটিকে ‘গোপন তথ্য সংগ্রহ’ বলে বর্ণনা করেছে, সেটা সহজ কথায় বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে মতামত গ্রহণ। আর ‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশ’ বলতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে গার্শকোভিচের সম্পাদককে বোঝানো হয়েছে।”

অন্যদিকে, রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের কর্মী ইয়েকাতেরিনবুর্গে যা করছিলেন সেটা ‘কোনোভাবেই সাংবাদিকতা নয়’।

তিনি বলেন, ‘‘বিদেশি প্রতিবেদকের আড়ালে যেসব কার্যক্রম চালানো হয় তা কোনোভাবেই সাংবাদিকতা নয় এবং এমনও নয় যে, এটা এই প্রথমবার ঘটেছে।”

রাশিয়ায় আরো বেশ কয়েকজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আটক আছেন।

তার মধ্যে ইউক্রেইনে আগ্রাসণ শুরুর মাত্র কয়েকদিন আগে আমেরিকার বাস্কেটবল তারকা ব্রিটনি গ্রিনারকে মস্কো বিমানবন্দরে আটক করে গাজা বহনের অপরাধে দোষীসাব্যস্ত করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

১০ মাস আগে রাশিয়ার কুখ্যাত অস্ত্র ব্যবসায়ী ভিক্তোর বউৎ এর সঙ্গে বন্দিবিনিময়ে গ্রিনারকে মুক্ত করা হয়। গ্রিনারের পর গার্শকোভিচই হাই-প্রোফাইল আমেরিকান যাকে রাশিয়া গ্রেপ্তার করেছে।