২০২২ সালে নিউ ইয়র্কের এক আর্টস ইনস্টিটিউটের মঞ্চে ছুরি হামলার ঘটনার পর এবারই প্রথম এ দুইজনকে এক স্থানে দেখা গেল।
Published : 12 Feb 2025, 03:26 PM
ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি নিউ ইয়র্কের আদালতে তাকে হত্যাচেষ্টার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ধীরস্থিরভাবে কথা বলেছেন, মাঝে মাঝে মৃদু রসিকতাও করেছেন।
ভারতে এক কাশ্মীরি মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া এই ঔপন্যাসিক মঙ্গলবার আদালতে অভিযুক্ত হাদি মাতারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে যান। ২০২২ সালে নিউ ইয়র্কের এক আর্টস ইনস্টিটিউটের মঞ্চে ছুরি হামলার ঘটনার পর এবারই প্রথম এ দুইজনকে এক স্থানে দেখা গেল।
দ্বিতীয় মাত্রার হত্যাচেষ্টা ও হামলায় অভিযুক্ত ২৬ বছর বয়সী মাতার অবশ্য নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, মঙ্গলবার ৭৭ বছর বয়সী রুশদি গাঢ় স্যুট, সাদা শার্ট ও ধুসর রঙা টাই পরে আদালতে হাজির হন। এসময় নিজের আইনজীবী দলের সঙ্গে বসে ছিলেন মাতার, তার পাশে সতর্ক প্রহরায় ছিলেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
রুশদির চশমার ডান লেন্সটি কালো রঙ করা ছিল, যা তার সেই চোখ ঢেকে রেখেছিল, যেখানে হামলাকারীর ছুরি অপটিক নার্ভ পর্যন্ত পৌঁছেছিল।
“সে যে ডানদিক থেকে দৌড়ে আমার দিকে আসছে আমি তা বুঝতে পেরেছিলাম.” ২০২২ সালের ১২ অগাস্ট যে শাটাকোয়া ইনস্টিটিউটে তিনি হামলার শিকার হন, তার কয়েক মাইল উত্তরে অবস্থিত মেভিলের আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে বলেন রুশদি।
দীর্ঘদিন কট্টরপন্থি মুসলিমদের দেওয়া মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ঘোরা আলোচিত-সমালোচিত লেখক রুশদি হামলার দিন সকালে ইনস্টিটিউটের বাইরে এম্ফিথিয়েটারের মঞ্চে বসে অপেক্ষা করছিলেন, কখন ডাক পড়বে লেখকদের সুরক্ষিত রাখা নিয়ে কথা বলতে।
“সে আমাকে খুব জোরে আঘাত করে। প্রথমে ভেবেছিলাম, সে বোধহয় ঘুষি মেরেছে। আমার মনে হয়েছিল সে বোধহয় মুষ্টিবদ্ধ হাত দিয়ে মারছে। কিন্তু অল্পক্ষণ পরেই আমি দেখি রক্ত গলগল করে আমার পোশাকে পড়ছে, এই সময়ের মধ্যেও সে আমাকে বারবার মেরে যাচ্ছিল, ছুরি মারছিল,” বলেন এই লেখক।
রুশদি যখন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে যাওয়ার বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তখন পাবলিক গ্যালারিতে বসে থাকা তার স্ত্রী কবি র্যাচেল এলিজা গ্রিফিথের চোখে পানি দেখা গেছে। এ সময় রুশদির বন্ধু লেখক বিল বুফর্ড গ্রিফিথের হাত টেনে নিয়ে তাকে সান্ত্বনা দেন।
মাঝে মাঝে রুশদির দিকে তাকানো ঢিলেঢালা নীল শার্ট পরা মাতারকে দেখা গেছে গাঢ় কালি দিয়ে হলুদ রঙা আইনি প্যাডের পাতা ভরতে।
আত্মজীবনীমূলক এক গ্রন্থে রুশদি লিখেছিলেন, তিনি আদালতে তাকে ছুরিকাঘাতকারীর মুখোমুখি হতে মুখিয়ে আছেন।
আড়াই বছর আগে ওই হামলার পর নিউ জার্সির বাসিন্দা মার্কিন-লেবানিজ দ্বৈত নাগরিক মাতার জেলে বসে নিউ ইয়র্ক পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ইসলামকে অপমান করেছে এমনটা মনে করেন বলেই তিনি রুশদিকে অপছন্দ করেন। হামলার পর রুশদি বেঁচে যাওয়ায় অবাক হওয়ার কথাও তিনি জানান।
তার পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, মাতার সেদিন এম্ফিথিয়েটারে ছিলেন কিন্তু তদন্তকারীদের তথ্যে এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় না যে মাতারের এমন অপরাধমূলক উদ্দেশ্য ছিল যে জন্য তাকে হত্যাচেষ্টায় দোষী সাব্যস্ত করা যায়।
১৯৮৮ সালে প্রকাশিত ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেসের’ জন্য পাওয়া হুমকি নিয়ে রুশদি গত শতকের নব্বই দশকের প্রায় পুরোটা সময় যুক্তরাজ্যে লুকিয়ে ছিলেন।
ওই বইয়ের জন্য ইরানের তখনকার শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি তাকে হত্যার ফতোয়াও জারি করেছিলেন।
এই ফতোয়া বা মৃত্যু পরোয়ানার বিষয়গুলো জুরিদের শোনানো হয়নি; মাতারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে এগুলোর সংশ্লিষ্টতা নেই, বলেছে শাটাকোয়ার প্রসিকিউটরের কার্যালয়।
যুক্তরাজ্যের নির্জন জীবন ত্যাগ করে রুশদি পরে নিউ ইয়র্কে থিতু হন।
হামলার দিন ওই আর্টস ইনস্টিটিউটের মঞ্চে রুশদি মাথায়, ঘাড়ে, ঘাড়ের নিচের অংশে ও বাম হাতে প্রায় ১৫ বার ছুরিকাঘাতের শিকার হন, যা তার ডান চোখকে পুরোপুরি অকেজো করে দেয়, লিভার ও অন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাকে মৃত্যুর দুয়ারে নিয়ে গিয়েছিল, বলেছেন তার চিকিৎসক।
দোষী সাব্যস্ত হলে মাতার সর্বোচ্চ ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের সাজা পেতে পারেন। তার বিরুদ্ধে বাফেলোতে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে পৃথক আরেকটি মামলাও আছে।
আরও পড়ুন