Published : 15 Jun 2023, 07:56 PM
গ্রিসের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলে যে শরণার্থী নৌকাটি ডুবে গেছে তাতে একশর মত শিশু ছিল বলে জানিয়েছেন বেঁচে ফেরা অভিবাসনপ্রত্যাশীরা।
এ নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত ৭৮ জন মারা গেছে এবং একশ জনের বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে।
বিবিসি জানায়, এখনও অনেক মানুষ নিখোঁজ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ,কিছু কিছু প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, দুর্ঘটনাকবলিত নৌকাটিতে ৭৫০ জন ছিল।
গ্রিক সরকার বলছে, গ্রিসে সবচেয়ে বড় অভিবাসী নৌকা দুর্ঘটনার এটি একটি। এ দুর্ঘটনার জন্য তিনদিনের শোক ঘোষণা করেছে গ্রিস।
উদ্ধারকর্মীরা এখনও জীবীত কাউকে খুঁজে পাওয়ার আশায় বড় ধরনের উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।
নৌকার বেঁচে ফেরা যাত্রীরা বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশুর ব্যাপারে অবাক করা তথ্য দিয়েছেন। এই যাত্রীদের অনেকেই গ্রিসের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন; যাদের বেশিরভাগই পুরুষ।
কালামাতা হাসপাতালের চিকিৎসক মানোলিস ম্যাকারিস স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, হাসপাতালে আসা একজনকে তার (চিকিৎসক) ফোন দিয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগে সহায়তা করেন। সে সময় ওই ব্যক্তি নৌকায় ১০০ মতো শিশু ছিল বলে ফোনে স্বজনদের জানিয়েছেন।
গ্রিসের টেলিভিশন চ্যানেল এএনটি-১ এর একজন সাংবাদিক বেঁচে যাওয়া এক অভিবাসনপ্রত্যাশীর কাছে নৌকাটিতে ১০০ জন শিশু ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ।’
আন্তর্জাতিক শিশু বিষয়ক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনও বেঁচে ফেরাদের কাছ থেকে প্রায় একই ধরনের পরিসংখ্যান পাওয়ার কথা জানিয়েছে। তবে নৌকায় শিশুদের সংখ্যার ব্যাপারে এই দাবি নিরপেক্ষ সূত্রে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।
তবে গ্রিক সরকারের মুখপাত্র ইলিয়াস সিয়াকান্তারিস বলছেন, অসমর্থিত সূত্রে নৌকাটিতে মোট ৭৫০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিল বলে জানা গেছে। গ্রিসের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম ইআরটিকে তিনি বলেছেন, “আমরা জানি না আসলে কী ঘটছে... তবে কিছু পাচারকারী নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে লোকজনকে আটকে রাখছে।”
নৌকাটি ডুবেছে গ্রিসের পাইলোস শহর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে।
গ্রিসের কোস্টগার্ড বলেছে,মঙ্গলবার দিনশেষে আন্তর্জাতিক জলসীমায় নৌকাটি দেখা যায় ইইউ সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের একটি বিমান থেকে। নৌকাটিতে থাকা যাত্রীদের কেউই লাইফ জ্যাকেট পরা ছিল না এবং কোনও সাহায্য নিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
গণমাধ্যম ইআরটি জানায়, কর্তৃপক্ষ স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার ওই নৌকাটির সঙ্গে যোগাযোগ করে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু সেখান থেকে বারবার বলা হয়েছে: “আমরা ইতালিতে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই চাই না।”
এর কয়েক ঘণ্টা পর স্থানীয় সময় রাত প্রায় ১টার দিকে নৌকা থেকে কেউ একজন গ্রিসের কোস্টগার্ডকে জানায় যে তাদের জলযানের ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেছে। এর কিছুক্ষণ পরই নৌকাটি উল্টে যায় আর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে পুরোপুরি ডুবে যায়।
এরপরই তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়, কিন্তু জোরালো বাতাস পরিস্থিতি জটিল করে দেয়।
পাইলোসের আঞ্চলিক স্বাস্থ্য পরিচালক ইয়ানিস কারভেইলিস নজিরবিহীন শোচনীয় ঘটনা ঘটতে পারে বলে সতর্ক করে বলেছেন, “নৌকাটিতে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ছিল।”