ভারতে বিলকিস বানু ধর্ষণকাণ্ডে ১১ আসামির মুক্তি, তোপে মোদী

১৪ বছরের বেশি সময় কারাভোগের পর এই অপরাধীদের সাজা মওকুফের সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের গুজরাট রাজ্য সরকার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2022, 05:31 PM
Updated : 17 August 2022, 05:58 PM

ভারতে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার সময় উন্মত্ত একদল হিন্দুর ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ বিলকিস বানু ও তার পরিবারের আরও ১৪ জনকে হত্যার ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত ১১ আসামিকে মুক্তি দিয়েছে গুজরাট সরকার।

বিবিসি জানায়, সোমবার বীরোচিত সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে আসামিরা জেল থেকে বের হয়ে এসেছে। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, তারা জেলের বাইরে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। স্বজনরা তাদেরকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছে, প্রণামও করছে।

ভারতে স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে ১৪ বছরের বেশি সময় কারাভোগের পর ওই অপরাধীদের সাজা মওকুফের সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাট সরকার।

এ পদক্ষেপ নিয়ে গুজরাট রাজ্য এবং কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা দলের (বিজেপি) সরকার তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।

ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসসহ এনসিপি, আরজেডি, সিপিএম এবং তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। মানবাধিকারকর্মী এবং সাংবাদিকরাও এর তীব্র সমালোচনা করছেন। গুজরাট সরকারের এ পদক্ষেপ সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকারের লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

ওদিকে, রাজনৈতিক মহল মনে করছে, গুজরাট বিধানসভার আসন্ন নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই রাজ্য সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে রাজ্য সরকার বলছে, অপরাধীরা ১৪ বছরের বেশি জেল খেটেছেন। তাদের সাজা মওকুফের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলে তাদের আচরণ, বয়স ও অন্যান্য আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় তাদেরকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অথচ ধর্ষণ ও খুনের আসামিদের শাস্তি না কমানো গুজরাট রাজ্য সরকার এমনকী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত নীতি। এ ধরনের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মৃত্যু পর্যন্ত ভোগ করাটাই নিয়ম ভারতে। তাই ১১ আসামির মুক্তি এই বিধির লঙ্ঘন বলেও অনেকে অভিযোগ করছেন।

২০১৪ সালে ভারতে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি’র কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের পর থেকেই দেশটিতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বেড়েছে। আর এখন গুজরাটে ধর্ষকদের সাজা মওকুফ করে সম্মানের সঙ্গে মুক্তি দেওয়ার এই ঘটনা ভুক্তভোগী বিলকিস বানু ও তার পরিবারের জন্য বড় ধাক্কা।

বিলকিস বানুর স্বামী ইয়াকুব রাসুল ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ পত্রিকাকে বলেছেন, “সোমবার সন্ধ্যায় ওই খবর শোনার পর সে (বিলকিস) কয়েক মুহূর্তের জন্য তা বিশ্বাসই করতে পারছিল না। প্রথমে সে কেঁদে ফেলেছে। তারপর একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গেছে।”

গুজরাটের সেই দাঙ্গার সময় বিলকিস বানু ও তার পরিবার ভয়াবহতম অপরাধের শিকার হয়েছে। ২০০২ সালে গোধরায় যাত্রীবাহী ট্রেনে লাগা আগুনে ৬০ হিন্দু পূণ্যার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গুজরাট জুড়ে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল। সে সময় পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বিলকিস বানু।

কোলের সন্তান এবং পরিবারের মোট ১৫ সদস্যের সঙ্গে তখন গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছিলেন তিনি। মাঠের মাঝে একটি ঝোপের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা। সে সময় কাস্তে, তলোয়ার, লাঠি নিয়ে ২০-৩০ জনের একটি দল তাদের ওপর চড়াও হয়। দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয় বিলকিসকে। সেখানেই শেষ নয়, বিলকিসের পরিবারের সদস্যদেরও খুন করা হয়।

নরেন্দ্র মোদী সে সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। দাঙ্গা রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন। বিলকিস বানুর ঘটনায়ও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এক সমাজকর্মীর উদ্যোগে পরে বিষয়টি নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হলে শেষ পর্যন্ত ২০০৪ সালে ওই ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়।

আহমেদাবাদে শুরু হয় শুনানি। পরে আহমেদাবাদ থেকে মুম্বাইয়ে মামলাটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এরপর ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত ১১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।