“গাজায় বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে, বাড়িঘর থেকে শুরু করে হাসপাতাল, স্কুলেও হামলা হয়েছে। তার পাশাপাশি ইসরায়েল যেসব বিধিনিষেধ দিয়েছে তাতে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়,” বলেছেন তিনি।
Published : 27 Feb 2025, 06:21 PM
গাজার সামরিক অভিযানে ইসরায়েল মানবাধিকারের প্রতি নজিরবিহীন অবজ্ঞা দেখিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক।
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসও আন্তর্জাতিক আইন ভেঙেছে, বুধবার তিনি এ কথাও বলেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
“গাজায় ইসরায়েল তাদের সামরিক অভিযানে যেভাবে নিয়মিত আন্তর্জাতিক আইন ভেঙেছে, তার ভয়াবহতা কোনো কিছু দিয়েই আড়াল করা যাবে না,” গাজা, ইসরায়েলের দখলে থাকা পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জেনিভায় মানবাধিকার কাউন্সিলে নতুন এক প্রতিবেদন দিতে গিয়ে বলেন তুর্ক।
মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) এ প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর হামাসও আন্তর্জাতিক আইনের বড় ধরনের লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
“হামাস ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে হরেদরে প্রজেক্টাইল ছুড়েছে, যা যুদ্ধপরাধের শামিল,” বলেছেন তুর্ক।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে হামাস প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা এবং আড়াইশর বেশি মানুষকে জিম্মি করে বলে দাবি তেল আবিবের।
এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল সোয়া এক বছর ধরে গাজায় লাগাতার হামলা চালিয়ে যায়, যাতে প্রাণ যায় অন্তত ৪৮ হাজার মানুষের, আহতের সংখ্যা লাখ ছাড়ায়।
“গাজায় বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে, বাড়িঘর থেকে শুরু করে হাসপাতাল, স্কুলেও হামলা হয়েছে। তার পাশাপাশি ইসরায়েল যেসব বিধিনিষেধ দিয়েছে তাতে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়,” মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৮তম অধিবেশনে দেওয়া প্রতিবেদনে বলেন জাতিসংঘের মানবাধিকারপ্রধান।
তিনি গাজা যুদ্ধে সব পক্ষের আইনের লঙ্ঘন স্বতন্ত্রভাবে খতিয়ে দেখার সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করবে না বলেও তুর্ক সন্দেহ পোষণ করেন। হামাস বা অন্যরা মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের সাজা দেওয়ার ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা তাও জানা নেই তার।
তিনি জানান, সকল পক্ষের লঙ্ঘন তদন্ত করে দেখতে ইসরায়েল এবং তাদের দখলে থাকা এলাকায় প্রবেশে ওএইচসিএইচআর অনুরোধ করলেও তেল আবিবের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েল এর আগে তাদের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের অভিযান কেবলই হামাসের বিরুদ্ধে, এবং তারা চেষ্টা করছে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমাতে, বলেছিল তারা।
মানবাধিকার কাউন্সিলে উপস্থিত ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা এবং গাজায় ত্রাণ ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন।
“মডেল বাড়িঘরের পাশাপাশি তাঁবুও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। খাদ্য ও ওষুধের প্রবেশও আটকে দেওয়া হচ্ছে,” কাউন্সিলে বলেছেন জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম খ্রাইশি।
ওএইচসিএইচআরের প্রতিবেদনে সেটলারদের সহিংসতা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের কথা বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি এ সহিংসতা ও অভিযানেরও নিন্দা জানান।
সোয়া এক বছরের যুদ্ধ শেষে গত মাসে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে গাজা নিয়ে যুদ্ধবিরতি হওয়ার পরপরই ইসরায়েল পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত জেনিন ও কাছাকাছি তুলকারামে অভিযান শুরু করে, যার কারণে অন্তত ৪০ হাজার ফিলিস্তিনিকে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছে।
“ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সংঘটিত যে অবর্ণনীয় ভয়াবহতা, তা নজিরবিহীন,” বলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধি ফ্রাঙ্কি ব্রনোয়েন লেভি।
ওএইচসিএইচআরের প্রতিবেদনে স্বাধীন তদন্তের আহ্বান, হামাসের হামলা এবং পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি অভিযানের তীব্রতা বৃদ্ধির নিন্দায় সংহতি জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
সৌদি আরব, কুয়েত ও ইরাকসহ আরব দেশগুলো যুদ্ধ বন্ধ ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে।