Published : 19 Jun 2023, 01:50 PM
গ্রিসের উপকূলে ভূমধ্যসাগরে অতিরিক্ত যাত্রীবাহী নৌকাডুবির ঘটনায় তিনশরও বেশি পাকিস্তানি মারা গেছেন বলে দেশটির সেনেটের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।
রোববার এক বিবৃতিতে মুহম্মদ সাদিক সানজরানি এ সংখ্যা প্রকাশ করে মৃতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান, খবর সিএনএনের।
বিবৃতিতে সানজরানি বলেন, “ওই বিদেহী আত্মারা চির শান্তি পাক। এই বিধ্বংসী ঘটনাটি মানব পাচারের মতো ঘৃণিত কাজের নিন্দা ও এর সুরাহা করার জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।”
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা মানব পাচারকারীদের চিহ্নিত করার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ রোববার একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন এবং তার ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার পাকিস্তানে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে।
ওই ভয়াবহ নৌকাডুবির ঘটনায় কতোজন পাকিস্তানির মৃত্যু হয়েছে গ্রিসের কর্তৃপক্ষ এখনও তা নিশ্চিত করেনি।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, নারী ও শিশুসহ প্রায় ৭৫০ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে বহনকারী মাছ ধরার নৌকাটি গত বুধবার দুপুররাত ১টার পর গ্রিসের দক্ষিণাঞ্চলীয় পাইলোস শহর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায়। এ ঘটনায় অন্তত ৭৮ জনের মৃত্যু হয় এবং শতাধিক মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
ওই নৌকার আরও ৫০০ জনের মতো আরোহী এখনও নিখোঁজ বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের দপ্তর।
বেঁচে যাওয়া আরোহীদের দেওয়া প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, মাছ ধরার নৌকাটিতে নারী ও শিশুসহ অন্তত ৪০০ পাকিস্তানি, ২০০ মিশরীয় ও ১৫০ জন সিরীয় ছিলেন।
পাকিস্তান কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছে। গত বছর ২২ কোটি জনসংখ্যার দেশটির মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে এবং প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে ছিল। এরমধ্যে দেশটির বিভিন্ন বিতরণ কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভিড়ের চাপে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি তরুণরা উন্নত ভবিষ্যতের সন্ধানে বিভিন্ন বিপজ্জনক পথে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
প্রতি বছর যুদ্ধ, নিপীড়ন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে হওয়া উদ্বাস্তু ও দারিদ্রের ঝুঁকিতে থাকা হাজার হাজার মানুষ এসব থেকে বাঁচতে অনির্ভরযোগ্য বিভিন্ন রুটে ইউরোপে পথে রওনা হচ্ছে।
এসব লোকজনকে ভূমধ্যসাগরের বিপদসঙ্কুল পথে নৌকায় তুলে দেওয়ার জন্য ‘পাচারকারীদের’ ভূমিকার নিন্দা করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) হোম অ্যাফেয়ার্স কমিশনার ইলভা জোহানসন।
তিনি বলেছেন, “তারা (পাচারকারীরা) লোকজনকে ইউরোপের পাঠাচ্ছে না, মৃত্যুর কাছে পাঠাচ্ছে। এটিই তারা করছে আর তাদের প্রতিরোধ করা অত্যন্ত জরুরি।”
গ্রিসের কোস্টগার্ড জানিয়েছে, ডুবে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে অভিবাসন প্রত্যাশীদের বহনকারী মাছ ধরার ট্রলারটিকে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিল তারা, কিন্তু ট্রলারটির আরোহীরা একজোট হয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে এবং তারা ‘শুধু ইতালিতে যেতে চায়’ বলে জানিয়েছিল, তারপর সোজা ইতালির দিকে যেতে যেতে থাকে।
তবে এই নৌকাডুবির ঘটনা নিয়ে গ্রিসের কোস্টগার্ড যেসব তথ্য দিয়েছে তার সঙ্গে বেঁচে যাওয়ার লোকজনের ভাষ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন উৎস থেকে আসা পারিপর্শ্বিক অন্যান্য তথ্যও গ্রিসের কোস্টগার্ডের দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে।
আরও পড়ুন: