‘আইপিএলের চেয়ে বিশ্বকাপ অনেক আলাদা’- বললেন তরুণ এই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান, অস্ট্রেলিয়া দলে জায়গা অর্জন করতে আরও অনেক কিছু করতে হবে, এটাও জানেন তিনি।
Published : 07 May 2024, 11:12 AM
আইপিএলে এমনই ঝড় তুলেছেন জেইক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক, তাকে বিশ্বকাপ দলে না রাখাতেই এখন চলছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে ঝড়। তবে তিনি নিজে শান্তই আছেন। আইপিএলের চেয়ে বিশ্বকাপ যে অনেক আলাদা, এটা তিনি জানেন। তাই দলে জায়গা না পাওয়ার আক্ষেপ বা হতাশা তার নেই। তরুণ এই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানের উপলব্ধি, অস্ট্রেলিয়া দলে জায়গা অর্জন করার মতো যথেষ্ট কিছু এখনও তিনি করতে পারেননি।
অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দলে জায়গা না পাওয়াদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি নাম স্টিভেন স্মিথ ও এই ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক। তবে অভিজ্ঞ স্মিথের বাদ পড়া যতটা স্বাভাবিক মনে করা হচ্ছে, অনেকের কাছে ততটাই অস্বাভাবিক ফ্রেজার-ম্যাকগার্কের না থাকা। এখনও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে পারেননি ২২ বছর এই বয়সী ব্যাটসম্যান। কিন্তু বিগ ব্যাশ ও আইপিএলে যা করেছেন, তার বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত ধরে নিয়েছিলেন অনেকে।
গত অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া একদিনের ম্যাচের টুর্নামেন্ট মার্শ কাপে ২৯ বলে সেঞ্চুরি করেন ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক। যা ‘লিস্ট এ’ ক্রিকেটে তো বটেই, স্বীকৃত ক্রিকেটেই দ্রুততম সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড। এরপর বিগ ব্যাশে তিনি ২৫৭ রান করেন ১৫৮.৬৪ স্ট্রাইক রেটে। দেশের বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে অভিষেকেই ঝড়ো ফিফটি করেন আইএল টি-টোয়েন্টিতে। গত ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুটি ওয়ানডে ম্যাচও খেলে ফেলেন তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। অভিষেক ম্যাচে একটি করে ছক্কা ও চার মেরে আউট হয়ে গেলেও পরের ম্যাচে করেন ১৮ বলে ৪৩ রান।
এখন তিনি তাণ্ডব চালাচ্ছেন আইপিএলে। নিলামে দল না পেলেও পরে বদলি হিসেবে দিল্লি ক্যাপিটালসে সুযোগ পাওয়া ব্যাটসম্যান ১৫ বলে ফিফটি করেছেন দুই ম্যাচে। এর একটিতে করেছেন ২৭ বলে ৮৪। আসরে এখনও পর্যন্ত ছয় ইনিংস খেলে তিন ফিফটিতে ২৫৯ রান করেছেন তিনি ২৩৩.৩৩ স্ট্রাইক রেটে।
তবে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলে যে হুট করে জায়গা আদায় করা কঠিন, সেটা তিনি ভালোভাবে বোঝেন বলেই জানালেন ‘উইলো টক’ পডকাস্ট-এ।
“আমার সঙ্গে যোগাযোগটা ছিল খুবই ভালো ও স্বচ্ছ। (দলে না থাকার) ব্যাপারটি দুই দিক থেকে দেখতে পারি। প্রথমত ভাবতে পারি যে, ‘দলে থাকার যোগ্যতা প্রমাণের জন্য এসব কিছু আমি করেছি…।’ আবার এটাও ভাবতে পারি যে, ‘মাস দেড়েক আগে তো আমি দৃশ্যপটেই ছিলাম না!’ তারা সম্ভবত মাস দেড়েক আগেই স্কোয়াডের একটি সম্ভাব্য ছবি এঁকে ফেলেছিলেন।”
অস্ট্রেলিয়ার তারকায় ঠাসা ও বিধ্বংসী ব্যাটিং লাইন আপে তাকিয়ে ফাঁকা জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক নিজেও।
“এটাও বুঝতে হবে যে, দলে জায়গা বের করা কঠিন। ডেভিড ওয়ার্নার আছেন সেখানে, তিন সংস্করণ মিলিয়ে আমাদের সর্বকালের সেরা ওপেনার। ট্রাভিস হেড আছেন, এখানে (আইপিএলে) তিনি জ্বলে উঠেছেন এবং গত দেড় বছর ধরেই দারুণ উজ্জ্বল। এরপর আছেন মিচ মার্শ, তিনিও একইরকম এবং দলের অধিনায়কও।”
“পাঁচ বা ছয় নম্বরেও নিজেকে ব্যাটিংয়ে দেখছি না আমি, কারণ টিম ডেভিড, ক্যামেরন গ্রিন ও এই ধরনের ব্যাটসম্যান দিয়ে জায়গাটি মোটামুটি থিতু। সুযোগ না পাওয়ার ব্যাপারটি তাই এভাবেই দেখি। কোনো সমস্যা নেই। আশা করি, আরও অনেক সময় পড়ে আছে সামনে।”
বিশ্বকাপে দলের সঙ্গী হওয়ার সুযোগ এখনও অবশ্য শেষ হয়ে যায়নি ফ্রেজার-ম্যাকগার্কের। মূল স্কোয়াডে না হলেও রিজার্ভ হিসেবে নেওয়া হতে পারে কয়েকজনকে। সেখানেই নিজের নাম আশা করছেন তিনি।
“সফরসঙ্গী রিজার্ভ হিসেবে যদি একটি জায়গা পেয়ে যাই, তাহলে দারুণ হবে। ওখানে গিয়ে ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারব। এটা (জায়গা না পাওয়া) আমাকে খুব একটা ভাবায়নি, কারণ আমি এখনও এমন কিছু করিনি যে মনে হতে পারে, দলে জায়গা অর্জন করে নিতে পারি। আইপিএল ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের চেয়ে বিশ্বকাপ অনেক বেশি আলাদা।”
আইপিএলে ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক কোচ হিসেবে পেয়েছেন তার স্বদেশি কিংবদন্তি রিকি পন্টিংকে। সাবেক এই অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক মাস তিনেক আগেই বলেছিলেন, যত দ্রুত সম্ভবত সব সংস্করণে জাতীয় দলে নেওয়া উচিত ফ্রেজার-ম্যাকগার্ককে।
তরুণ এই ব্যাটসম্যান জানালেন, আইপিএলে তার জ্বলে ওঠার পেছনে বড় ভূমিকা আছে পন্টিংয়ের পরামর্শের।
“আমাকে তিনি (পন্টিং) যা বলেছেন, একদম হৃদয়ে গেঁথে গেছে, তা হলো, ‘তুমি যখন শতভাগ দিয়ে বলে হিট করো, এর চেয়ে বল আরও অনেক বেশি দূরে যায় যখন শতকরা ৮০ ভাগ দিয়ে হিট করো। তোমাকে স্রেফ মাঝব্যাটে লাগাতে হবে, এতেই ছক্কা হয়ে যাবে।’ আমার মনে হলো, দারুণ ব্যাপার তো! কারণ বেশি জোরে মারতে গেলে আমার মাথা নড়ে যায়।”
“সাম্প্রতিক কিছু ম্যাচের ফুটেজ দেখলাম এবং তিনি আসলেই ঠিক বলেছেন। বেশি জোরে মারার চেষ্টা করলেই আমার মাথার অবস্থান নড়ে যাচ্ছে। আমাকে গোটা দুই সেশন ব্যাট করতে দেখেই যিনি এরকম ছোট ছোট ব্যাপার তুলে ধরছেন, আমি নিজেও হয়তো যা খেয়াল করিনি… এই ব্যাপারটিই আমাকে মুগ্ধতায় ভাসিয়ে দিয়েছে। এরপর ট্রেনিংয়ে সবসময় তার কথামতোই চেষ্টা করেছি এবং তা দারুণভাবে কাজে দিচ্ছে।”