মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের ১,৬৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের দুই পাশের বাসিন্দারা এফএমআর চুক্তির অধীনে ভিসা ছাড়াই যাতায়াত এবং সর্বোচ্চ ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থান করতে পারে।
Published : 02 Mar 2024, 09:15 PM
জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে ভারতের কেন্দ্র সরকার মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া তৈরির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে মিজোরামের স্থানীয় সরকার।
মিজোরামের ৪০ সদস্যের বিধানসভায় গত বুধবার এ সংক্রান্ত একটি রেজ্যুলেশন পাস হয়। মিজোরামের গৃহমন্ত্রী কে. সপডাঙ্গা স্থানীয় আইনসভায় ওই রেজ্যুলেশনটি উত্থাপন করেন।
যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার এবং ওই সিদ্ধান্তের পরিবর্তে এমন একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে যাতে জো জাতিগোষ্ঠীর লোকজন কোনো ধরণের সীমান্ত বেড়ার বিভেদ ছাড়াই নিজেদের আদিভূমিতে মিলেমিশে বসবাস করতে পারে।
মিজোরামের সংখ্যাগুরু মিজোস, মণিপুরের কুকি-জোমিস, মিয়ানমারের চিন এবং বাংলাদেশের কুকি-চিন সম্প্রদায়ের লোকজনরা সবাই আদিবাসী জো জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্গত।
বিধানসভায় গৃহমন্ত্রী সপডাঙ্গা বলেন, “ব্রিটিশরা ভৌগোলিকভাবে জো জাতিগোষ্ঠীর জনগণকে বিভক্ত করেছে। যারা (বর্তমানে) মিজোরাম এবং মিয়ানমারের চিন পাহাড়ে কয়েক শতাব্দী ধরে বসবাস করে আসছে এবং এক সময় তারা তাদের নিজস্ব প্রশাসনের অধীনে চলতো। আমরা আমাদের পুনর্মিলনের স্বপ্ন দেখি এবং আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত মেনে নিতে পারছি না।”
এফএমআর বর্জনের যে সিদ্ধান্ত কেন্দ্র সরকার নিয়েছে সেটাও কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয় বলে যোগ করেন তিনি।
মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের ১,৬৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম (এফএমআর) চুক্তির অধীনে দুই দেশের লোকজন সীমান্তের অপরপ্রান্তে সর্বোচ্চ ১৬ কিলোমিটার ভেতর পর্যন্ত বিনাবাধায় যাতায়াত এবং সীমিত সময়ের জন্য অবস্থান করতে পারে। এজন্য তাদের ভিসার প্রয়োজন হয় না।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের কেন্দ্র সরকারের স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ভারত-মিয়ামার সীমান্তে বেড়া দেওয়া হবে। তার দুইদিন পর তিনি বলেন, “দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখতে এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর জনসংখ্যা কাঠামো ঠিক রাখতে এফএমআর চুক্তিও বাতিল করা হবে।”
গত বছর মে মাস জুড়ে ভারতের মণিপুর রাজ্যে সংখ্যাগুরু মেইতেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংখ্যালঘু কুকি-জোমি সম্প্রদায়ের ভয়াবহ দাঙ্গার পর রাজ্য সরকারের নিরাপত্তার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মোদী সরকার সীমান্ত বেড়া নির্মাণ এবং এফএমআর চুক্তি বাতিলের এ সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানায় দ্য হিন্দু ডটকম।
এ বিষয়ে সপডাঙ্গা বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা সীমান্ত বেড়া নির্মাণ এবং এফএমআর বাতিলের অজুহাত হতে পারে না।
বলেন, “যদি কেন্দ্র সরকার জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে এতটাই উদ্বিগ্ন থাকে তবে তাদের উচিত ভূটান ও নেপালের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্তে বেড়া নির্মাণ করা।”
এই দুই দেশের নাগরিকরা কোনো ধরণের ভিসা বা কাগজপত্র ছাড়াই ভারতে ভ্রমণ করতে পারে।
ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া নির্মাণ করলে এবং এফএমআর চুক্তি বাতিল করলে দুই দেশের সীমান্তে এপার-ওপারে বাস করা জাতিগতভাবে সম্পর্কিত মানুষজন মানসিক এবং আর্থিক উভয়ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও মনে করেন সপডাঙ্গা।
দীর্ঘ আলোচনার পর গত বুধবার মিজোরামের বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে যখন রেজ্যুলেশনটি পাস হয় তখন মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা এবং বিরোধীদলীয় নেতা লালছন্দামা রলতে উপস্থিত ছিলেন।
মিয়ানমার সীমান্তে ভারতের যে চারটি রাজ্য রয়েছে তার মধ্যে মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ড কেন্দ্র সরকারের সীমান্ত বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। আর মণিপুর এবং অরুণাচল প্রদেশ রাজ্য সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।