বিদ্রোহীরা সিরিয়ার উল্লেখযোগ্যভাবে বড় একটি সম্প্রদায় আলাওয়াইতের সঙ্গে কী আচরণ করে তা একটি লিটমাস পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিল।
Published : 10 Dec 2024, 12:31 PM
সিরিয়ার বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা সুন্নিদের নেতৃত্বাধীন ইসলামপন্থি বিদ্রোহীরা সাবেক প্রেসিডেন্টের আলাওয়াইত সম্প্রদায়ের মুরুব্বিদের সঙ্গে সোমবার সাক্ষাৎ করেছেন এবং তাদের সমর্থন পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
আলাওয়াইতদের নিজ শহরের বাসিন্দারা সিরিয়ার নতুন শাসকদের এ পদক্ষেপকে ‘সহনশীলতার উৎসাহজনক লক্ষণ’ বলে অভিহিত করেছেন।
রয়টার্স জানায়, বিদ্রোহীরা উল্লেখযোগ্যভাবে বড় একটি সম্প্রদায় আলাওয়াইতের সদস্যদের সঙ্গে কী আচরণ করে তা সিরিয়ায় একটি লিটমাস পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। কারণ এই সম্প্রদায় ব্যাপকভাবে আসাদকে সমর্থন দিয়ে আসছিল আর তার ব্যক্তিগত প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডস এদের দিয়েই গঠন করা হয়েছিল। রোববার দামেস্ক বিদ্রোহীদের হাতে পতনের পর আগের পাঁচ দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা শাসক পরিবারের সাবেক অনুগতদের বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিশোধের ঘটনা ঘটে কি না, তা নিয়ে ব্যাপক শঙ্কা ছিল।
বিদ্রোহীদের প্রতিনিধি দল সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে পবর্তময় লাতাকিয়া প্রদেশে আসাদের নিজ শহর কারদাহায় গিয়েছিল। সেখানে টাউন হলে এক বৈঠকে তারা বহু ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, মুরুব্বি ও অন্যান্যদের সঙ্গে কথা বলেন, আলোচনা করেন। এরপর আলাওয়াইতদের বিশিষ্ট জনরা ক্ষমতাসীন বিদ্রোহীদের প্রতি সমর্থন জানানো এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বলে স্থানীয় তিন বাসিন্দা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
ওই বাসিন্দারা জানান, প্রতিনিধি দলে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়া সুন্নি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ও ফ্রি সিরিয়ান আর্মির সদস্যরা ছিলেন।
আসাদ অনেকদিন ধরেই এইসব গোষ্ঠীর সদস্যদের সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করে আসছিলেন এবং তার পতন হলে এরা আলাওয়াইতদের কচুকাটা করবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছিলেন।
আলাওয়াইতরা শিয়া মুসলিমদের একটি দলছুট গোষ্ঠী। তারা সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ। এদের অধিকাংশ ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী লাতাকিয়া প্রদেশে বসবাস করে। এই প্রদেশটির সঙ্গে তুরস্কের সীমান্ত আছে।
সিরিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ সুন্নি। এছাড়া দেশটিতে খ্রিস্টান, কুর্দি, দ্রুজ ও অন্যান্য সম্প্রদায়রেরও উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি আছে।
যে বিবৃতিতে আলাওয়াইত সম্প্রদায়ের বিশিষ্টজনরা স্বাক্ষর করেছেন তাতে সিরিয়ার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। এই বিবৃতিতে রাষ্ট্রীয় পুলিশ ও পরিষেবাগুলোকে নতুন শাসকদের অধীনে যত দ্রুত সম্ভব কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানানো হয়েছে। আর এতে কারদাহের বাসিন্দাদের কাছে থাকা অস্ত্র সমর্পণ করার বিষয়েও সম্মতি দেওয়া হয়েছে।
শহরটির প্রায় ৩০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির স্বাক্ষর করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা সিরীয় আরব প্রজাতন্ত্রের ভূখণ্ড এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং চিন্তার বৈচিত্র্যের ঐক্য নিশ্চিত করছি।”
তবে এই বিবৃতিতে বিদ্রোহীরা স্বাক্ষর করেনি। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে বিদ্রোহীদের এক মুখপাত্রকে রয়টার্স টেক্সট বার্তা পাঠালেও তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি।
বিবৃতিতে কারদাহের পক্ষ থেকে ‘নতুন পথের প্রতি ও একটি দেশপ্রেমিক মুক্ত সিরিয়ার প্রতি সমর্থন’ এবং এইচটিএস ও ফ্রি সিরিয়ান আর্মির সঙ্গে ‘সম্পূর্ণ সহযোগিতার’ আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
সিরিয়ায় এখন ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের বোমা হামলা কেন?
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ঠিক করেছে সিরিয়া