বারমালে বিমান হামলার পর পাল্টা জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে তালেবানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
Published : 25 Dec 2024, 10:43 AM
আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তানের ধারাবাহিক বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে আফগান তালেবান।
মঙ্গলবার রাতে বারমাল জেলার লামানসহ সাতটি গ্রামকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে কেবল লামানেই একই পরিবারের পাঁচ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন।পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন লিখেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) চারটি শিবিরকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে, যার মধ্যে একটি ব্যবহার করতেন শের জামান ওরফে মুখলিস ইয়ার, কমান্ডার আবু হামজা, টিটিপির উমর মিডিয়ার প্রধান কমান্ডার আখতার মুহাম্মদ।
এই চারটি স্থানে হামলায় আরও ৬ জন আহত হয়েছে বলে বুধবার জানিয়েছেন তালেবানের উপ-মুখপাত্র হামদুল্লাহ ফিতরাত। তবে এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে পাকিস্তান সরকার ও সামরিক কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি।
রয়টার্স জানায়, হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে কাবুলে অবস্থিত পাকিস্তান মিশনের প্রধানকে তলব করেছে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। এই হামলার পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও পাকিস্তানি কূটনতিককে সতর্ক করেছে মন্ত্রণালয়।
আফগান জাতীয় প্রতিরক্ষাম ন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়েতুল্লাহ খোয়ারাজমি এক বিবৃতিতে বলেছেন, আফগানিস্তান এই নৃশংস হামলাকে আন্তর্জাতিক নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং সুস্পষ্ট আগ্রাসন বলে মনে করে। এ কাপুরুষোচিত হামলার জবাব না দিয়ে ছেড়ে দেবে না তার দেশ।
হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, নিজেদের ভূমি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা তাদের বৈধ অধিকার। হামলার লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ‘ওয়াজিরিস্তানি শরণার্থীরাও’ ছিল।
এক বছরের দীর্ঘ বিরতির পর কূটনৈতিক আলোচনার জন্য কাবুল সফর করছেন আফগানিস্তানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত মোহাম্মদ সাদিক নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল। অন্তর্বর্তীকালীন আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির মুত্তাকির সঙ্গে পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের সাক্ষাতের দিনই এই হামলা চালানো হয় বলে ডন লিখেছে।
স্থানীয়দের দাবি, পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান এই বোমা হামলার জন্য দায়ী। খবরে বলা হয়েছে, বারমলের মুর্গ বাজার গ্রামটি ধ্বংস হয়ে গেছে, যা চলমান মানবিক সংকটকে আরও বাড়িয়েছে।
এএনআই লিখেছে, বিমান হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক হতাহত এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ দেখা গেছে, যা ওই অঞ্চলে উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে। খামা প্রেস জানিয়েছে, উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে; ঘটনার বিস্তারিত নিশ্চিত হতে এবং হামলার দায় স্পষ্ট করতে আরও তদন্ত প্রয়োজন।
পাকিস্তানি কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিমান হামলার কথা স্বীকার না করলেও সামরিক বাহিনীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো ধারণা দিয়েছে, সীমান্তের কাছে তালেবানদের গোপন আস্তানা লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হয়েছে।
এএনআই লিখেছে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা, বিশেষ করে আফগানিস্তানে পাকিস্তানি জঙ্গিদের উপস্থিতি নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে এই ঘটনা ঘটল।
পাকিস্তানি তালেবান বা তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর তাদের হামলা বাড়িয়েছে। আর তাদেরকে আফগান তালেবান আশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছে পাকিস্তান।
তবে পাকিস্তানের এ দাবি অস্বীকার করেছেন তালেবান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়েতুল্লাহ খোয়ারাজমি। তিনি এক্স পোস্টে বলেছেন, বিমান হামলায় ‘বেসামরিক লোকজন, বেশিরভাগ ওয়াজিরিস্তানি শরণার্থী’ নিহত হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের আদিবাসী এলাকায় সামরিক অভিযানের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছিল ওয়াজিরিস্তানি শরণার্থীরা। তবে পাকিস্তান বলছে, টিটিপির অনেক কমান্ডার ও যোদ্ধা আফগানিস্তানে পালিয়ে গেছে, তাদেরকে সীমান্ত প্রদেশগুলোতে সুরক্ষা দিচ্ছে আফগান তালেবানরা।
আফগানিস্তানে টিটিপি সদস্যদের উপস্থিতির কারণে বেশ কিছুদিন ধরে আফগান তালেবানদের সঙ্গে পাকিস্তানের উত্তেজনা তুঙ্গে। আফগান তালেবানের বিরুদ্ধে টিটিপি সদস্যদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ পাকিস্তান করে এলেও তালেবান জোর দিয়ে বলেছে, তারা ওই গোষ্ঠীকে সহযোগিতা করছে না।