২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে হওয়া সব জনমত জরিপে লিবারেলদের চেয়ে কনজারভেটিভদের এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে দুই দলের ব্যবধান অনেকটাই কমে এসেছে।
Published : 24 Mar 2025, 02:50 PM
কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি আগাম নির্বাচনের ডাক দেওয়ায় আগামী ২৮ এপ্রিল উত্তর আমেরিকার দেশটি ভোটে যাচ্ছে।
এমন এক সময়ে এ সাধারণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে যখন দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে এবং নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানোর আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন।
নির্বাচনী প্রচারে এবার ইস্যুই প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগ করার পর লিবারেল পার্টি কার্নিকে নতুন প্রধানমন্ত্রী বানায়, তার ৯ দিন পর এ আগাম নির্বাচনের ঘোষণা এলো, জানিয়েছে বিবিসি।
নতুন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দেড় মাসের মাথায় কার্নিকে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পয়লিয়েভ্রের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে হওয়া সব জনমত জরিপে লিবারেলদের চেয়ে কনজারভেটিভদের এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে দুই দলের ব্যবধান অনেকটাই কমে এসেছে।
রোববার অটোয়াতে এক বক্তৃতায় কার্নি বলেছেন, ট্রাম্পের মুখোমুখি হতে তার সুস্পষ্ট ব্যবধানে জয় দরকার।
“বাণিজ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অযৌক্তিক পদক্ষেপ এবং আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর তার হুমকির কারণে আমরা এখন আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কটের মুখোমুখি,” বলেছেন তিনি।
কয়েক মাস আগেও ভোটে লিবারেলদের জয়ের সম্ভাবনা অনেকেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু এখন কনজারভেটিভদের সঙ্গে তাদের ব্যবধান এতই কম যে কার্নির নেতৃত্বে কানাডায় টানা চতুর্থবারের মতো লিবারেল সরকার দেখার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ও ব্যাংক অব কানাডায় গভর্নরের দায়িত্ব পালন করা ৬০ বছর বয়সী কার্নি এর আগে কখনোই সাংসদ ছিলেন না।
দায়িত্ব নেওয়ার পর অল্প ক’দিনের মধ্যেই তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার ও ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠক করেছেন; কানাডার আর্কটিকে যাত্রাবিরতি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে নতুন রাডার ব্যবস্থাপনা বানানোর ঘোষণাও দিয়েছেন।
তিনি ট্রুডোর কার্বন কর জলবায়ু নীতিও বাতিল করে দিয়েছেন, এই নীতি কনজারভেটিভদের তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছিল।
আগাম নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সামান্য আগে শুরু করা নির্বাচনী প্রচারে কনজারভেটিভ দলের ৪৫ বছর বয়সী নেতা পয়লিয়েভ্রে প্রধানমন্ত্রী কার্নিকে ‘ট্রুডোর ধারাবাহিকতা’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
ট্রুডোর ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়কে ‘পতিত উদারনৈতিক দশক’ বলেও অভিহিত করেছেন তিনি।
তার অভিযোগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উত্তোলন, ব্যবহার ও বিক্রিতে বাধা, সামরিক বাহিনীকে অর্থায়ন না করা এবং অভিবাসন ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে লিবারেলরা দেশকে দুর্বল করে দিয়েছে।
“তাদের জাতীয়তাবাদ-উত্তর বৈশ্বিক মতবাদ ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধে কানাডার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে,” বলেছেন তিনি।
ট্রাম্প এরই মধ্যে যেসব পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছেন এবং আরও যেসব পণ্যে শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়ে রেখেছেন তা কানাডার অর্থনীতিতে অস্থিতিশীল করে দেশটিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কাও করছেন।
এক মাস আংশিক স্থগিতাদেশের পর ট্রাম্প ২ মার্চ থেকে কানাডার পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। ১২ মার্চ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া সব অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতে ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়, যা কানাডার ব্যবসায়ীদেরকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলেই অনুমান করা হচ্ছে।
২ এপ্রিল থেকে ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী অংশীদারদের আরও পণ্যে শুল্ক বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, সেসময় কানাডায় নির্বাচনী প্রচারণার দ্বিতীয় সপ্তাহ চলবে।
কানাডার তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পাল্টায় এখন পর্যন্ত ৬ হাজার কোটি কানাডিয়ান ডলার সমপরিমাণ মার্কিন পণ্যে শুল্ক বসিয়েছে।
কানাডার ফেডারেল নির্বাচনে ভোটাররা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করেন না। ভোটাররা পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচন করেন। যে দল সবচেয়ে বেশি আসনে জেতে তাদের নেতাই সাধারণত প্রধানমন্ত্রী হন।
এবারের নির্বাচনে লিবারেল ও কনজারভেটিভদের সঙ্গে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন নিউ ডেমোক্র্যাটস (এনডিপি) ও ব্লক ক্যেবেকের প্রার্থীরা। লড়বে গ্রিন পার্টি এবং পিপলস পার্টি অব কানাডাও।