দিল্লির বিধানসভার নির্বাচনের বুথফেরত জরিপের মতোই ভোট গণনার প্রাথমিক প্রবণতাও রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলটির নিরঙ্কুশ জয়ের আভাসই দিচ্ছে।
ভোটের তিন দিনপর মঙ্গলবার সকাল ৮টায় গণনা শুরুর পরপর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি এগিয়ে থাকলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলকে অনেক পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় এএপি।
৮ ফেব্রুয়ারির এই নির্বাচনে দলের পক্ষে ভোটার টানতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মতো বিজেপির হোমড়াচোমড়া নেতারা রাস্তায় নেমে আক্রমণাত্মক প্রচারণায় চালিয়েছিলেন।
কিন্তু বুথফেরত জরিপগুলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে প্রচার চালানো ক্যারিশমাটিক নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দলের বড় জয়ের ভবিষ্যদ্বাণীই করেছে ।
তবে বিজেপি ঠিক এখনই হার স্বীকার করতে রাজি নয়।দলটির মুখপাত্র প্রত্যুষ কান্থ বলেন, এটি এখনও প্রাথমিক প্রবণতা। চূড়ান্ত ফলাফলে তার দল ৩০টিরও বেশি আসন জিতবে।
এদিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে উদযাপনরত আম আদমি পার্টির নেতাকর্মীরা বলেন, বিভাজনের রাজনীতির ফাঁদে পা না দিয়ে সত্যিকারের সুশাসন ও উন্নয়ন নিয়ে কঠোর প্রচারের ফল পেয়েছে দল।
দিল্লির সরকারি বিদ্যালয়গুলির উন্নয়ন, সাশ্রয়ী মহল্লা ক্লিনিক স্থাপন এবং স্বল্পমূল্যে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বাহবা পেয়েছেন দুই মেয়াদের মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। প্রচারে কেন্দ্রের কাছ থেকে পুলিশ বাহিনী ও ভূমির নিয়ন্ত্রণ নিতে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে জনমত চেয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে বিজেপি ভারতের বিতর্কিত নতুন নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে দিল্লির মুসলিমপ্রধান এলাকা শাহিনবাগের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ‘তিক্ত’ প্রচার চালিয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা দেশকে টুকরো টুকরো করা ছাড়া আর কিছুই চায় না বলে হাজার হাজার মুসলিম নারীকে ‘বিপজ্জনক বিশ্বাসঘাতক’ চিত্রিত করে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলটি অভিযোগ করেছে, এএপি তাদের সমর্থন দিচ্ছে।
বিজেপির পক্ষে প্রচার চালানো দুজন সাংসদকে ‘তারকা প্রচারক’ তালিকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের মন্তব্যের জন্য, যেখানে তারা ‘বিশ্বাসঘাতকদের গুলি করতে’ সমর্থকদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন।
রাজনৈতিক ভাষ্যকার নীরজা চৌধুরী বিবিসিকে বলেন, ‘রাজনৈতিক বিভাজন’ বিজেপির প্রয়োগ করা ও পরীক্ষিত এমন একটি পদ্ধতি যা অতীতে দলটিতে ভোটে জিতিয়েছে। কিন্তু এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হলো- দিল্লিতেও কি এটা কাজ করবে?
গত শনিবার অনুষ্ঠিত ১ কোটি ৪৬ লাখ ৯২ হাজার ১৩৬ ভোটারের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬২ দশমিক ৫৯ শতাংশ।তাদের ভোটে সাধারণ ৫৮টি ও তফসিলভুক্ত জাতের ১২টি আসনের বিধায়ক বাছাই করবেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকে ২১টি গণনাকেন্দ্রে ভোটগণনা চলছে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ আম আদমি পার্টির প্রভাবশালী নেতাদের প্রায় সবাই এগিয়ে আছেন। সন্ধ্যার মধ্যেই ফল ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে।
দিল্লিবাসীর জন্য কেজওয়াল বাহিনীর নানা প্রতিশ্রুতি, বিপরীতে বিজেপির জাতীয়তাবাদী প্রচারের মধ্যে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ), নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি), জনসংখ্যা নিবন্ধন (এনপিআর) ও শাহিনবাগ আন্দোলনসহ নানা ঘটনার মধ্যে এবারে দিল্লিতে ভোট হয়েছে।
শনিবারের ভোটের পর সব বুথফেরত জরিপই বলেছে, এবারও ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসছে আম আদমি পার্টি। এতে ৫৬টি আসন এএপি ও ১৪ আসন বিজেপি জিতবে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসসহ অন্যদের ভাগে পড়েছে শূন্য। ভোট গণণা শুরুর পর প্রবণতা তাই বলছে।
২০১৫ সালের বিধানসভার ভোটে দিল্লির ৭০টি আসনের মধ্যে ৬৭টিতে জয়ী হয়েছিলে আম আদমি পার্টি। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে চিত্রটা উল্টে যায়। লোকসভার সাতটি আসনের সাতটিতেই জেতে বিজেপি। ৭০টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৬৫টিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি, পাঁচটিতে কংগ্রেস, এএপি একটিতেও নয়।
এর আগে ২০১৪ সালের লোকসভার যে নির্বাচনে জিতে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদী, সেই ভোটেও বিজেপি দিল্লির সাত আসনেই জয় পায়। কিন্তু পরের বছরই বিধানসভার ভোটে আম আদমি পার্টির কাছে গো হারা হারে।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনে জয়ী হয়ে জোটবেঁধে প্রথম সরকার গঠন করেছিল আম আদমি পার্টি। কিন্তু দুর্নীতিবিরোধী আইন পাশে শরিকদের অসহযোগিতার কারণ দেখিয়ে ৪৯ দিন পর দিল্লির মসনদ ছেড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল।
কেন্দ্রের শাসনের পর ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারির বিধান সভার নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জয় নিয়ে দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হন কেজরিওয়াল। এবারও ক্ষমতায় ফিরছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি সরকার।