গুজরাট রাজ্য সরকারের আবেদনের দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই দণ্ডপ্রাপ্তদের ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেয়।
Published : 18 Oct 2022, 01:52 PM
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও গুজরাটের রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো সিবিআইয়ের দৃঢ় আপত্তি সত্ত্বেও দুই দশক আগে গুজরাট দাঙ্গার সময় বিলকিস বানুকে ধর্ষণ ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ১১ জনকে দ্রুতগতিতে ছেড়ে দিয়েছে বলে এক নথিতে উঠে এসেছে।
দেশটির সর্বোচ্চ আদালত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত মামলাটি শুনবে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, গুজরাট রাজ্য সরকারের আবেদনের দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই দণ্ডপ্রাপ্তদের ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেয়।
তাদের মুক্তি দিতে গুজরাট ২৮ জুন অনুমতি চায়, এক পৃষ্ঠার ওই আবেদনে ১১ জুলাইয়েই অনুমোদনের স্বাক্ষর পড়ে।
গুজরাটের রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, ওই দণ্ডপ্রাপ্তরা ১৪ বছর জেল খেটেছে, তাদের ব্যবহারও ‘ভালো’ বলে প্রতীয়মান হয়েছে আর কেন্দ্রীয় সরকারও তাদের মুক্তিতে সায় দিয়েছে।
দেশজুড়ে এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভের মধ্যেই দণ্ডপ্রাপ্ত ওই ১১ জন ভারতের স্বাধীনতা দিবস ১৫ অগাস্ট জেল থেকে বের হয়ে আসে। কারাগারের সামনে তাদেরকে ‘বীরের মতোই’ ফুল আর মিষ্টি দিয়ে বরণ করা হয়।
সিবিআই এবং বিশেষ এক বিচারক এ দণ্ডপ্রাপ্তদের ছেড়ে দিতে তীব্র আপত্তি জানালেও কেন্দ্রে ও রাজ্য ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার তাতে গা করেনি।
ওই দণ্ডপ্রাপ্তদের অপরাধ ছিল ‘জঘন্য, মারাত্মক ও গুরুতর’ এবং তারা কোনো ধরনের ক্ষমা পেতে পারে না, গত বছর এমনটাই বলেছিল সিবিআই।
আর বিশেষ ওই বিচারক ১১ জনের অপরাধ নিয়ে বলেছিলেন, “এটা বিদ্বেষমূলক অপরাধের মধ্যে সবচেয়েও খারপটা, এটা করাই হয়েছে ওই নারী নির্দিষ্ট একটি ধর্মের অনুসারী বলে। এক্ষেত্রে এমনকী অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুরাও ছাড় পায়নি।”
ওই দণ্ডপ্রাপ্তরা যে সাজা শেষ হওয়ার আগেই ছাড়া পেয়েছেন তা নয়, শাস্তি চলাকালেও তারা হাজারের বেশি দিন জামিনে ছিলেন বলে প্রকাশিত নথিতে দেখা যাচ্ছে।
জামিনে থাকাকালে এই দণ্ডপ্রাপ্তরা তাকে হয়রানি করেছেন বলে বিলকিস বানু অভিযোগও করেছেন, যা তাদের যে গুণের ভিত্তিতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সেই ‘ভালো ব্যবহার’কেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে।
তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার পর বিলকিস বানুকে কী ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে বা আদৌ দেওয়া হচ্ছে কিনা, গুজরাট পুলিশ সে বিষয়টিও স্পষ্ট করেনি।
সুপ্রিম কোর্টে এখন এই ১১ দণ্ডপ্রাপ্তের মুক্তি পাওয়াকে চ্যালেঞ্জ করে করা পিটিশনের শুনানি চলছে; সেখানেই সর্বোচ্চ আদালত গুজরাট সরকারকে বিলকিস বানুর মামলা ও কী উপায়ে দণ্ডপ্রাপ্তরা ছাড়া পেল তার সব নথি জমা দিতে বলে।
সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার সময় বিলকিস বানুর বয়স ছিল ২১ বছর, সেসময় তিনি গর্ভবতীও ছিলেন। দাঙ্গাকারীরা সেবার তার পরিবারের ১৪ সদস্যকে হত্যাও করেছিল, এদের মধ্যে বিলকিসের ৩ বছর বয়সী মেয়েও ছিল, যার মাথা পাথর দিয়ে থেতলে দেওয়া হয়েছিল।
শবরমতী এক্সপ্রেসে হামলায় ৫৯ ‘কর সেবকের’ মৃত্যুর পর গুজরাটজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা আর দাঙ্গা থেকে বাঁচতে এ পরিবারটি মাঠে আশ্রয় নিয়েছিল।
২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট ভয়াবহ বর্বরতার শিকার বিলকিসকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে চাকরি, ঘর ও নগদ ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
মুম্বাইয়ের বিশেষ আদালত দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়, পরে হাই কোর্টও সেই রায় বহাল রাখে।