১৫ বছর জেল খাটার পর চলতি বছরের ১৫ অগাস্ট গুজরাট সরকার ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকীতে ওই ১১ ধর্ষক মুক্তি দেয়।
Published : 28 Aug 2022, 03:31 PM
দুই দশক আগে গুজরাটে মুসলিম নারী বিলকিস বানুকে দলবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১১ জনকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে।
২০০২ সালে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বিলকিস ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন, ওই দাঙ্গাতেই তার পরিবারের ১৪ সদস্যকে খুনও করা হয়েছিল।
১৫ বছর জেল খাটার পর চলতি বছরের ১৫ অগাস্ট ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকীতে ওই ১১ জন ছাড়া পান; তারপর থেকেই ভারতজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বিক্ষোভগুলোতে হাজার হাজার নারী-পুরুষ বক্তৃতা, স্লোগানে সরকারকে যত দ্রুত সম্ভব ওই ধর্ষকদের মুক্তির সিদ্ধান্ত রদের অহ্বান জানাচ্ছেন।
ভারতীয় চলচ্চিত্র তারকা ও নারী অধিকার কর্মী শাবানা আজমি দিল্লিতে প্যারিসভিত্তিক একটি বার্তা সংস্থাকে বলেন, “বিলকিস বানুর সঙ্গে যা হয়েছে, তার পরিবারের সঙ্গে যা হয়েছে, আমাদের দেশে আর এমন হোক, তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে চাই না আমরা। এজন্যই আমরা একত্রিত হয়েছি এবং আওয়াজ তুলছি।”
“নারীর প্রতি বিদ্বেষ ও পুরুষতন্ত্র এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, এতটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে যে এখন ধর্ষণকেও মানুষ স্বাভাবিক চোখেই দেখছে,” বলেন দিল্লিতে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ছাত্রী অদিতি।
এদিকে শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা বিলকিস বানুর ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার ঘটনা সকল নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বাজে প্রভাব ফেলবে জানিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠিও দিয়েছেন।
ওই ধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত একজন কারাগার থেকে মুক্তি পেতে শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন; ওই আবেদনের ভিত্তিতে আদালত রাজ্য সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল। এর পরই গোধরা জেল থেকে ১১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়, জানিয়েছে আনন্দবাজার।
ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, মুক্তির পর ওই ১১ জন লাইন ধরে গোধরা জেলের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন, তাদের আত্মীয়রা তাদের মিষ্টিমুখ করাচ্ছে, কখনও কখনও পা ধরে আশীর্বাদও নিচ্ছে।
অপরাধীদের শুধু ফুল, মালা, মিষ্টিতেই বরণ করে নেওয়া হয়নি, তাদের ব্রাহ্মণ পরিচয় দেখিয়ে সংস্কারী আখ্যাও দিয়েছেন বিজেপির এক বিধায়ক। এ নিয়েও দেশের বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়।
এই ১১ জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ‘মহা অন্যায়’ অ্যাখ্যা দিয়ে বিলকিস বলেছেন, এই ঘটনা বিচার ব্যবস্থার প্রতি তার বিশ্বাসকে ‘নাড়িয়ে দিয়েছে’।