২০২৩ সালে ইসরায়েলের কেনা অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের ৩০ শতাংশ গেছে জার্মানি থেকে। যার আর্থিক মূল্য ৩০ কোটি ইউরো।
Published : 08 Apr 2024, 08:53 PM
ইসরায়েলের কাছে যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম বিক্রি করে এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর জন্য বরাদ্দ তহবিল আটকে দিয়ে জার্মানি জাতিসংঘের গণহত্যা বিষয়ক কনভেনশনের লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছে সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়া।
এ অভিযোগ নিয়ে দেশটি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) এর দ্বারস্ত হয়েছে বলে জানায় বিবিসি।
বার্লিন অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, আগামী মঙ্গলবার তারা আইসিজে তে নিজেদের পক্ষে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করবেন।
বিবিসি জানায়, ২০২৩ সালে ইসরায়েলের কেনা সামরিক সরঞ্জামের ৩০ শতাংশ গেছে জার্মানি থেকে। যার আর্থিক মূল্য ৩০ কোটি ইউরো।
আইসিজে তে সৌদি আরবের করা অন্য একটি মামলার ভিত্তিতে এই মামলাটি করেছে নিকারাগুয়া। সৌদি আরবের করা ওই মামলায় আইসিজে থেকে জানুয়ারিতে ইসরায়েলকে গাজায় গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড এড়াতে ‘সম্ভাব্য সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণের’ নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে হামাসকে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া সব জিম্মিকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার নির্দেশও দেয়।
ইসরায়েল সরকার তাদের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, নিজেদের প্রতিরক্ষায় তারা যা করার করছে এবং আত্মরক্ষা করা তাদের অধিকার।
গাজায় গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের অভিযানে ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক লোকজন এবং তাদের একটি বড় অংশ নারী ও শিশু। গাজা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। অক্সফামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজার উত্তর অংশ প্রায় তিন লাখ মানুষ গত জানুয়ারি মাস থেকে গড়ে দৈনিক মাত্র ২৫০ ক্যালরি খাবারের উপর নির্ভর করে বেঁচে আছে।
নিকারাগুয়া তাদের অভিযোগে বলেছে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ইসরায়েলের কাছে জার্মানির অস্ত্র বিক্রি ১০ গুণ বেড়ে গেছে।
জার্মান সংবাদ সংস্থা ডিপিএ এর খবর অনুযায়ী, জার্মানি ইসরায়েলের কাছে সবচেয়ে বেশি বিক্রি করেছে আকাশ সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং যোগাযোগের সরঞ্জাম।
ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনডব্লিউআরএ এর কয়েকজন কর্মী গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় অংশ নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠার পর যে ১৫টি পশ্চিমা দেশ সংস্থাটিতে তহবিল প্রদান স্থগিত করেছে জার্মানি তার একটি।
আইসিজে তে করা মামলায় নিকারাগুয়া আদালতের কাছে বার্লিনকে ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে এবং ইউএনডব্লিউআরএ এর জন্য তহবিল পুনরায় বরাদ্দ করার নির্দেশ দেওয়ার আবেদন করেছে।
গাজায় এখনও যে দু-একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছে ইউএনডব্লিউআরএ তার একটি।
ত্রাণ তহবিল স্থগিত করে দেওয়ার মত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ‘জার্মানি গণহত্যা সংগঠিত হওয়াকে সহজতর করছে এবং গণহত্যা সংগঠিত হওয়া প্রতিরোধে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে’ বলেও অভিপত্রে উল্লেখ করেছে নিকারাগুয়া।
নিকারাগুয়ার হয়ে আদালতে প্রাথমিক বক্তব্য রেখেছেন দেশটির আইনজীবী এলাইন প্যাটেল। তিনি বলেন, “জরুরি ভিত্তিতে জার্মানির অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করা প্রয়োজন।
“জার্মানি যেসব অস্ত্র ইসরায়েলে পাঠিয়েছে বা পাঠাতে চলেছে সেগুলোর ভয়াবহতা সম্পর্কে বার্লিন সম্পূর্ণরূপে অবগত আছে।”
বার্লিন তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে নিজেদের পক্ষ তারা কী আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চলেছে সে সম্পর্কে কোনো আভাসই দেয়নি।
জার্মান সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “আমরা নিকারাগুয়ার অভিযোগগুলো শুনেছি এবং আমরা অন্যায্য কিছু করার অভিযোগ অস্বীকার করছি।”
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ দৃঢ়ভাবে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের পক্ষে সব সময় সরব সমর্থন দিয়ে এসেছেন।
ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রির কারণে দেশের ভেতর শলৎজের সমালোচনা বাড়ছে।