এই দাবি পূরণে ৮ বিভাগে সমাবেশ করে তারপর ঢাকায় মহাসমাবেশ করা হবে।
Published : 26 Apr 2025, 12:59 PM
আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের শুরুতে এবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্ত করে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করার যে ঘোষণা শিক্ষা মন্ত্রণালয় দিয়েছিল, তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে ইসলামি শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশ নামের শিক্ষকদের একটি সংগঠন।
একইসঙ্গে প্রতিটি উপজেলায় একটি দাখিল, একটি ফাযিল বা কামিল ও একটি মহিলা মাদ্রাসাসহ মোট তিনটি মাদ্রাসা সরকারিকরণের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। এই দাবি পূরণে ৮ বিভাগে সমাবেশ করে তার ঢাকায় মহাসমাবেশ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক গোল টেবিল বৈঠকে এসব দাবি জানানো হয়।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম মারুফের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন মহাসচিব উপাধ্যক্ষ মো. আবদুর রহমান। সভায় বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষকরা বক্তব্য রাখেন।
এ বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুইজন কর্মকর্তার অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও তারা উপস্থিত হননি।
ইসলামি শিক্ষা উন্নয়নের মহাসচিব আবদুর রহমান বলেন, "২৮ জানুয়ারি এবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। এবতেদায়ী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন অবহেলিত। তাদের কথা চিন্তা করতে হবে। কারণ তারাই শিশুদের কোরআন শিক্ষার হাতেখড়ি দেন।
"বিগত সরকার বহু স্কুল-কলেজ সরকারি করেছে কিন্তু একটি মাদ্রাসাও সরকারি করে নাই। প্রতিটি উপজেলায় তিনটি মাদ্রাসা সরকারি করে ইসলামি শিক্ষার প্রসার ও বৈষম্য দূর করতে হবে।"
একইসঙ্গে আবদুর রহমান এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা, সরকারি নিয়মে বাড়ি ভাড়া, সর্বজনীন বদলি, অবসরের ৬ মাসের মধ্যে অবসর ও কল্যাণ ভাতা দেওয়ার দাবি রেখেছেন
হাফেজ মাওলানা আহমদ আলীর কথায়, স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসা ইতিহাস অত্যন্ত ‘করুণ ইতিহাস’।
“আজ ৫০ বছর ধরে এবতেদায়ী বঞ্চিত। ইসলামকে উজ্জিবিত রাখতে হলে এবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণ খুব জরুরি। আমরা মরে গিয়ে আমাদের অধিকার পেতে চাই না। আমরা বেঁচে থাকতে আমাদের অধিকার চাই৷ এবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের যে ঘোষণা এসেছে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করুন। চলতি মাসের মধ্যেই সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে।"
ধর্মীয় শিক্ষা যদি না থাকে তাহলে ইসলাম 'থাকবে না' বলে মন্তব্য করেছেন মুফতি বদিউল আলম সরকার।
তিনি বলেন, "আমাদের দাবি শুধু দাবি নয়, অধিকার।ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছে আমরা বলেছিলাম এবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলোকে বাঁচান। সারেগামাপা করে অনেকে সরকারি অনুদান পাচ্ছেন, কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষকরা দীর্ঘদিন বেতন পাচ্ছেন না। তাই আমরা মাদ্রাসা শিক্ষার প্রাসারের দাবি করেছিলাম।
"এবতেদায়ী শিক্ষকরা জেগে ওঠে আন্দোলন গড়ে তুলবেন। প্রত্যেকটি উপজেলায় একটি করে দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করুন। আমাদের মেয়েদের জন্য মাদ্রাসা সরকারি করুন। মাদ্রাসা শিক্ষার প্রয়োজন আছে।"
মুফতি বদিউল আলম সরকারের ভাষ্য, "ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত কোন সন্তানের বাবা-মা বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন না। থাকেন তারাই যাদের সন্তান বড় বড় শিক্ষিত।"
অধ্যক্ষ মওলানা মিজানুর রহমান বলেন, "শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্য হল রবকে জানা। যিনি আমাকে সৃষ্টি করলেন, যে শিক্ষা দিয়ে তাকে চেনা যায় না, সে শিক্ষা শিক্ষা না। এবতেদায়ী মাদ্রাসা রবকে চেনানোর কাজ করে।
"৯০ শতাংশ মুসলিমের দেশে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরআন ও হাদিস পড়ানো বাধ্যতামূলক করতে হবে।"
এবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশের মহাসচিব মো. রেজাউল হক বলেম, "গত ২৮ জানুয়ারি এবতেদায়ী মাদ্রাসা সরকারিকরণের যে ঘোষণা তা বাস্তবায়ন করতে হবে। গত ৫ মার্চ সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা এবতেদায়ী মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সুবিধা বাড়ানোর কথাও বলেছিলেন। সেটির কাজ এগিয়ে গেলেও ইবতেদায়ী মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির কাজ হয়নি কেন? ৩১ মার্চের মধ্যে এবতেদায়ী মাদ্রাসার নীতিমালা জারির কথা ছিল, কিন্তু তা হল না কেন?"
মহাসচিব মো. রেজাউল হক বলেছেন, মে মাস থেকে ১৫১৯টি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করার কথা ছিল। পরে জুন ও জুলাই মাসে সব নিবন্ধিত মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। ২৮ জানুয়ারি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের ঘোষণা এসেছিল। কিন্তু তার সঙ্গে সংযুক্ত এবতেদায়ী মাদ্রাসা যুক্ত করা হয়েছে।
তাই মোট ২৭ হাজার মাদ্রাসা জাতীয়করণে ‘সরকার গড়িমসি করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
“স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার সঙ্গে জাতীয়করণের প্রস্তাবে সংযুক্ত এবতেদায়ী মাদ্রাসা কারা যুক্ত করলো তা আমরা জানতে চাই।"
শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে গত ২৮ জানুয়ারি এবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্ত করে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করার ঘোষণা দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ৫ মার্চ সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ শেষ কর্মদিবসে এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারী (ইআইআইএন) ১ হাজার ৫১৯টি এবতেদায়ী মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির প্রস্তাব অনুমোদন দেন, যা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো হয়েছিল।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন পাওয়ার পর মাদ্রাসা জাতীয়করণের কাজ শুরু হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ছিল, স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলোতে ছয়টি শিক্ষক পদসহ মোট সাতটি পদ এমপিওভুক্ত করা হবে। এজন্য করা হবে আলাদা নীতিমালা, যাতে ইবতেদায়ি প্রধান পদের বেতন নির্ধারণ করা হবে ১১তম গ্রেডে (১২৫০০-৩২২৪০ টাকা)।
আর ক্বারী শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষক পর্যায়ের ৫টি পদ এমপিওভুক্ত করা হবে, যে পদগুলোর বেতন হবে ১৩তম গ্রেডে (১১০০০-২৬৫৯০)। আর স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলোর প্রতিটিতে অফিস সহায়ক বা এমএলএসএস পদ সৃষ্টি করা হবে।
আর এ মাদ্রাসাগুলোতে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় চালুর পরিকল্পনাও করেছিল কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, যেটিকে নূরানী পর্যায় বলা হবে।
বর্তমানে এবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধানরা মাসিক ৩ হাজার ৫০০ টাকা ও সহকারী শিক্ষকরা মাসিক ৩ হাজার ৩০০ টাকা বেতন পান।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে এবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলোর জনবল কাঠামো ও বেতনভাতার নীতিমালা করেছিল কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। যদিও সে নীতিমালা অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা শিক্ষকরা পাননি।