Published : 01 May 2024, 11:17 PM
তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ে ‘বিজেপিকে ভোট দেওয়া ভালো’ বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের বহরামপুরে লোকসভা নির্বাচনের এক অনুষ্ঠানে তার এমন মন্তব্য আসে।
তার ওই মন্তব্যের একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে বিজেপি নেতা শেহজাদ পুনাওয়ালা বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস নেতা ‘জানেন’ তৃমণূলকে ভোট দেওয়া হলে তা পশ্চিমবঙ্গেরই ক্ষতি করবে।’’
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ অবশ্য বলেছেন, ‘ভিডিওটি এখনও দার ‘দেখা হয়নি’।
কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সভাপতি অধীর রঞ্জন লোকসভায় বহরামপুর আসনের সদস্য। এবারও তিনি সেখান থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন।
মঙ্গলবারের নির্বাচনী অনুষ্ঠানে তৃণমূলের সমালোচনা করলেও তিনি ভোট চেয়েছেন অসাম্প্রদায়িক দলের (কংগ্রেস ও বামপন্থি দল) জন্য। তার ভাষায়, এবারের নির্বাচন দেশের ‘ভবিষ্যৎ নির্ধারণের’ নির্বাচন।
অধীর রঞ্জন বলেন, ‘‘কংগ্রেস ও বামেদের এই নির্বাচনে জেতা দরকার। তা না হলে অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ ঝুঁকিতে পড়বে। তৃণমূলকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকে ভোট দেওয়া। ফলে শুধু বিজেপিকেই ভোট দেওয়া ভালো। তাই বিজেপিকেও ভোট দেবেন না, তৃণমূলকেও ভোট দেবেন না।’’
কংগ্রেস ও তৃণমূল উভয়ই বিজেপিবিরোধী ‘জোট ইন্ডিয়া’র শরিক। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অধীর রঞ্জনের অবস্থানের বিষয়ে জয়রাম রমেশের কাছে ইন্ডিয়া টুডে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি ভিডিওটি এখনও দেখিনি এবং কোন পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এমন কথা বলেছেন, তাও জানতে পারিনি।
“তবে আমি স্পষ্ট করতে চাই, বিজেপির আসন সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমানোই কংগ্রেসের একমাত্র লক্ষ্য “
জয়রাম রমেশ বলেন, কংগ্রেস ও বাম দলগুলো ইন্ডিয়া জোটের সদস্য। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, তার দল তৃণমূলও এই জোটের শরিক। তবে পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসন ভাগাভাগি করেনি কংগ্রেস ও তৃণমূল। ফলে এই রাজ্যের ভোটের মাঠে জোটের সমীকরণ অন্যরকম।
অধীর রঞ্জনের মন্তব্যের সমালোচনা করে তৃণমূল কংগ্রেস তাকে পশ্চিমবঙ্গে ‘বিজেপির কণ্ঠ ও বিজেপির বি-টিম’ বলে পাল্টা আক্রমণ করেছে।
এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে তৃণমূল বলেছে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির চর হিসেবে কাজ করার পর অধীর রঞ্জন এখন দলটির মুখপাত্র হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। শুনে দেখুন, বিজেপির বি-টিমের এক সদস্য কীভাবে প্রকাশ্যে ভোট চাইছেন, যে দলটি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ন্যায্য পাওনা দেয়নি এবং আমাদের জনগণকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে!
“কেবল একজন বাংলাবিরোধীই বিজেপির প্রচার চালাতে পারেন, যে দলটি বাংলার কীর্তিমানদের বারবার অপমান করেছে। ১৩ মে বহরামপুরের মানুষ এই বিশ্বাসঘাতকতার সমুচিত জবাব দেবে।‘’
২৮ এপ্রিল এক নির্বাচনী জনসভায় ‘কংগ্রেস ও সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে জেতাতে কাজ করছে’ বলে অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল-প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেছিলেন, ‘‘বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের কোনো জোট নেই। এখানে সিপিআই(এম)-এর সঙ্গে কংগ্রেসের জোট আছে। বিজেপির সঙ্গে দুই দলেরই আঁতাত আছে। এখানে কংগ্রেস বা সিপিআই(এম)-কে যদি ভোট দেওয়া হয়, তাতে বিজেপিবিরোধী ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাবে এবং নরেন্দ্র মোদীকে তা সুবিধা দেবে। কংগ্রেস ও সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির দুই নয়ন।’’
ভারতের পার্লামেন্টের ৫৪৩ আসনবিশিষ্ট নিম্নকক্ষ লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে ১৯ এপ্রিল, সাত ধাপে যা শেষ হবে ১ জুন।
ভোটগণনা ও ফলাফল ঘোষণা করা হবে ৪ জুন। ১৪০ কোটির বেশি মানুষের দেশটিতে এবার ভোটার সংখ্যা প্রায় ৯৭ কোটি।
বিজেপির নরেন্দ্র মোদী লোকসভা নির্বাচনে জিতে টানা তৃতীয় মেয়াদে দিল্লির মসনদে বসতে চাইছেন। ২০১৯ সালের মতই ‘এনডিএ’ জোট নিয়ে বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছে তার দল বিজেপি।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অবশ্য জোর দিয়ে বলছেন, এবার আর ২০১৯-এর পুনরাবৃত্তি হবে না।