পোল্যান্ডের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওলজি’ গবেষকদের এই গবেষণায় বলা হয়েছে, অবিবাহিতদের তুলনায় বিবাহিত পুরুষদের স্থূলতার ঝুঁকি ৩ দশমিক ২ গুণ বেশি।
Published : 13 Mar 2025, 09:17 PM
বিয়ে পুরুষদের স্থূলতার ঝুঁকি তিনগুণ বাড়ায়, তবে নারীদের ওপর কোনও প্রভাব ফেলে না- এমনই চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে এসেছে পোল্যান্ডের এক গবেষণায়।
অপুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, জিনগত বৈশিষ্ট্য, পরিবেশগত দূষণ ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায় সেটি সবারই জানা। কিন্তু এগুলো ছাড়া অন্যান্য আরও বিষয় ওজন বাড়ায় কিনা, তা খতিয়ে দেখতে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ’র ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওলজি’র গবেষকরা এই গবেষণা পরিচালনা করেন।
গবেষণায় গড়ে ৫০ বছর বয়সী ২,৪০৫ জন মানুষের চিকিৎসা বিষয়ক ও সাধারণ স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, মানসিক স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য বিষয়ের যোগসূত্র নির্ধারণে কাজে লাগানো হয় পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণকে।
স্পেনের মালাগায় এবছরের ‘ইউরোপিয়ান কংগ্রেস অন ওবেসিটি’-তে এ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, অবিবাহিতদের তুলনায় বিবাহিত পুরুষদের স্থূলতার ঝুঁকি ৩ দশমিক ২ গুণ বেশি। তবে বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে স্থূলতার ঝুঁকি বাড়েনি।
তাছাড়া, বিয়ে পুরুষদের অতিরিক্ত ওজনের ঝুঁকি ৬২ শতাংশ বাড়ায় এবং নারীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি মাত্র ৩৯ শতাংশ- এমনটিও দেখা গেছে গবেষণায়।
এর আগেও একই ধরনের গবেষণায় বিয়ের পর পুরুষদের ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা উঠে এসেছে। চীনে ২০২৪ সালে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, বিয়ের পর প্রথম পাঁচ বছরে পুরুষদের বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স) বেড়ে যায়, যা মূলত ক্যালরি গ্রহণ বৃদ্ধি ও ব্যায়াম কমানোর কারণে হয়েছিল।
সেই গবেষণায় দেখা যায়, বিয়ে হওয়ার সঙ্গে পুরুষদের অতিরিক্ত ওজনের ঝুঁকি ৫দশমিক ২ শতাংশ এবং স্থূলতার ঝুঁকি ২দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার যোগসূত্র আছে।
এর আগে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বাথ এর একই ধরনের আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, বিবাহিত পুরুষরা গড়ে ১ দশমিক ৪ কেজি বেশি ওজনের হয়ে থাকেন অবিবাহিতদের তুলনায়।
বিশ্বজুড়ে স্থূলতার হার ১৯৯০ সালের পর দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। বর্তমানে ২৫০ কোটিরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার শিকার। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক এবং এক-তৃতীয়াংশ শিশু অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় ভুগবে।
ওয়ারশ’র গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স বাড়ার সঙ্গেও ওজন বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। প্রতি বছর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদের অতিরিক্ত ওজনের ঝুঁকি ৩% এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৪% বৃদ্ধি পায়। একইভাবে, স্থূলতার ঝুঁকি পুরুষদের জন্য ৪% এবং নারীদের জন্য ৬% বাড়ে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, কিছু নির্দিষ্ট কারণ কেবল নারীদের স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন, বিষণ্নতায় আক্রান্ত নারীদের স্থূল হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেশি। স্বাস্থ্যবিষয়ক অজ্ঞতা নারীদের স্থূলতার ঝুঁকি ৪৩% বাড়ায়। এছাড়া, তুলনামূলক ছোট সম্প্রদায়ে বাস করা নারীদের মধ্যেও স্থূলতার হার বেশি। তবে এসব কারণ পুরুষদের ক্ষেত্রে তেমন প্রভাব ফেলে না।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
‘ওবেসিটি হেলথ অ্যালায়েন্স’ এর পরিচালক ক্যাথারিন জেনার বলেন, “অতিরিক্ত ওজন কেবল ব্যক্তিগত পছন্দের ফল নয়, বরং সামাজিক, মানসিক ও পরিবেশগত নানা কারণে এটি বাড়ে। বয়স বাড়ার সঙ্গে নারীদের স্থূলতার ঝুঁকি বাড়তে থাকে, আর পুরুষদের ক্ষেত্রে বিয়ে একে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “বিয়ের পর পুরুষদের ওজন বাড়ার কারণ হিসেবে খাবারের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং শারীরিক কার্যক্রম কমে যাওয়াকে দায়ী করা যেতে পারে। অন্যদিকে, নারীরা হয়তো সামাজিক চাপের কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণে বিষয়ে বেশি সচেতন থাকেন।”
ইউনিভার্সিটি অব বাথের অর্থনীতিবিদ জোয়ানা সিরদা বলেন, “ওয়ারশ’র গবেষণা সেটিই নিশ্চিত করেছে যা আমি ২০১৭ সালে খুঁজে পেয়েছিলাম। বিবাহিত পুরুষদের বিএমআই বেড়ে যায়, আর বিবাহবিচ্ছেদের আগে-পরে তা কমে। কারণ, অবিবাহিত পুরুষরা সঙ্গী পাওয়ার আশায় ওজন নিয়ন্ত্রণে বেশি সচেষ্ট হন, আর বিবাহিতরা সামজিক বাধ্যবাধকতার কারণে হয়ত নিয়মিত ও বেশি সমৃদ্ধ খাবার খান।”
ওদিকে, ‘মেনস হেলথ ফোরাম’-এর পরামর্শক জিম পোলার্ড বলেন, “গবেষণার এই ফল অতিরঞ্জিত করে দেখা ঠিক হবে না। বিবাহিত পুরুষদের বিএমআই বাড়ার পেছনে কর্মজীবনের চাপ, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা থাকতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “পুরুষদের মধ্যে হৃদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। আর ওজন বৃদ্ধি এ অবস্থার একটি মূল কারণ। তাই স্থূলতা ঠেকাতে আমাদের পুরুষ ও নারীদের জন্য আরও সুনির্দিষ্ট কৌশল নেওয়া জরুরি। সরকার পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথক স্বাস্থ্য কৌশল নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে—তাদের স্থূলতাকে সঠিক পথে নিয়ে আসা কতটা জরুরি, তা এ গবেষণা স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছে।”