চার দশকের জলবায়ু আলোচনায় বিশ্ব কেবলমাত্র উষ্ণায়নের জন্য দায়ী বেশি মাত্রার গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইড কমানোর দিকেই মনোনিবেশ করেছে। কিন্তু এবছর বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধে আরেক গ্রিনহাউজ গ্যাস মিথেন কমানোর দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানাচ্ছেন।
Published : 10 Aug 2021, 10:45 PM
সোমবার জাতিসংঘ গঠিত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ার চূড়ান্ত বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বিশ্বের দেশগুলোকে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়ে দ্রুতই মিথেন গ্যাস নিঃসরণও কমাতে থাকতে হবে।
কার্বন-ব্লিচিং কয়লার পরিষ্কার বিকল্প হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস কাজে লাগাতে চাওয়া দেশগুলোর জন্য বিজ্ঞানীদের এ আহ্বান মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। আবার যেসব দেশে কৃষি এবং পশুপালন, বিশেষ করে গবাদি পশু গুরুত্বপূর্ণ শিল্প, তাদের জন্যও মিথেন গ্যাস কমানো হয়ে উঠতে পারে চ্যালেঞ্জিং।
তবে মিথেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড দুই’ই বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করলেও দুটোই সমান মাত্রায় তা করে না। কার্বনের একটি একক অণু মিথেনের একক অণুর চেয়ে কম উষ্ণতা তৈরি করে। অর্থাৎ, কার্বনে উষ্ণায়ন বাড়ে কম। আর মিথেনে উষ্ণায়ন বাড়ে বেশি। কিন্তু কার্বন বায়ুমন্ডলে থেকে যায় শত শত বছর ধরে। ওদিকে, মিথেন গ্যাস দুই দশকের মধ্যেই বায়ুমন্ডল থেকে উধাও হয়ে যায়।
আইপিসিসি’র প্রতিবেদনের পর্যালোচক ডারউড বলেছেন, “মিথেন গ্যাস হ্রাস করাটাই বিশ্বে উষ্ণায়ন কমানোর সবচেয়ে বড় এবং দ্রুততম কৌশল।” আইপিসিসি’র প্রতিবেদনেও মিথেন কমাতে বিশ্বকে জোরাল পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তাগাদা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
কিন্তু এখন কেন মিথেন?
আজকের গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের গড় তাপমাত্রার তুলনায় ১.১ সি বেশি। মানুষের কার্যকলাপের কারণে আজকের উষ্ণায়নের অন্তত ২৫ শতাংশই ঘটছে মিথেনের কারণে। তেল এবং গ্যাস শিল্প প্রধানত মিথেন গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী।
১৯৮০’র দশকের পর যে কোনও সময়ের তুলনায় বর্তমানে বায়ুমন্ডলে দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে মিথেনের ঘনত্ব। তাই এতদিন মিথেন কমানোর বিষয়টি জলবায়ু আলোচনায় তেমন প্রাধান্য না পেলেও এখন এই গ্যাস কমানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
তাদের মতে, মিথেন কমিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মিলবে বেশ কিছু উপকার, যে উপকার কার্বন কমিয়ে পাওয়া যাবে না। মানুষ এখন জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসা এবং দূষণ কমাতে শুরু করেছে।
এ পরিস্থিতিতে সৌর বিকিরণ মহাকাশে ফেরত পাঠানো কিছু দূষণ সৃষ্টিকারী উপাদান উধাও হয়ে গিয়ে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার যে ঝুঁকি আছে, মিথেন গ্যাস কমিয়ে তা ঠেকানো যেতে পারে। তাছাড়া, মিথেন কমলে উন্নত হবে বায়ুর মানও।
জাতিসংঘের হিসাবে, বৈশ্বিক পরিসরে প্রাক-শিল্প যুগের পর যে উষ্ণায়ন ঘটেছে তার প্রায় ৩০ শতাংশের জন্যই দায়ী মিথেন। অথচ মিথেন এবং এর মতো অন্যান্য দূষকের ভূমিকা নিয়ে আইপিসিসি এখনও কোনও আলোচনা চালায়নি।
তাই এবারে মিথেন উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বায়ুমন্ডলের জন্য এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য উপকার পাওয়ার দিকটিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে আইপিসিসি’র প্রতিবেদনে- বলেছেন, হোয়াইট হাউজের বিজ্ঞান প্রযুক্তি নীতি বিষয়ক কার্যালয়ের জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়ক পরিচালক জেন লুবসেনকো।