মস্কোর ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ওয়াগনারের ক্ষণস্থায়ী বিদ্রোহ শেষ হওয়ার তিনদিন পর তিনি নির্বাসনে বেলারুশে পৌঁছালেন।
Published : 28 Jun 2023, 10:35 AM
রাশিয়ায় ২৪ ঘণ্টাব্যাপী এক বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়া ইয়েভগেনি প্রিগোজিন বেলারুশে পৌঁছেছেন।
মস্কোর ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে তার বাহিনী ওয়াগনারের বিদ্রোহ শেষ হওয়ার তিনদিন পর তিনি নির্বাসনে বেলারুশে পৌঁছালেন বলে দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।
এ কয়দিন প্রিগোজিন কই ছিলেন, তা নিয়ে রহস্য থেকেই যাচ্ছে। শনিবার রাতে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রস্তোভ-অন-দন ছাড়ার সময় শেষ তাকে প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছিল।
মঙ্গলবার তার ব্যক্তিগত জেট বিমান রাশিয়া থেকে রওনা হয়ে বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে নামে বলে বিমান চলাচলের খোঁজখবর রাখা ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪ জানায়।
“হ্যাঁ, অবশেষে তিনি আজ বেলারুশে এসেছেন,” মঙ্গলবার এমনটাই বলেছেন লুকাশেঙ্কো।
বেলারুশে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা এ প্রেসিডেন্ট জানান, ওয়াগনারের সেনারা যদি তাদের নেতার সঙ্গে যোগ দেন তাহলে তাদেরকে একটি পরিত্যক্ত সামরিক ঘাঁটি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া আছে।
“বেড়া আছে, সবকিছু পাওয়া যাবে, চাইলে তাঁবু টাঙাতে পারেন,” বলেছেন লুকাশেঙ্কো।
ওয়াগনাররা তাদের কৌশল ও অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিজ্ঞতা বেলারুশের সেনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারবে, বলেছেন তিনি।
যে চুক্তির আওতায় বিদ্রোহের ইতি ঘটেছে, তাতে প্রিগোজিনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে এবং ওয়াগনারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা তুলে নেওয়া হচ্ছে।
ভাড়াটে এই বাহিনীর কাছে থাকা সব অস্ত্রশস্ত্র নিয়মিত বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের কাজ শুরু করেছে মস্কো। আর ওয়াগনারের যোদ্ধাদের তিনটির মধ্যে একটি বিকল্প বেছে নিতে বলা হয়েছে- নিয়মিত সেনাবাহিনীতে যোগ দাও, বাড়ি যাও না হলে লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে বেলারুশে গিয়ে থাকো।
প্রিগোজিনের বেলারুশে অবস্থানও প্রতিবেশী নেটো দেশের সরকারগুলোর ঘুম হারাম করে দিয়েছে।
লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্টের এক উপদেষ্টা বলেছেন, ভাড়াটে এই বাহিনীটি নাশকতা, অবৈধভাবে সীমান্ত টপকে ভেতরে ঢোকাসহ নানান বিপজ্জনক কর্মে লিপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
তবে নেটোর প্রধান ইয়েন্স স্টল্টেনবার্গ বলেছেন, তারা মস্কো ও মিনস্কের কাছ থেকে আসা যে কোনো হুমকি মোকাবেলায় প্রস্তুত।
লিথুয়ানিয়ায় পরের সপ্তাহে হতে যাওয়া নেটো জোটের বৈঠকে বেলারুশ সীমান্তবর্তী দেশগুলোর নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে আলোচনা হবে বলেও ধারণা দিয়েছেন তিনি।
“মস্কো ও মিনস্ককে সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছি- প্রত্যেক মিত্র এবং নেটো ভূখণ্ডের প্রত্যেক ইঞ্চির সুরক্ষায় নেটো প্রস্তুত রয়েছে,” বলেছেন তিনি।
রাশিয়া সম্প্রতি বেলারুশে তাদের কিছু ট্যাকটিকাল পারমাণবিক অস্ত্রও স্থানান্তর করেছে। তবে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, এসব অস্ত্র কেবল তখনই ব্যবহার করা হতে পারে, যখন রাশিয়ার ভূখণ্ড হুমকির মুখে পড়বে।
ওয়াগনারের বিদ্রোহের সময় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা প্রসঙ্গেও মঙ্গলবার কথা বলেছেন লুকাশেঙ্কো।
“আমি পুতিনকে বলি- আমরা চাইলে প্রিগোজিনকে খরচের খাতায় ফেলে দিতে পারি, কোনো সমস্যা নেই, প্রখমবার না পারলে, দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় হলেও পারবো। কিন্তু এটা করবেন না, আমি বলেছি তাকে,” নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বলেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট।
এরপর তিনি প্রিগোজিনের সঙ্গে কথা বলার প্রস্তাব দেন। তখন পুতিন বলেন, “দেখুন, এটা অহেতুক হবে, সে এমনকী কার ফোনও ধরছে না, কারও সঙ্গে কথাও বলতে চাইছে না।”
লুকাশেঙ্কো তখন প্রিগোজিনের নম্বর চান পুতিনের কাছে। পাল্টা উত্তরে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, “সম্ভবত, রুশ কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা এফএসবির কাছে ওই নম্বর থাকতে পারে।”
লুকাশেঙ্কো এরপর প্রিগোজিনকে ফোন করেন। সে সময় ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের প্রধান এমন ঘোরে ছিলেন যে নিজের সফলতার ব্যাপারে তিনি ব্যাপক আশাবাদী ছিলেন।
“প্রিগোজিন লুকাশেঙ্কোকে বলেছিলেন, “আমরা ন্যায়বিচার চাই, তারা আমাদেরকে গলা চেপে মারতে চায়। আমরা মস্কো যাবো,” ওয়াগনার প্রধান তাকে এমনটা বলেছিলেন বলে ভাষ্য লুকাশেঙ্কোর।
“আমি তাকে বলি, অর্ধেক পথে তুমি পোকার মতো পিষ্ট হয়ে যাবে,” বলেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট।
রাশিয়ার এক বিশ্লেষক বলছেন, বিদ্রোহে মধ্যস্থতা করে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট পুতিনের বড় ধরনের উপকারই করেছেন।
“কেননা আফ্রিকায় ভাড়াটে বাহিনীটির সেনাদের বশে রাখতে প্রিগোজিনকে পুতিনের লাগবেই,” বলেছেন মার্ক গালেওটি নামের ওই বিশ্লেষক।