গুজরাট রাজ্য সরকার ওই ব্যক্তিদের সাজা মওকুফ করার আদেশ দেওয়ার ‘যোগ্য নয়’ বলে রায় দিয়েছে আদালত।
Published : 08 Jan 2024, 10:30 PM
ভারতের গুজরাটের মুসলিম নারী বিলকিস বানুর ধর্ষকদের দুই সপ্তাহের মধ্যে কারাগারে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। গুজরাট সরকারের নির্দেশে ২০২২ সালের ১৫ অগাস্ট তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
মুক্তির আদেশ এবং মুক্তি পাওয়ার পর তাদের উল্লাস সে সময়ে ভারতে এবং ভারতের বাইরে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। ভারতের বেশ কয়েকটি নগরীতে ওই আদেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও হয়েছে।
ভারতে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার সময় উন্মত্ত একদল হিন্দুর ধর্ষণের শিকার হন গৃহবধূ বিলকিস বানু, যিনি সে সময় পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। উন্মত্ত ওই দলটি বিলকিসের পরিবারের ১৪ সদস্যকেও হত্যা করে। সে সময় নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। বিলকিস বানুর ঘটনায় পুলিশ সে সময় কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি। পরে এক সমাজকর্মীর উদ্যোগে বিষয়টি নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হলে শেষ পর্যন্ত ২০০৪ সালে ওই ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়।
আহমেদাবাদে শুরু হয় শুনানি। পরে আহমেদাবাদ থেকে মুম্বাইয়ে মামলাটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এরপর ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত ১১ জনকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে দোষীসাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
২০২২ সালে ভারতে স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে ১৪ বছরের বেশি সময় কারাভোগ করা ওই ধর্ষকদের সাজা মওকুফের সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাট সরকার। ওই বছর ১৫ অগাস্ট বীরোচিত সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে আসামিরা জেল থেকে বের হয়ে আসে। সে সময় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, তারা জেলের বাইরে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। স্বজনরা তাদেরকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছে, প্রণামও করছে।
সাজাপ্রাপ্ত ধর্ষকদের সাজা এভাবে মওকুফ করার ঘটনায় সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা হয়েছিল।
গুজরাট সরকালের ওই আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ২০২২ সালের অগাস্ট মাসেই একদল নারী সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। তাদের পক্ষে জনস্বার্থে পিটিশন দাখিল করেছেন ভারতের বিশিষ্ট প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিবাল। ওই বছর নভেম্বরে বিলকিস বানুও তার ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন এবং সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানান।
সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিয়েই গুজরাট রাজ্য সরকার ওই ধর্ষকদের মুক্তি দিয়েছিল।
অথচ, ধর্ষণ ও খুনের আসামিদের শাস্তি না কমানো গুজরাট রাজ্য সরকার, এমনকী ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত নীতি। এ ধরনের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মৃত্যু পর্যন্ত ভোগ করাটাই নিয়ম ভারতে। তাই ১১ আসামির মুক্তি এই বিধির লঙ্ঘন বলেও সেসময় অনেকে অভিযোগ করেন।
গুজরাট সরকারের আদেশের বিরুদ্ধে পিটিশনে বিলকিস বানু বলেছিলেন, তার ধর্ষকদের মুক্তির সিদ্ধান্ত ‘সমাজের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে’।
বিবিসি জানায়, সোমবার বিচারপতি বি ভি নাগারত্নার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ গুজরাট রাজ্য সরকারের মুক্তির আদেশ বাতিল করে বলেন, গুজরাট রাজ্য এই মামলায় সাজা মওকুফের আদেশ দেওয়ার ‘যোগ্যই’ নয়। কারণ, প্রতিবেশী রাজ্য মহারাষ্ট্রের একটি আদালত ওই ব্যক্তিদের বিচার এবং দোষী সাব্যস্ত করেছে।
“আর যেহেতু গুজরাট সরকারের সাজা মওকুফ আদেশ বাতিল করা হয়েছে তাই ১১ আসামিকে দুই সপ্তাহের মধ্য কারাগারে ফিরে যেতে হবে।”
বিচারপতি নাগারত্না আরো বলেন, “ন্যায়বিচার শুধু দোষী ব্যক্তিদের অধিকার নয় বরং ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকারকেও অন্তর্ভুক্ত করে এবং আদালতের প্রাথমিক দায়িত্ব হলো ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখা।
“পরিণতি কী হতে পারে সেটা মাথায় না রেখেই আইনের শাসনকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।”
ভারতে বিলকিস বানু ধর্ষণকাণ্ডে ১১ আসামির মুক্তি, তোপে মোদী
বিলকিস বানুর ধর্ষকদের মুক্তি অনুমোদনে ‘২ সপ্তাহও নেয়নি’ বিজেপি সরকার
বিলকিস বানুর ধর্ষকদের মুক্তির সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ
ভারতে বিলকিস ধর্ষকদের মুক্তির সিদ্ধান্তকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ