বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) হারিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে দিল্লির মসনদে বসছেন আম আদমি পার্টির (এএপি) শীর্ষ নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তাকে এরই মধ্যে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
Published : 11 Feb 2020, 05:55 PM
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভোটের চূড়ান্ত ফল সামনে আসার পরই টুইটারে অভিনন্দন বার্তা দিয়ে মোদী লেখেন, ‘‘দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভের জন্য আপ এবং কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন। দিল্লিবাসীর আকাঙ্খা পূরণের জন্য তাদেরকে শুভেচ্ছা জানাই।’’
পাল্টা জবাবে মোদীর উদ্দেশে টুইট করেন কেজরিওয়ালও। তিনি লেখেন, ‘‘ধন্যবাদ স্যর। রাজধানীকে বিশ্বমানের নগরে পরিণত করতে কেন্দ্রের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার জন্য অধীর অপেক্ষায় রইলাম।’’
মঙ্গলবার ভোটগণনা শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই আম আদমি পার্টির (আপ) জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। বেলা যত বেড়েছে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে আপের জয়ের ব্যবধানও ততই স্পষ্ট হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত ফলে বিধানসভার ৭০ আসনের মধ্যে আপের আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ তে। প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি’র আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ টিতে। আর কংগ্রেস পার্টি কোনো আসনই পায়নি। আম আদমির আসন এবার কিছুটা কমলেও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই দলটি ক্ষমতায় আসছে।
ভোটে প্রাথমিকভাবে জয় নিশ্চিত হওয়ার পরই কেজরিওয়াল বলেছিলেন, ‘কাজ দেখেই মানুষ ভোট দিয়েছেন’। এরপরই দিল্লিতে সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বার্তা দেন কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, ‘‘এ জয় মানুষের জয়। কাজে বিশ্বাস রেখে ভোট দিয়েছেন সবাই। নতুন রাজনৈতিক যুগের সূচনা করেছেন।’’
দিল্লিবাসীকে ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তৃতীয় বার আম আদমি পার্টির উপর ভরসা রাখার জন্য দিল্লিবাসীকে ধন্যবাদ। যারা আমাকে নিজের ছেলে বলে মনে করেন, যারা আমাদের ভোট দিয়েছেন, আজকের এই জয় তাদের জয়।’’
যদিও এবারের ভোটে কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ) গতবারের চেয়ে ৫ টি আসন কম পেয়েছে। গত বিধানসভা ভোটে (২০১৫ সাল) আপ পেয়েছিল ৬৭ টি আসন। আর বিজেপি পেয়েছিল তিনটি। এবারও আম আদমির স্রোতে বিজেপি ভেসে গেলেও গতবারের চেয়ে ৫ টি আসন তারা বেশি পেয়েছে। বিজেপি’র ভোটও বেড়েছে। গতবার বিজেপির ভোট ছিল ৩২ শতাংশ। এবার প্রায় ৬ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছে দল। আসন সংখ্যাও বাড়ছে তা নিশ্চিত। কিন্তু সরকার গঠনের স্বপ্ন এখনো দলটির অধরা।
রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, প্রথম থেকেই ভোটপ্রচারের জন্যে যে হাতিয়ারগুলো বেছে নিয়েছিল বিজেপি তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভারতের বিতর্কিত নতুন নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে দিল্লির মুসলিমপ্রধান এলাকা শাহিনবাগের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ‘তিক্ত’ প্রচার চালিয়েছে বিজেপি।
অন্যদিকে, দিল্লির সরকারি বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়ন, সাশ্রয়ী মহল্লা ক্লিনিক স্থাপন এবং স্বল্পমূল্যে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বাহবা পেয়েছেন দুই মেয়াদের মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। এ কয়েকটি কাজে আপ প্রশাসনের উন্নতির প্রতিশ্রুতিই ফল দিয়েছে।
দিল্লিবাসীর জন্য কেজরিওয়াল বাহিনীর নানা প্রতিশ্রুতি, বিপরীতে বিজেপির জাতীয়তাবাদী প্রচারের মধ্যে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ), নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি), জনসংখ্যা নিবন্ধন (এনপিআর) ও শাহিনবাগ আন্দোলনসহ নানা ঘটনার মধ্যে এবারে দিল্লিতে ভোট হয়েছে।
শনিবারের ভোটের পর সব বুথফেরত জরিপেই আম আদমি পার্টির ক্ষমতায় আসার আভাস মেলে।
এরপর জয়ের খবর আসতেই, নীল সাদা বেলুন নিয়ে উৎসবে মাতেন আপের নেতা কর্মীসমর্থকরা, হোলিও খেলা হয়। কেজরিওয়ালের জয়ই বলে দিচ্ছে, ধর্ম না উন্নয়ন? এ প্রশ্নে দ্বিতীয় বিকল্পকেই বেছে নিয়েছে রাজধানী দিল্লি।