বিলকিস বানু ধর্ষণকাণ্ডে গুজরাট সরকারের ১১ আসামির মুক্তির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন শুনবে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
Published : 23 Aug 2022, 09:01 PM
ভারতে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার সময় উন্মত্ত একদল হিন্দুর ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ বিলকিস বানু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত ১১ আসামিকে মুক্তির রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এবার আবেদন করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে।
একদল নারীর পক্ষ থেকে জনস্বার্থে পিটিশন দাখিল করেছেন ভারতের বিশিষ্ট প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিবাল। নারী দলটিতে আছেন, কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র পলিটব্যুরোর সদস্য সুভাষিণী আলি, সাংবাদিক রেবতী লাউল, তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং অধ্যাপিকা রূপরেখা ভার্মা।
তারা বিলকিস বানুর ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখার আর্জি জানিয়ে শীর্ষ আদালতের দারস্থ হন। পিটিশনে বলা হয়েছে, সাজাপ্রাপ্তদেরকে যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করতে হবে। মঙ্গলবার এ আবেদনের শুনানি করতে মৌখিকভাবে সম্মতি দিয়েছে আদালত।
আইনজীবী কপিল সিবাল বলেছেন, “আমরা কেবল ১১ জন আসামির মুক্তির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করছি, সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে নয়। আমরা সেই নীতিকে চ্যালেঞ্জ করছি, যার ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।”
ভারতের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিলকিস বানু ধর্ষণকাণ্ডে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১১ জন আসামীকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাট সরকার। ওই ১১ জনকে গোধরা উপ-সংশোধনাগারে রাখা হয়েছিল। টানা ১৫ বছর জেলে থাকার পর সুপ্রিম কোর্টে মুক্তির আবেদন জানায় এক আসামি।
সর্বোচ্চ আদালত সেই আবেদন পাঠিয়ে দিয়েছিল গুজরাট সরকারের কাছে। পরে রাজ্য সরকার আবেদনটি মঞ্জুর করে গত ১৫ অগাস্ট ১১ ধর্ষককে মুক্তি দেয়। জেল থেকে আসামিরা বাইরে এলে তাদের মিষ্টিমুখ করিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ নিয়ে তোলপাড় হয় গোটা ভারতে।
গুজরাট রাজ্য এবং কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা দলের (বিজেপি) সরকার তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসসহ এনসিপি, আরজেডি, সিপিএম এবং তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তুমুল সমালোচনা হয়েছে।
মানবাধিকারকর্মী এবং সাংবাদিকরাও এর তীব্র সমালোচনা করেছেন। গুজরাট সরকারের এ পদক্ষেপ সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকারের লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করেন তারা।
ধর্ষণ ও খুনের আসামিদের শাস্তি না কমানো গুজরাট রাজ্য সরকার এমনকী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত নীতি। এ ধরনের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মৃত্যু পর্যন্ত ভোগ করাটাই নিয়ম ভারতে। তাই ১১ আসামির মুক্তি এই বিধির লঙ্ঘন বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন।
গুজরাটের সেই দাঙ্গার সময় বিলকিস বানু ও তার পরিবার ভয়াবহতম অপরাধের শিকার হয়েছে। ২০০২ সালে গোধরায় যাত্রীবাহী ট্রেনে লাগা আগুনে ৬০ হিন্দু পূণ্যার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গুজরাট জুড়ে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল। সে সময় পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বিলকিস বানু।
কোলের সন্তান এবং পরিবারের মোট ১৫ সদস্যের সঙ্গে তখন গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছিলেন তিনি। মাঠের মাঝে একটি ঝোপের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা। সে সময় কাস্তে, তলোয়ার, লাঠি নিয়ে ২০-৩০ জনের একটি দল তাদের ওপর চড়াও হয়। দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয় বিলকিসকে। সেখানেই শেষ নয়, বিলকিসের পরিবারের সদস্যদেরও খুন করা হয়।
নরেন্দ্র মোদী সে সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। দাঙ্গা রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন। বিলকিস বানুর ঘটনায়ও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এক সমাজকর্মীর উদ্যোগে পরে বিষয়টি নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হলে শেষ পর্যন্ত ২০০৪ সালে ওই ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়।
আহমেদাবাদে শুরু হয় শুনানি। পরে আহমেদাবাদ থেকে মুম্বাইয়ে মামলাটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এরপর ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত ১১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।