চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জের ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট আধা ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
Published : 01 May 2024, 11:50 AM
একবার পুড়ে যাওয়ার পর ঋণ নিয়ে চাঁদপুর সদরের বাঘড়া বাজারে ফের চা দোকান শুরু করেছিলেন গণি মিজি। স্বপ্ন দেখেছিলেন ধীরে ধীরে ঋণ শোধ করে ঘুরে দাঁড়াবেন। পাশের দোকানের ডেকোরেটর ব্যবসায়ী অহিদ মিয়া ব্যবসা বাড়ার আশায় কিছুদিন আগেই কিনেছিলেন নতুন আসবাবপত্র।
কিন্তু মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ৩টার দিকে উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের চাঁদপুর-রায়পুর সড়কের পাশের ওই বাজারে লাগা আগুনে তাদের সব স্বপ্নই পুড়ে গেছে।
বুধবার ভোর ৬টার দিকে ওই মার্কেটে পুড়ে যাওয়া জিনিসগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিলেন ১২টি দোকানের ব্যবসায়ীরা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কিছুই অক্ষত নেই। সব পুড়ে ছাই হয়ে আছে।
নিজের দোকানে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে গণি মিজি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার আর কিছু নেই। আট মাস আগে একই বাজারের ভিতরে আমার চা দোকান আগুনে পুড়ে যায়। সেখান থেকে এসে এখানে আবার দোকান শুরু করি। বোনদের কাছ থেকে টাকা ঋণ করে মালপত্র কিনেছি।
“কিন্তু এখানেও আমার সব শেষ হয়ে গেল। আমার সাত সদস্যের সংসার এখন কীভাবে চলবে। কীভাবে ঋণ শোধ করব?”
ক্ষতিগ্রস্ত রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, রাত ৩টার দিকে তার পাশের ব্যবসায়ী নান্নু বহরদার তাকে ফোন করে জানান তাদের সব দোকান আগুনে পুড়ে গেছে। এসে দেখেন আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস।
তার দোকানে থাকা মালামালসহ প্রায় ১৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
স্থানীয়রা জানায়, রাত আনুমানিক আড়াইটা থেকে পৌনে ৩টার মধ্যে দোকানগুলোয় আগুন লাগে। তবে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আগুনের সূত্রপাত তা কেউ বলতে পারেনি।
সড়কের পাশে হওয়ায় আগুন তাৎক্ষণিক লোকজনের নজরে আসে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ফরিদগঞ্জ ও চাঁদপুরের ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে আসে। একই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ।
আগুনে পুড়ে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হল- মার্কেটের পশ্চিম দিকের আলমগীরের ভ্যান গাড়ির গ্যারেজ, মো. মোছার মটর বাইকের গ্যারেজ, হাসানের সাইকেলের দোকান, গণি মিজির চায়ের দোকান, সমুন মিয়ার খাবার হোটেল, বারেক গাজী, মমিন মিয়া ও নজরুল ইসলামের রড সিমেন্টের দোকান, নান্নু বহরদারের জ্বালানি তেলের দোকান, অহিদ মিয়ার ডেকোরেটর দোকান, মানসুর মেম্বারের রড সিমেন্টের দোকান ও রবিন্দ্র কর্মকারের কামারের দোকান।
আগুনে সবচাইতে বেশি জিনিসপত্র পুড়েছে অহিদ মিয়ার ডেকোরেটর দোকানের। তিনি জানান, ব্যবসা বাড়ানোর জন্য সম্প্রতি দোকানের সকল আসবাবপত্র নতুন করে ক্রয় করেছেন। কিন্তু সব কিছুই পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স চাঁদপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেন বলেন, “রাত ৩টায় আমরা আগুন লাগার সংবাদ পাই। ৩টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কাজ শুরু করি।
“আমাদের দুটি ও ফরিদগঞ্জের দুটিসহ চারটি ইউনিট একসঙ্গে কাজ করে আধা ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে তিনটা ৪০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। কাজ শেষে ভোর পাঁচটায় আমরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করি।”
তিনি আরও বলেন, “ওই মার্কেটের ১২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। তবে এই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।”